সর্বকালের অন্যতম সেরা বক্সার তিনি, তবে মাইক টাইসনের আচরণ সব সময়ই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তাই বলে নিজের মায়ের মৃত্যু নিয়েও এভাবে বলতে পারেন টাইসন, এমনটা কে ভেবেছিল! যুক্তরাষ্ট্রের ৫৫ বছর বয়সী সাবেক বক্সারের চোখে, মায়ের মৃত্যুতে তাঁর জন্য বরং ভালোই হয়েছে! জীবনের সবচেয়ে বড় উপকারই তাতে হয়েছে বলে মনে করেন টাইসন।
কথাটা শুনতে যে কারও কানে বাধবে, তবে সেটির ব্যাখ্যা কিছুটা টাইসনের মনোভাব বোঝাতে পারে। বক্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে কাউকে যতটা কঠোর হতে হয়, মা বেঁচে থাকলে টাইসন ততটা কঠিনহৃদয় হতে পারতেন না বলেই মনে করেন। ‘দ্য ব্যাডেস্ট ম্যান অন দ্য প্ল্যানেট’ টাইসন কতটা কঠোর ছিলেন, সেটি তো তাঁর উপাধিই বলে দেয়!
‘সত্যি বলতে কী, আমার মা যে মারা গেছেন, তাতে আমার জীবনে সবচেয়ে বড় উপকারটাই হয়েছে’—শেশে ক্লাবের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে টাইসনের কথাগুলো শুনে তো সবাই অবাক! এমনটা কেন ভাবছেন, সেটির ব্যাখ্যায় টাইসন বললেন, ‘কারণ আমার মা বেঁচে থাকলে আমাকে বাচ্চাই থাকতে হতো! আমি রাস্তায় নেমে মারামারি করব, এমনটা হতেই দিতেন না! সে ক্ষেত্রে আমারও নিজেকে বাঁচাতে মারামারি করা শেখা হতো না।’
টাইসনের মা লর্না টাইসন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮২ সালে মারা যান। এর তিন বছর পরই ‘আয়রন মাইক’ টাইসনের বক্সিং ক্যারিয়ার শুরু।
বক্সিংয়ে আসার আগে টাইসনের শৈশব মোটেও আনন্দদায়ক ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের যে অঞ্চলে টাইসনের বেড়ে ওঠা, সেই ব্রাউনসভিলের পরিবেশ শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য মোটেও আদর্শ ছিল না। মারামারি, সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া…কী ছিল না! থানায়ও যেতে হয়েছে অনেকবার। মা- তাঁকে ছাড়িয়ে এনেছেন।
সে সময়ের কথা মনে করিয়ে টাইসন অবশ্য মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতাই জানিয়েছেন, ‘আমার মা সত্যিই আমার জন্য অনেক করেছেন। সব সময় পুলিশ স্টেশনে গিয়ে আমাকে ছাড়িয়ে আনতেন। পুলিশের সামনেই অবশ্য মেরে পিঠের ছাল তুলে ফেলতেন।’
টাইসনের মা যখন মারা যান, টাইসনের বয়স তখনো মাত্র ১৬। যুক্তরাষ্ট্রের বক্সিং ম্যানেজার ও কোচ কাস দামাতোর হাতে এরপর টাইসনের বক্সার হয়ে ওঠা।
তবে মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান জানালেও মাকে নিয়ে অদ্ভুত কথা বলা টাইসনের জন্য এবারই প্রথম নয়। এর আগে একবার মায়ের ব্যাপারে টাইসন বলেছিলেন, তাঁর মা অনেক আগ্রাসী ছিলেন। হটবক্সিংয়ের এক অনুষ্ঠানে তখন টাইসন বলেছিলেন, ‘তিনি ভালোবাসতেন অনেক, তবে অনেক আগ্রাসীও ছিলেন। কখনো নিজের জীবন গুছিয়ে নিতে পারেননি, কখনো সেভাবে কাজও করতেন না। গায়ে হাত তুলতে কখনো দুবার ভাবতেন না, হাতের কাছে যা পেতেন তা-ই দিয়ে মারতেন। মদপান করতেন অনেক। অনেক ছেলেবন্ধুও ছিল তাঁর।’
মায়ের ছেলেবন্ধুদের কাছ থেকে ফায়দা তুলে নিয়েছেন টাইসনও, তবে অবৈধ পথে, ‘মাঝেমধ্যে তাঁর ছেলেবন্ধুরা বাসায় আসত, একসঙ্গে মদ্যপান করতেন তাঁরা। আমি তাঁদের পকেট থেকে টাকা চুরি করে নিতাম।’