বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে এক নতুন অধ্যায় রচিত হয়। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে টাইগাররা। আর সেই জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। সেদিন বিশ্বকে নতুন বাংলাদেশের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন তারা।
পরের বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। আগের চার তারকা সহ রিয়াদ একসঙ্গে মিলে পঞ্চপাণ্ডব হতে আরও কয়েকবছর লেগে যায়। একঝলক দেখা গিয়েছিল ২০১২ সালের এশিয়া কাপে। সেবার ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে অল্পের জন্য শিরোপা হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। সেই আক্ষেপ ঘুচতে শুরু করে ২০১৪ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজা পুনরায় অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর।
তার অধীনে একের পর এক ম্যাচ জিততে থাকে লাল-সবুজ বাহিনীরা। ওই বছর ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ, পরের বছর ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছানো। একই বছর ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলা। এর বাইরেও আরও অসংখ্য সফলতা রয়েছে। যেগুলোতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই পাঁচজন। যার কারণে একটা সময় তাদের নাম উপাধি হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডব।
তবে আজ পঞ্চপাণ্ডবের গল্প বলবো না, বলবো টিম বাংলাদেশের গল্প। মাশরাফি বিন মর্তুজা এখন আর জাতীয় দলে নেই। অবসর না নিলেও তিনি একপ্রকার সাবেক হয়ে গেছেন। দলে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খেলেন কেবল ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। বাকি থাকলো তিন পাণ্ডব। কিন্তু তারাও এখন আর এককভাবে ম্যাচ জেতাতে পারেন না। মাঝেমধ্যে সাকিব আল হাসান ম্যাচ জেতাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ঠিকই। কিন্তু সেটাও ঠিক এককভাবে হয় না। দলের অন্যান্য জুনিয়র সদস্যদেরও কমবেশি অবদান থাকে। তাই পঞ্চপাণ্ডব নামক গল্পগুলো থাকুক বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাফল্যের রোমাঞ্চকর অধ্যায়ে।
এখন দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখছেন তরুণ ক্রিকেটাররা। হোক সেটা ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি কিংবা টেস্ট। খুব বেশিদূর যাবো না। গত জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে দাপট দেখিয়ে হারিয়েছে বাংলাদেশ। যা দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয়, কারো মতে এটাই সবার সেরা। সেই ম্যাচে পাণ্ডবদের মধ্যে কেবল মুশফিকুর রহিম ছিলেন। কিন্তু সেটাও অনেকটা ছায়া হয়ে। কারণ, ম্যাচ জয়ে বড় অবদান রেখেছেন এবাদত হোসেন, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, ইয়াসির আলি রাব্বি, মেহেদী হাসান মিরাজ, লিটন দাস, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম। আর সেই দলটিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। এবার একটু খেয়াল করে দেখুন, এই ম্যাচে কারো একক অবদান ছিল না। দলগত পারফরম্যান্সেই সফলতা ধরা দিয়েছে।
এরপর ঘরের মাঠে আফগানিস্তান সিরিজের দিকে খেয়াল করুন। দলের সেরা পারফর্মার লিটন দাস, আফিফ হোসেন, মেহেদী মিরাজ, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান। সাকিব আল হাসান ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হলেও বোলিংয়ে অবদান রেখেছেন। কিন্তু ঠিক সাকিব সুলভ ছিল না। আর মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও তামিম ছিলেন কেবল নিজেদের ছায়া হয়ে।
এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আসুন। গতকাল প্রথম ওয়ানডে জিতে ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদেরই মাটিতে প্রথমবার হারানো। ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব, ব্যাট হাতে করেছেন সর্বোচ্চ ৭৭ রান। ইয়াসির ও লিটন অর্ধশত করেছেন। তামিম ফিফটি না পেলেও রানে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। শেষ দিকে আফিফ, রিয়াদ ও মিরাজের ক্যামিও ইনিংস। পরে বল হাতে প্রোটিয়া ব্যাটারদের ওপর ত্রাস ছড়িয়েছেন তাসকিন ও শরিফুল। মিরাজ প্রথমে মার খেলেও শেষ দিকে চার উইকেট নিয়ে তা পুষিয়ে দেন। এ যেন পারফেক্ট টিম ওয়ার্ক। পঞ্চপাণ্ডবের খোলস ছেড়ে বের হয়ে টিম বাংলাদেশ হয়ে ওঠা। আর তাতেই ধরা দিচ্ছে একের পর এক সফলতা।