ব্যাট হাতে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শেষটা রাঙাতে পারেননি অ্যারন ফিঞ্চ। ফিরেছেন মাত্র ৫ রান করেই। তবে অজি অধিনায়কের বিদায়ী ওয়ানডেটা ঠিকই রাঙিয়ে দিয়েছেন সতীর্থরা। স্টিভেন স্মিথ তো সেঞ্চুরি করেই বিদায়ী উপহার দিয়েছে অধিনায়ককে।
অ্যারন ফিঞ্চের বিদায়ী ম্যাচ জয় দিয়ে স্মরণীয় করে রাখলেন সতীর্থরা। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে চমৎকার এক সেঞ্চুরি উপহার দিলেন স্টিভেন স্মিথ। কার্যকর ইনিংস খেললেন মার্নাস ল্যাবুশানে ও অ্যালেক্স ক্যারি। পরে বোলারদের নৈপুণ্যে তৃতীয় ওয়ানডেতেও নিউজিল্যান্ডকে ২৫ রানে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশই করে ছাড়ল ক্যাঙ্গারুরা। ম্যাচ ও সিরিজ জয় দিয়েই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ।
কেয়ানর্সে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে নিউজিল্যান্ড। নিয়মিত ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার বিশ্রামে থাকায় জশ ইংলিশকে নিয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন ফিঞ্চ। সাবধানী শুরু ছিলো ইংলিশ ও ফিঞ্চের। তবে পঞ্চম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। ১০ বলে ১৬ রান করা ইংলিশকে শিকার করেন বোল্ট।
ইনিংসের পরের ওভারে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে আঘাত হানেন পেসার টিম সাউদি। সাউদির বলে ৫ রানে বোল্ড হন ব্যাট হাতে শেষ ইনিংসে খেলতে নামা ফিঞ্চ। ১৬ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে দলকে লড়াইয়ে ফেরান স্মিথ ও মার্নাস ল্যাবুশানে। বেশ সাবধানে পথ চলেন তারা। এতে রানের গতিও কম ছিলো অস্ট্রেলিয়ার। দু’জনই তুলে নেন নিজেদের হাফ-সেঞ্চুরি।
৩৪তম ওভারে স্মিথ-ল্যাবুশানে জুটি ভাঙ্গেন লোকি ফার্গুসন। ২ চারে ৭৮ বলে ৫২ রান করে আউট হন ল্যাবুশানে। তৃতীয় উইকেটে ১৬৯ বলে ১১৮ রানের জুটি গড়ে অসিদের খেলায় ফেরান স্মিথ ও ল্যাবুশানে।
দলীয় ১৩৪ রানে ল্যাবুশানে ফিরলেও উইকেটে অবিচল ছিলেন স্মিথ। চতুর্থ উইকেটে অ্যালেক্স ক্যারির সাথে ৬৩ বলে ৬৯ রান গড়ার পথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩৬তম ম্যাচে ১২তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন স্মিথ। এজন্য তিনি বল খেলেন ১২৭টি।
সেঞ্চুরির পর ৪৫তম ওভারে দলীয় ২০৩ রানে থামেন স্মিথ। কিউই স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৩১ বল খেলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১০৫ রান করেন এই অজি ব্যাটার।
স্মিথের বিদায়ে উইকেটে গিয়ে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ১ ছক্কায় ৮ বলে ১৪ রান তুলে থামেন তিনি। তবে অস্ট্রেলিয়াকে শক্তপোক্ত স্কোর এনে দেন ক্যারি ও ক্যামেরুন গ্রিন। ষষ্ঠ উইকেটে মারমুখী ব্যাট চালিয়ে ২১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪০ রান তুলেন তারা। এতে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৬৭ রানের পুঁজি পায় অজিরা। ৪৩ বলে ৪২ রান করেন ক্যারি আর গ্রিন ১২ বলে করেন অপরাজিত ২৫ রান। কিউই পেসার বোল্ট ১০ ওভারে ২৫ রানে ২ উইকেট নেন।
