এক জনের বয়স ৩৫, আরেক জনের ৩০। বাড়িও ভিন্ন ভিন্ন দেশে। কিন্তু বয়সের পার্থক্য ও দেশ ভিন্নতার দেওয়াল পেরিয়ে তারা হয়ে উঠেছেন একে অন্যের অন্তরঙ্গ বন্ধু। যেন দুটি প্রাণের একই আত্মা। বলা হচ্ছে লিওনেল মেসি ও নেইমারের কথা। ফুটবলপ্রেমী মাত্রই জানেন, তাদের দুজনের বন্ধুত্বটা কতটা গভীর! দুজনেই একে অন্যের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেন! কিন্তু গত পরশু কাতার বিশ্বকাপে দুজনকে যে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে হলো, তা কি তারা ভাগভাগি করতে পারবেন? এমন সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা কি আসলে ভাগ করে নেওয়া যায়? যায় না। একজনের স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট-বেদনা-হতাশা আরেক জন কীভাবে ভাগ করে নেবেন?
পরশু একই দিনে কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন দুই বন্ধু। আলাদা আলাদা ম্যাচে। তবে মাঝে সময়ের ব্যবধান ছিল ঘণ্টা কয়েক। কিন্তু দিন শেষে দুই বন্ধুকে দাঁড়াতে হলো দুই প্রান্তে। এক বন্ধু দীর্ঘ ৪ বছর ধরে বুকে লালন-পালন করা স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় মাঠে দাঁড়িয়ে কাঁদলেন। নেইমার নিজে কাঁদলেন, ব্রাজিলবাসীকে কাঁদালেন, কাঁদালেন বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থকদের। উলটো মেরুতে দাঁড়িয়ে আরেক বন্ধু হাসলেন রাজ্য জয়ের হাসি। হাসিটা কঠিন বাঁধা পেরিয়ে স্বপ্ন সিঁড়ির পরের ধাপে পা রাখার স্বপ্নসুখের, যে হাসিটা বড় স্বচ্ছ-নির্মল।
নিয়তির কি খেলা দেখুন, দুই বন্ধুর সঙ্গে এই বিপরীতমুখী কাণ্ডটা ঘটল আবার টাইব্রেকারে। পরশু কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জিতে সেমিফাইনালে উঠে গেছে মেসির আর্জেন্টিনা। তাতে তাদের শিরোপা স্বপ্নের বেলুনটা আরো ফুলে উঠেছে। একই দিনে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেই টাইব্রেকারে হেরে চুরমার হয়েছে নেইমারের ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। কষ্ট-হতাশায় কান্নায় ভেঙে পড়া নেইমারের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। বন্ধুত্ব যত গাঢ়ই হোক, এমন দুঃখ ভাগাভাগি করা যায় না। তাছাড়া মেসির মনমন্দিরে বইছে সেমিতে ওঠার সুখবন্যা। এমন অবস্থায় অন্যের কষ্ট ভাগ করে নেওয়া অসম্ভব! তবে ফোন করে বন্ধু নেইমারকে ঠিকই সান্ত্বনা দিয়েছেন মেসি। কষ্ট চাপা দিয়ে নেইমারও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মেসিকে।