ফুরফুরে মেজাজে বিশ্বকাপে খেলতে এসেছিল আর্জেন্টিনা। টানা ৩৬টি ম্যাচ অপরাজিত থাকাটা চাট্টিখানি কথা নয়! কিন্তু শুরুর ম্যাচে বড় অঘটনের জন্ম হলো। অবিশ্বাস্যভাবে উড়ন্ত আলবিসেলেস্তেদের মাটিতে নামালো সৌদি আরব! বিশ্বকাপ স্বপ্নে বড় ধাক্কা লিওনেল স্কালোনির দলের। প্রথম ম্যাচ হেরেই সব হিসেব-নিকেশ উল্টে গেছে। এখন নক আউট পর্বে যেতে হলে পরের ম্যাচগুলোতে জয় পেতে হবে। গ্রুপে আজ দ্বিতীয় ম্যাচে আরেক জায়ান্ট মেক্সিকোর বিপক্ষে জিততে না পারলে মরুর বুকে যে আর ফুল ফোটানোর সুযোগ থাকবে না লিওনেল মেসিদের। আর তা করতে হলে দলের বড় অনুপ্রেরণা-আদর্শ মেসিকেই বড় দায়িত্ব নিতে হবে। যে করেই হোক জ্বলে উঠতে হবে আপন মহিমায়!
সাতবারের ব্যালনডির জয়ী মেসি প্রথম ম্যাচে মোটেও সমর্থকদের মন জয় করতে পারেননি। ম্যাচঘড়ির ১০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল পেয়েছেন ঠিকই। তবে পুরো ম্যাচে স্বভাবসুলভ সেই ছন্দময় ফুটবলের কারিশমা দেখা যায়নি। মনে হচ্ছিল অনেকটা ‘ডে-অফ’ কাটাচ্ছেন। আর এই ছাপ পড়েছিল অন্যদের মাঝেও। সৌদি ঝড়ে এলোমেলো হতে সময় লাগেনি। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী দলের কাছে হেরে এখন খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
এমন নীল বেদনা মেসি ও তার সঙ্গীরা কতটুকু অনুভব করছেন তা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে হারের পর থেকে যে দিনগুলো মোটেও ভালো কাটছে না তা অকপটে বলে দেওয়া যায়। ‘মরুর ঝড়ের তাণ্ডবে’ বিধস্ত। হারের পর দিনকয়েক কেটেছে। একটু ধাতস্থ হয়ে আজ সব বেদনা ভুলে আগের ম্যাচের হারে প্রলেপ দিতে হলে জয় ছাড়া বিকল্প নেই।
স্কালোনির দলের বড় ভরসার নাম যেহেতু লিওনেল মেসি, তাই তাকেই মাঠের খেলায় নৈপুণ্যে উদ্ভাসিত হতে হবে। প্লে-মেকারের ভূমিকায় তিনি ঠিকঠাক নিজের দায়িত্বটুকু পালন করতে পারলে হয়তো কোটি সমর্থকদের মনও জয় করতে পারবে আর্জেন্টিনা। তাই ৩৫ বছর বয়সী তারকাকে নিতে হবে বড় দায়িত্ব। যেন দলের সবার মুখে হাসি ফিরে আসে।
হয়তো এই ম্যাচকে সামনে রেখে আরও মনোযোগী মেসিরা। এ জন্য কাতার বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে শুক্রবার আর্জেন্টিনার অনুশীলনে একটু ভাব-গম্ভীর অবস্থায় দেখা গেছে সবাইকে। পারেদেস-রদ্রিগোদের সঙ্গে শুরু থেকে অনুশীলনে মেসি। কোচের সঙ্গেও কথা বলতে দেখা গেছে। হয়তো মেক্সিকো ম্যাচের ছক কষতে কোচের সঙ্গে আলোচনা জুড়ে দিয়েছিলেন। কোনও সময় চুপচাপ, আবার কোনও সময় সতীর্থদের সঙ্গে খুনসুটি করতেও দেখা গেছে।
মেক্সিকো বধের জন্য সবাই বলতে গেলে তৈরি। যদিও মেক্সিকো কোনও অংশে জায়গা ছাড়ার মতো দল নয়। তাদের গোলকিপার ওচোয়া তো হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন।
ডু ও ডাই ম্যাচে প্রতিপক্ষ যতই হুমকি দিক না কেন, আর্জেন্টিনাকে আজ জিততেই হবে। লুসাইল স্টেডিয়ামে হারের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন স্কালোনির শিষ্যরা। এই মাঠেই আবার নেইমার-রিচার্লিসনরা দারুণ পারফর্ম্যান্স করেছেন। এবার মেসিদের সামনে কঠিন পরীক্ষা। তাদের প্রমাণ করতে হবে এই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটি ছিল ‘বড় অঘটন’। আর তা করতে হলে আবারও বলতে হচ্ছে, মেসিকে জ্বলে উঠতে হবে! ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ মিশনে এসে যেন ‘লজ্জার বিদায়’ না হয়। সেটা মগজে গেঁথে নিয়েই নিশ্চয়ই লুসাইলে নতুন ভোরের সন্ধানে থাকার অপেক্ষায় আকাশি-সাদা জার্সিধারীরা।