২৬৮ রানের জবাবে শুরুটাব বেশ ভালোই ছিলো নিউজিল্যান্ডের। ৫২ বলে ৪৯ রানের সূচনা এনে দেন কিউই ওপেনার ফিন অ্যালেন ও ডেভন কনওয়ে। তবে ৮ রানের ব্যবধানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার। কনওয়েকে ২১ রানে ফেরান শন অ্যাবট ও অ্যালেনকে ২১ রানে নিজের শিকার বানান গ্রিন।
দলীয় ৫৭ রানের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ছোটখাটো একটা ধ্বস নামে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে। ১১২ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারায় কিউইরা। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ২৭ রানে রান আউট, টম লাথাম ১০ ও ড্যারিল মিচেল ফেরেন ১৬ রান করে।
২৮ ওভারের মধ্যে পাঁচ ব্যাটারকে হারিয়ে নিউজিল্যান্ড যখন চাপে, তখন ষষ্ঠ উইকেটে জুটি বাঁধেন জিমি নিশাম ও গ্লেন ফিলিপস। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে ৫৮ বলে ৬১ রানের জুটি গড়েন তারা। নিশামকে ব্যক্তিগত ৩৬ রানে থামিয়ে জুটি ভাঙ্গেন গ্রিন। নিশামের পর স্যান্টনারের সাথেও হাফ-সেঞ্চুরির জুটি গড়েন ফিলিপস। দু’জনের ৫১ বলে ৫১ রানের জুটিতে ম্যাচ জয়ের লড়াইয়ে ফিরে নিউজিল্যান্ড। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ২৭ বলে ৪৪ রানের প্রয়োজন পড়ে কিউইদের। উইকেটে সেট ব্যাটার ফিলিপস ও স্যান্টনার।
৪৬তম ওভারের চতুর্থ বলে ফিলিপসকে তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে দারুন এক ব্রেক-থ্রু এনে দেন মিচেল স্টার্ক। ২টি করে চার-ছক্কায় ৫৩ বলে ৪৭ রান করেন ফিলিপস। ফিলিপস ফেরার পরের ওভারে আউট হন স্যান্টনারও। ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ বলে ৩০ রান তুলে আ্যাবটের শিকার হন স্যান্টনার।
ফিলিপস ও স্যান্টনারের ফেরার পরই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ২ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ওভারে ৩১ রান দরকার পড়ে কিউইদের। শেষ ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে ফার্গুসন ও বোল্টকে শিকার করে নিউজিল্যান্ডকে ২৪২ রানে গুটিয়ে দেন স্টার্ক। ৬০ রানে ৩ উইকেট নেন স্টার্ক। সাথে গ্রিন ও অ্যাবট ২টি করে উইকেট শিকার করেন। ম্যাচ ও সিরিজ সেরার পুরষ্কার পান স্টিভেন স্মিথ।
সিরিজটি বিস্বকাপ সুপার লিগের অংশ হওয়াতে এই জয়ে ১৮ ম্যাচে ১২ জয়, ৬ হারে ১২০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে উঠে এলো অস্ট্রেলিয়া। এতে করে এক ধাপ নিচে নেমে গেল বাংলাদেশ। অসিদের সমান ম্যাচ-জয়-হার-পয়েন্ট হলেও রান রেটে পিছিয়ে তৃতীয়স্থানে রয়েছে টাইগাররা।
অন্যদিকে, ১৫ ম্যাচে ১১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে নেমে গেল নিউজিল্যান্ড। ১৮ ম্যাচে ১২৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বিস্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ২৬৭/৫ (স্মিথ ১০৫, লাবুশেন ৫২, কেয়ারি ৪২*, গ্রিন ২৫*; বোল্ট ১০-৪-২৫-২, সাউদি ১০-১-৫৭-১, ফার্গুসন ১০-০-৫৬-১)
নিউ জিল্যান্ড: ৪৯.৫ ওভারে ২৪২ (অ্যালেন ৩৫, ফিলিপস ৪৭, নিশাম ৩৬; স্টার্ক ৯.৫-০-৬০-৩, গ্রিন ৬-০-২৫-২, অ্যাবট ১০-৩-৩১-২)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ২৫ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচের ৩-০ তে জয়ী অস্ট্রেলিয়া