শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ১১ রানের, হাতে শেষ উইকেট। শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসেন ফজলহক ফারুকি। ইনিংসের শুরুতে যিনি বাবর আজমকে দিয়েছিলেন প্রায় ভুলতে গোল্ডেন ডাকের স্বাদ। সব মিলিয়ে পরাজয়টাই চোখ রাঙাচ্ছিলো পাকিস্তানকে।
তবে পাকিস্তানের শেষ ব্যাটসম্যান নাসিম শাহ হয়তো মনে মনে ভেবেছিলেন অন্যরকম কিছুই। আফগান পেসারের প্রথম দুই বলই আছড়ে ফেললেন বাউন্ডারির বাইরে। অবিশ্বাস্য জয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে চলে গেলো পাকিস্তান, নাসিমের দুই ছয়ে নিজেরাই শুধু জিতলো না, ফাইনালের প্রতিপক্ষও ঠিক করে দিলো তাদের জন্য। ১১ তারিখের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাবর আজমের দল।
গতরাতে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নাসিম শাহের ওই দুই ছক্কা সাবেক কিংবদন্তী জাভেদ মিঁয়াদাদকে স্মরণ করিয়ে দিলো পাক অধিনায়ক বাবর আজমকে। ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে দুই ছক্কায় পাকিস্তানকে অবিস্মরণীয় জয় এনে দেয়া দশ নম্বরে নামা নাসিমকে দেখেই বড়ে মিয়াকে মনে পড়েছে বাবরের।
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাবর জানান, ‘নাসিম যেভাবে ম্যাচ শেষ করলো, এক কথায় অবিশ্বাস্য। তার ওই দু’ছক্কায় মিয়াঁদাদের কথা মনে পড়ছে।
১৯৮৬ সালের ১৮ এপ্রিল অস্ট্রাল-এশিয়া কাপের ফাইনালে এই শারজাহতেই মুখোমুখি হয়েছিলো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪৫ রান করে ভারত। জবাবে ২৪১ রানে নবম উইকেট হারায় পাকিস্তান। সেঞ্চুরি করে উইকেটে ছিলেন মিয়াঁদাদ। তাই জয়ের আশায় ছিলো পাকিস্তান।
তবে শেষ বলে ম্যাচ জিততে ৪ রান দরকার পড়ে পাকিস্তানের। স্ট্রাইক পান মিয়াঁদাদ। বোলার ছিলেন ভারতের স্পিনার চেতন শর্মা। ইয়র্কার দেয়ার পরিকল্পনা ছিলো চেতনের। হয়তো সেটি বুঝতে পেরেছিলেন মিয়াঁদাদ। উইকেটে ছেড়ে বলকে ফুলটস বানিয়ে ছক্কা হাঁকান তিনি। আর সেই ছক্কাতেই দারুন এক জয়ের স্বাদ পায় পাকিস্তান। আজও সেই ছক্কা ও জয় অবিস্মরনীয় পাকিস্তানিদের জন্য। তাই তো গতরাতে নাসিমের দুই ছক্কা মিয়াঁদাদকে স্মরণ করিয়ে দিল বাবরকে।
পাক অধিনায়কের ভাষায়, ‘ড্রেসিংরুমে খুব চাপের মধ্যে ছিলাম আমরা। আজও ভাল ও বড় কোন জুটি তৈরি করতে পারিনি আমরা। শেষ কয়েকটা ম্যাচে এই সমস্যা হয়েছে। তবে নাসিম ছিল অনবদ্য। যেভাবে ম্যাচ শেষ করল নাসিম, এক কথায় দুর্দান্ত। আমার মাথায় ছিল এর আগেও তাকে এরকম খেলতে দেখেছি। তার ওপর আমার বিশ্বাস ছিল। নাসিমের দুই ছক্কা দেখে শারজায় মিয়াঁদাদের সেই বিখ্যাত ছক্কার কথা মনে পড়ে গেল।’
এদিকে, দুই ছক্কায় দলকে জেতানো নাসিম বলেন, ‘বোলার হলেও, নেটে মন দিয়ে ব্যাটিং অনুশীলন করি। অনুশীলনে মাঝে মাঝে এমন ছক্কা মারি। তাই বিশ্বাস ছিল আমি ছক্কা মারতে পারবো। আমি জানতাম, আমাকে ইয়র্কার দেয়ার চেষ্টা করবে, ফিল্ডারও সেভাবে সেট করেছে। ঐ সময় নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা দরকার ছিল। সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে সফল হয়েছি। এই ম্যাচ আমার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’