Image default
খেলা

মাটিতে খেলছেন বলেই উড়ছেন লিটন

ততক্ষণে লিটন দাসের শতক হয়ে গেছে। ব্যাট উঁচিয়ে উদ্‌যাপনও শেষ। পরের বল খেলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। তার আগে বোলারের দিকে তাকিয়ে একবার কাঁধ ঝাঁকুনি দিয়ে নিলেন।

হাত খুলে খেলে দ্রুত কিছু রান করবেন—লিটনের শরীরী ভাষার অনুবাদ বোঝা যাচ্ছিল। ঘটলও ঠিক তাই। তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পর লিটন হয়ে উঠলেন ‘ডেথ ওভার হিটার’। তাতে শতকটি আরও লম্বা হয়ে শেষ পর্যন্ত থেমেছে ১৩৬ রানে। কিন্তু শতকের আগে লিটন ছিলেন ভিন্ন চেহারায়—আগ্রাসী মানসিকতার চেয়ে ধ্যানমগ্ন ঋষির ছাপই ছিল বেশি। এ যেন এক লিটনের দুই রূপ!

লিটনের শেষের আগ্রাসী রূপটা হয়তো ম্যাচ শেষে হাইলাইটস প্যাকেজের সৌন্দর্য বাড়াবে। কিন্তু ইনিংসের শুরুর লড়াইটা না জিতলে শেষে এসে ঝড় তুলতে পারতেন না। লিটন নিজেকে নতুন করে গড়েছেন বলেই সফল হচ্ছেন।

গতকালের ইনিংসের কথাই ধরুন। স্নায়ুকে বশে রেখে ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে ব্যাটিংয়ের আদর্শ উদাহরণ লিটনের প্রথম এক শ রান।

৮২ রান করেছেন বাতাসে উড়িয়ে কোনো শট না খেলে। ততক্ষণে লিটনের ব্যাট থেকে ১১টি বাউন্ডারির প্রতিটি জমা পড়েছে জহুর আহমেদ চৌধুরীর আউটফিল্ড ঘেঁষে। আশির ঘরে পৌঁছে লিটনের ১২তম বাউন্ডারিটি এসেছে বাতাসে উড়িয়ে মারা শট থেকে।

হিসাব করেই মেরেছিলেন তিনি। ফাইন লেগ আর লং অন ছাড়া লেগ সাইডে কোনো ফিল্ডারই ছিলেন না। তাই বিশাল ফাঁকা জায়গা পেয়েই উড়িয়ে পুল শট খেলেছেন।

উড়িয়ে মারার পরের চেষ্টাটা অবশ্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ৮৭ রানের সময় মুজিবের বলে লিটন তাঁর ইনিংসের দ্বিতীয় উড়িয়ে মারা শট খেলেন। কাভারে হাশমততুল্লাহ ক্যাচ ছাড়ায় বড় বাঁচা বেঁচে যান লিটন। ১৩৬ রানের ইনিংসে সেটাই ছিল লিটনের শট নির্বাচনে একমাত্র ভুল।

লিটনের উড়িয়ে মারা পরের শটটি তাঁকে পৌঁছে দেয় তিন অঙ্কে। রশিদের করা সেই ঝুলিয়ে দেওয়া বলটি লিটন চাইলে মাঠের যেকোনো জায়গায়ই মারতে পারতেন। তিনি বেছে নেন এক্সট্রা কাভার অঞ্চলের ফাঁকা জায়গাটি।

এরপর তো শটের ঝুলি খুলে বসেন লিটন। আউট হওয়ার আগে বল আর রানের সঙ্গে পার্থক্যটা কমিয়েছেন দুটি ছক্কা আর উদ্ভাবনী শটে দুটি চার মেরে। লিটন যখন থেমেছেন, তখন তাঁর স্ট্রাইক রেট ১০৭.৯৩।

লিটনের শতকে এই ধাঁচের ব্যাটিং দুই বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে। বল মাটিতে রেখেই লিটন সফল হচ্ছেন। স্ট্রাইক রেটও কমেনি। ঝুঁকি কম থাকায় লিটনের ইনিংসও হয় দীর্ঘ।

৪৯ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ৮ বার ৫০-এর ঘর ছুঁয়ে এর ৫ বারই তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছেন লিটন। এর মধ্যে চারটি শতকই এসেছে গত দুই বছরের মধ্যে। চারটি ইনিংসেই লিটন প্রথম এক শ রান করেছেন মাটিতে বল রেখে। শতকের পর সেই ভিতে দাঁড়িয়ে চার–ছক্কা মেরেছেন।

