লর্ডস টেস্টের তৃতীয় দিন বৃষ্টির কারণে মাঠে গড়ায়নি একটি বলও। চতুর্থ দিনে ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর ররি বার্নসের সৌজন্যে ইংল্যান্ড যেতে পারে ২৭৫ রান পর্যন্ত। সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিলে চোয়াল বদ্ধ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। ৬ উইকেট শিকার করেছেন টিম সাউদি। দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ড দিন শেষ করেছে ২ উইকেটে ৬২ রান তুলে। প্রথম ইনিংসের ১০৩ রানের লিড মিলিয়ে তারা এগিয়ে ১৬৫ রানে।
ইনিংসের শুরু থেকে দলকে টেনে নিয়ে গিয়ে বার্নস আউট হয়েছেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। প্রায় আট ঘণ্টার লড়াইয়ে তিনি ২৯৭ বলে তিনি করেন ১৩২ রান সেঞ্চুরির আগে অবশ্য জীবন পেয়েছিলেন দুই দফায়। সেটি কাজে লাগিয়ে দারুণ ব্যাটিং করে গেছেন এই ব্যাটসম্যান। যদিও ইংল্যান্ডের চার ব্যাটসম্যান দেখেননি রানের মুখ। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৪৩ রানে ৬ উইকেট নেন সাউদি। একই সঙ্গে ছাড়িয়ে যান কিউই বোলার হিসেবে লর্ডসে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি। আগের সেরা ছিল ২০১৩ সালে ৫০ রানে ৬ উইকেট। মাঝে এক দিন বৃষ্টিতে খেলা না হলেও চতুর্থ দিন সকালে উইকেট খুব কঠিন ছিল না ব্যাটিংয়ের জন্য।
তবে কাইল জেমিসন, টিম সাউদিরা ঠিকই মুভমেন্ট, সুইং আদায় করে নিয়েছেন উইকেট থেকে। ইংল্যান্ডের দিন শুরু করে ২ উইকেটে ১১১ রান নিয়ে। দিনের প্রথম বলে জো রুটকে বিদায় করেন জেমিসন। ডিফেন্স করার চেষ্টায় ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে ক্যাচ দেন ইংলিশ অধিনায়ক। লড়াইয়ের চেষ্টা করেন অলি পোপ, কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি।
৩২ বলে ২২ রান করা তরুণ এই ব্যাটসম্যানকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন সাউদি। একই সঙ্গে দুর্দান্ত ওই স্পেলে ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডারে ভাঙন ধরান। নিজের পরের দুই ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন ড্যান লরেন্স ও অভিষিক্ত জেমস ব্রেসিকে। আলগা শটে স্লিপে ক্যাচ দেন লরেন্স। অফ স্টাম্পে পড়ে ভেতরে ঢোকা বলে ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড ব্রেসি। রানের খাতা খুলতে পারেননি দুজনের কেউ। ১৪০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন ফলোঅনের শঙ্কায় ইংলিশরা। এক প্রান্ত আগলে রাখা বার্নসের সঙ্গে এরপর প্রতিরোধ গড়েন অভিষিক্ত রবিনসন। ধীরে ধীরে জমে যায় দুজনের জুটি। দলের রান পেরিয়ে যায় ২০০ এর কোটা। এরপরই রবিনসনকেফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূরণ করেন সাউদি, ক্যারিয়ারে যা তার ১২তম।
ভাঙে ১৭১ বল তাদের ৬৩ রানের জুটি। বোলিংয়ে চার উইকেটের পর ব্যাট হাতে রবিনসনের অবদান ৪২। খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মার্ক উড। নিল ওয়্যাগনারকে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলে ফেরেন স্টুয়ার্ট ব্রডও। আউট হতে পারতেন বার্নসও। ৮৯ রানে ওয়্যাগনারের বাড়তি লাফানো বল তার ব্যাটের কানায় লেগে যায় স্লিপে।
দ্বিতীয় স্লিপে বল মুঠোয় জমাতে পারেননি সাউদি। এক হাতে চেষ্টা করে সফল হননি রস টেইলরও। এর আগে ৭৭ রানে একবার বার্নসকে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হারান বিজে ওয়াটলিংও। সুযোগগুলো দারুণভাবে কাজে লাগান ইংলিশ ওপেনার। ৯৮ থেকে ওয়্যাগনারের বলে ডাবল নিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি ২৬৭ বলে তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পর জেমিসনের এক ওভারে বার্নস মারেন তিনটি চার। শেষ পর্যন্ত তাকে ফিরিয়েই ইনিংসের ইতি টানেন সাউদি। ২৯৭ বলে ১৬ চার ও এক ছক্কায় ১৩২ রানের ইনিংসটি সাজান বার্নস। শেষ উইকেটে জেমস অ্যান্ডারসনের সঙ্গে যোগ করেন ৫২ রান। যেখানে অ্যান্ডারসনের অবদান ৮।
চা বিরতির পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে নিউজিল্যান্ড। নতুন বলে দারুণ বোলিংয়ে দুই ওপেনারকে বেঁধে রাখেন অ্যান্ডারসন ও ব্রড। ১৯তম ওভারে ৩৯ রানের জুটি ভাঙেন অবশ্য রবিনসন। অভিষেকে প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করা ডেভন কনওয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন ৬৪ বলে ২৩ রানে।কেন উইলিয়ামসন প্রথম ইনিংসের মতো ব্যর্থ দ্বিতীয় ইনিংসেও।
রবিনসনের বলে আম্পায়ার তাকে এলবিডব্লিউ দিলে রিভিউ নিয়ে বেচে যান বল ব্যাটে লাগায়। পরের বলে আর রক্ষা হয়নি। এবার এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে ইংল্যান্ড রিভিউ নিয়ে ফেরায় তাকে। ম্যাচে যা রবিনসনের ষষ্ঠ উইকেট। নাইটওয়াচম্যান ওয়্যাগনারকে নিয়ে বাকি সময় কাটিয়ে দেওয়া ল্যাথাম দিন শেষ করেন ৩০ রানে।