পদত্যাগ করা পর্তুগিজ কোচ ফার্নান্দো সান্তোস এখন কাতার বিশ্বকাপের শহরে হাসির খোরাক। অধিনায়ক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে জেদাজেদি করে দেশের সর্বনাশ করা কোচ সান্তোস জাতীয় দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। আর এ খবরটা যখন কাতারের দোহায় এসেছে সেটা শুনে সাংবাদিকদের মধ্যে হাসির খোরাক জুগিয়েছে। সাংবাদিকদের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল কাতারে সমুদ্রের কাছে। সেখানেই আড্ডার ছলে নানা সমালোচনাও করছিলেন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সাংবাদিকরা। পর্তুগিজ সাংবাদিকরা আরো কড়া ভাষায় কথা বলেন, ‘একটা দেশকে নিয়ে জুয়া খেলেছেন পর্তুগিজ কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। তার একগুঁয়েমির কারণে বিশ্বকাপের মঞ্চ হতে বিদায় নিতে হয়েছে পর্তুগালকে। এক সাংবাদিক বললেন, ‘আমরা মিশন নিয়ে এসেছিলাম। এখন এখানে দর্শকের মতো আছি। এ জন্য সান্তোস দায়ী। বুড়ো লোকটা আমাদের দেশ নিয়ে জুয়া খেলেছে।
এই কোচের অধীনেই তো পর্তুগাল তার ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাফল্য ঘরে তুলেছিল। সেই কোচের হাতেই পর্তুগালের ফুটবল ভবিষ্যৎ তুলে দেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ ইউরো পর্যন্ত সান্তোসকে চুক্তি করেছিল পর্তুগাল ফেডারেশন। কিন্তু এবার মাঝপথেই বিদায় নিতে হলো এ কোচকে। পর্তুগাল ফেডারেশন বলছে, সান্তোস নিজে পদত্যাগ করেছেন। আর দোহায় অবস্থানরত পর্তুগিজ সাংবাদিকরা বলছেন, পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এতো সিনিয়র একজন কোচ, সাফল্য দিয়েছে। তাকে নিয়ে পর্তুগাল ফুটবলের অনেক পরিকল্পনা ছিল কিন্তু কাতার বিশ্বকাপ শেষ না হতে কোচ ঘরে ফিরেই বিদায় নিলেন।
পর্তুগিজ সাংবাদিকদের মতে এই কোচ তাদের দেশ নিয়ে জুয়া খেলেছেন। যার ঘরে রোনালদোর মতো ফুটবল রাজা থাকে তাকে বাদ দিয়ে ফুটবল যুদ্ধে নামার কথা চিন্তা করাটা শত্রু ছাড়া কারোর পক্ষেই সম্ভব না। একটা সামান্য বিষয় কেন্দ্র করে রোনালদোর সঙ্গে মনের যুদ্ধে মেতেছিলেন কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। সেই যুদ্ধে জিতলেও দেশটাকে ডুবিয়েছেন তিনি সেটা বুঝতে পারেননি।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে হারার পর রোনালদোকে মাঠ থেকে তুলে আনেন কোচ সান্তোস। কোচের এই সিদ্ধান্তে রাগ করে ভালো আচরণ করেননি রোনালদো। সেটা কোচের মনে আঘাত লেগেছিল। অন্যরাও সেটি দেখেছেন সিআরসেভেন কি করেছেন। অন্যান্য ফুটবলার এবং তার কোচিং স্টাফের চোখে লেগেছিল। সেটাই কোচ সান্তোসের ইগোতে আঘাত করে। পরের ম্যাচেই সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে আর নামাননি রোনালদোকে বসিয়ে রাখেন বেঞ্চে। রোনালদোকে ছাড়াই একাদশ সাজিয়ে নকআউট পর্বে একটি রিস্ক নিয়ে নেন। রোনালদোর বদলে জুনিয়র স্ট্রাইকার গনজালো রামোসকে মাঠে নামান। সেই রামোস মাঠে নেমেই হ্যাটট্রিক করেন। কাতার বিশ্বকাপে ফুটবলের প্রথম হ্যাটট্রিক ছিল এটি। ফুটবল দুনিয়া সাড়া পড়ে গেল। এক ম্যাচে একাদশে নেমেই গনজালো রামোস হয়ে গেলেন ইতিহাস। সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলে হারালো পর্তুগাল। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই বেঞ্চ থেকে তুলে এনে রোনালদোকে নামালেন কোচ সান্তোস। খেলা শেষ, জিতল পর্তুগাল, আর হাততালি পেয়েছিলেন রোনালদো।
সবাই দেখলেন কোচ কি করতে পারেন আর কি পারেন না। দেশ নিয়ে প্রথম জুয়াতেই জিতে গেলেন। আর যারা ফুটবল পন্ডিত রয়েছেন তারা কিন্তু অপেক্ষায় রইলেন। আসল পরীক্ষা রয়ে গেছে। পর্তুগীজরা ধরে নিয়েছিলেন কোচ তার রাগ কমাবেন। কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর বিপক্ষে নামবেন রোনালদো। কিন্তু সেই ম্যাচেও রোনালদোকে বেঞ্চে বসিয়ে দিলেন মাথা গরম করা কোচ। কেন এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন , মরক্কোর কাছে হারের পর সান্তোস বলেছেন সেটা তার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না। নিজের অবস্থানে থাকা কোচ দেশে ফিরে পদত্যাগ করলেন। রোনালদোর মতো অস্ত্র যার ঘরে আছে সে কিভাবে তাকে বসিয়ে ফুটবল যুদ্ধে নামে। একাদশে রোনালদো থাকলেও জিততে পারত কিনা সেটা অন্য হিসাব। অন্তত আর যাই হোক মরক্কোর ফুটবলাররা এতো ফ্রি হয়ে খেলতে পারত না। একটা মানসিক চাপ থাকতই। রোনালদো একাদশে নেই। সেখানেই মরক্কো এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিলো। রোনালদোকে মাঠে নামানোর আগেই গোল হজম করে পিছিয়ে ছিল পর্তুগাল। রোনালদো নেমেছেন তখন আর কিছু করার ছিল না। সিআরসেভেন একটা শট নিয়েছিলেন, যেটা গোলকিপারের হাতে জমা পড়েছিল। ফার্নান্দোর খামখেয়ালিতে দেশ ডুবল। ক্ষতিটা কার বেশি হলো। প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন পর্তুগীজরা।