কাল ম্যাচ শেষে ওয়ানডে ব্যাটিংয়ে নিজের প্রক্রিয়ার কথা জানাতে গিয়ে এ কথাই বলছিলেন লিটন, ‘আমার প্রথম লক্ষ্য থাকে ৩৫ ওভার ব্যাটিং করা। আমি চেষ্টা করি, আমার যে সামর্থ্য আছে, বিশ্বের যেকোনো দলের বিপক্ষে ৩৫ ওভার খেলতে পারলে অন্তত ৮০ রান করতে পারব। যখন আমি আর মুশি ভাই যখন খেলছিলাম, জুটিটা ভালো হচ্ছিল। যখন ৪০ ওভার পার করলাম, তখন আমরা চিন্তা করলাম যত রানটা এগিয়ে নেওয়া যায়।’

গত দুই বছরে প্রতি ওয়ানডে ম্যাচেই লিটন একই ছন্দে খেলেছেন, তা নয়। মাঝেমধ্যে পরিকল্পনা থেকে সরেও গিয়েছেন, ব্যর্থ হয়েছেন। তড়িঘড়ি করে চার-ছক্কার নেশায় আউট হয়েছেন ক্যাচ তুলে।

যেমন ২০২০ সাল থেকে ১৬ ইনিংসের মধ্যে ১১ বারই লিটন আউট হন ক্যাচ তুলে। এর মধ্যে টাইমিংয়ের গড়বড়ে পুল শট, সুইপ শটের সংখ্যাই বেশি। আর বেশির ভাগ ইনিংসেই লিটন আউট হন ২০-৩০ রানের ঘরে।

গত বছরের জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সিরিজের কথাই ধরুন। হারারেতে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে দারুণ শতকের পর পুল শটের টাইমিং গড়বড় করে আউট হন লিটন। তখন অবশ্য দ্রুত রানের পেছনে ছুটছিলেন। পরের দুই ম্যাচেও লিটন থিতু হন, কিন্তু আউট হন লেগ সাইডে ক্যাচ তুলে।

কাল লিটন নিজেই সেই ব্যর্থতার কথা মনে করে বলছিলেন, ‘জিনিসটা হচ্ছে আপনি কীভাবে পরিকল্পনা করছেন। আমি চাইলে হয়তো শুরুর দিকে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে মেরে দিতে পারতাম। তাতে কী হতো? চার বা ছয়। কিন্তু তাতে আউট হওয়ার ঝুঁকিও থাকত।’

লিটনের গতকালের ইনিংসটি যেন সে উপলব্ধিরই প্রতিফলন। নিজের ভুল ধরতে পেরে তিনি ফিরেছেন শতক হাঁকানোর সঠিক প্রক্রিয়ায়। নিজের উইকেটের মূল্য দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে লিটন বলছিলেন, ‘এই জিনিসটা নিজে থেকে পরিবর্তন করা প্রত্যেক ব্যাটারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি চিন্তা করেছি যে আমার একটা উইকেটের মূল্য আছে। নিজের উইকেটের মূল্যটা দিচ্ছি। আশা করি, সামনেও দিতে পারব।’

ক্রিকেটীয় কৌশলের সঙ্গে মানসিকতার যোগসূত্রটাও গুরুত্বপূর্ণ। মানসিকভাবেও লিটন এখন খুবই সুখী। ক্রিকেটের বাইরেও যে আরেকটি জীবন আছে, সেটিও তিনি অনুধাবন করতে পেরেছেন। ব্যক্তিগত জীবনের স্থিতিশীলতা যেন ব্যাটসম্যান লিটনকে আরও ব্যক্তিত্বপূর্ণ করে তুলছে।

লিটনের গতকালের এ কথাটাই যে তাঁর আভাসই দেয়, ‘সাফল্য ধরে রাখতে অনুশীলনে যে প্রক্রিয়া থাকে, সেটা অনুকরণ করি। ভালো করলেও একই প্রক্রিয়া,

Related posts

ড্যান হার্লি, ইউকন ‘স্লোপি’ মার্চ ম্যাডনেস সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দ্বারা ইন্ধন যোগান৷

News Desk

লুইস গেলের ক্যারিয়ারের সেরা রাতটি ইয়াঙ্কিসকে ওরিওলসের বিরুদ্ধে জয়ের দিকে নিয়ে যায়

News Desk

কোহলিকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন বাবর: ইমরান খান

News Desk

Leave a Comment