রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। প্রতিটি বিশ্বকাপেই সাম্বা ছন্দের দেশটি সোনার ট্রফি জয়ের মিশনে আসে। কিন্তু ২০০২ সালের পর আর আকাক্সিক্ষত ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে পারেনি পেলের দেশ। ২০ বছর পর এবার সেই স্বপ্ন নিয়ে কাতার বিশ্বকাপে এসেছে সেলেসাওরা। কিন্তু মরুর বুকে শুরু থেকেই বেশ বেকায়দায় আছে জাগো বনিতোরা।
সার্বিয়ার সাথে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় পেলেও চোট পান দলের সেরা তারকা নেইমার ও ডিফেন্ডার ডানিলো। যে কারণে গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচে ছিলেন না এ দু’জন। আর তাই সার্বিয়াকে কোনোরকমে হারানো গেলেও শুক্রবার রাতে ক্যামেরুনের সঙ্গে পেরে উঠেনি ব্রাজিল। আফ্রিকার অদম্য সিংহদের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। যদিও এই ম্যাচে ব্রাজিল কোচ তিতে তার ‘দ্বিতীয়’ দল নামিয়েছিলেন।
এরপরও এই হার মেনে নিতে পারছেন না দলটির ভক্ত-সমর্থকরা। বিশেষ করে ফরোয়ার্ডদের গোল করতে না পারার ব্যর্থতা চোখে পড়ার মতো। প্রথম ম্যাচে ফরোয়ার্ড রিচার্লিসন জোড়া গোল করলেও সার্বিয়ার বিরুদ্ধে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ম্যাচে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কাসেমিরোর শেষ মুহূর্তের গোলে স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পেলের দেশ।
টানা দুই জয়ে শেষ ষোলোতে খেলা নিশ্চিত হওয়ায় ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে তিতে নামিয়ে দেন তার সাইড বেঞ্চ। কিন্তু ব্রাজিলের মতো দলের বেঞ্চও শক্তিশালী-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে সে প্রমাণ মেলেনি। বলের দখলে বাহাদুরি থাকলেও মার্টিনেল্লি, জেসুস, রডরিগো, অ্যান্টোনিরা গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু এই ম্যাচই নয়, প্রথম দুই ম্যাচেও দলটির ফরোয়ার্ডরা তেমন সফল হতে পারেননি।
গোল করতে না পারার এই ব্যর্থতা ব্রাজিলকে নকআউট পর্বে ভোগাতে পারে বলে মনে করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। এবারের বিশ্বকাপে ‘জি’ গ্রুপে তিন ম্যাচ খেলে মাত্র তিন গোল করেছে ব্রাজিল। এর মধ্যে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে দুটি ও সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি। ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে প্রাণান্ত চেষ্টা করেও জাল খুঁজে পাননি মার্টিনেল্লি, জেসুসরা।
গ্রুপ পর্বে এই তিন গোলের দুটিই করেছেন টটেনহ্যাম হটস্পারে খেলা ফরোয়ার্ড রিচার্লিসন। সুইসদের বিরুদ্ধে একমাত্র গোলটি ক্যাসেমিরোর। সবমিলিয়ে গ্রুপের পারফরমেন্সে ব্রাজিলের ফরোয়ার্ডদের গোল করতে না পারার সমস্যাটা প্রকটভাবে সামনে এসেছে। এর ফলে ১৯৭৮ বিশ্বকাপের পর এবারই গ্রপ পর্বে সবচেয়ে বাজে পারফর্ম করেছে ব্রাজিলের আক্রমণভাগ। সেবার আর্জেন্টিনায় হওয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে দুই গোল করেছিল ব্রাজিল।
বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিজেদের পারফরম্যান্সের ইতিহাসে গোলের হিসেবে এবার যুগ্মভাবে দ্বিতীয় বাজে পারফরমেন্স করেছে সেলেসাওরা। ১৯৭৪ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেও তিন গোল করেছিল সাম্বা ছন্দের দেশ। গোলের হিসেবে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ব্রাজিল সবচেয়ে ভালো করেছে ২০০২ বিশ্বকাপে। সেবার গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে ১১ গোল করেছিল বিখ্যাত হলুদ জার্সিধারীরা।
এবারের কাতার বিশ্বকাপে যে ১৬টি দল শেষ ষোলোয় উঠেছে সেসব দলের মধ্যে গ্রুপ পর্বে ব্রাজিল গোল করায় শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও পোল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে। দুটি করে গোল করেছে দেশ দুটি।
গোল করায় অস্ট্রেলিয়াও ব্রাজিলের সমান। গ্রুপ পর্বে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে স্পেন ও ইংল্যান্ড। নয়টি করে গোল করেছে তারা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছয়টি করে গোল করেছে পর্তুগাল ও ফ্রান্স। পাঁচটি করে গোল আর্জেন্টিনা, হল্যান্ড ও সেনেগালের। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ক্রোয়েশিয়া, মরক্কো ও সুইজারল্যান্ড চারটি করে গোল করেছে। বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ইতিহাসে ব্রাজিল এবারই প্রথমবারের মতো ম্যাচের প্রথমার্ধে কোনো গোল পায়নি। সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোল তিনটি এসেছে বিরতির পর।
অথচ এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের আক্রমণভাগেই সবচেয়ে বেশি নয় জন ফরোয়ার্ড। বিশ্বকাপে এর আগে শুধু একটি আসরে আক্রমণভাগে এবারের চেয়ে বেশি খেলোয়াড় নিয়ে স্কোয়াড সাজিয়েছিল তারা। সেটা ১৯৫০ বিশ্বকাপে। কাড়ি কাড়ি ফরোয়ার্ড নিয়েও গোলের জন্য এমন হা-পিত্যেশ ব্রাজিলের দুরবস্থা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে শঙ্কা করছেন অনেকে।
এদিকে চোট কাটিয়ে ব্রাজিল তাঁবুতে ফিরতে পারেন ডানিলো ও নেইমার। তবে নতুন করে আরেক ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল জেসুস পড়েছেন চোটে। আর্সেনাল তারকা নাকি আর খেলতে পারবেন না এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেরে ওঠার পথে ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছেন ডিফেন্ডার ডানিলো। অবশ্য শেষ ষোলোয় তারকা ফরোয়ার্ড নেইমারের খেলা নিয়ে এখনো শঙ্কা রয়েই গেছে। সময় বেশি না থাকলেও ব্রাজিল দলের চিকিৎসক রডরিগো লাসমার এখনই আশা ছাড়ছেন না। সোমবার রাতে শেষ ষোলোর ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এই ম্যাচে ডানিলোর খেলার বিষয়ে আশাবাদী লাসমার। নেইমারও দ্রুত অনুশীলনে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।