নতুন মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনাকে ৩-১ গোলে পরাজিত করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এই জয়ের ফলে লা লিগার পয়েন্ট টেবিলে চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ।
রবিবার (১৬ অক্টোবর) সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচের ১২ মিনিটে স্বাগতিক রিয়ালকে এগিয়ে দেন ফ্রেঞ্চম্যান করিম বেনজেমা। ভিনিসিয়াস জুনিয়রের শট মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগান রুখে দিলে ফিরতি শটে বল জালে জড়ান বেনজেমা। বিরতির আগে ফেডে ভালভার্দের করা গোলে রিয়ালের ব্যবধান দ্বিগুন হয়। ম্যাচের শেষ ভাগে আনসু ফাতির সহায়তায় ফেরান তোরেসের গোলে বার্সেলোনা শিবিরে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিজের আদায় করা পেনাল্টি থেকে রডরিগো গোল করে কার্লো আনচেলত্তির দলের জয় নিশ্চিত করেন। একইসাথে বার্সেলোনাকে মৌসুমে প্রথম পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ উপহার দেয় রিয়াল মাদ্রিদ।
লিগে এই জয়ের মাধ্যমে অপরাজিত থাকা মাদ্রিদ কাতালান জায়ান্টদের সাত ম্যাচের জয়ের ধারা থামিয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের সন্নিকটে রয়েছে বার্সেলোনা। লিগেও মাদ্রিদের বিপক্ষে এই পরাজয়ে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে চলে গেল জাভি বাহিনী। গ্রীষ্মকালীন দলবদলে শুধুমাত্র রিয়ালের সাথে পাল্লা দিতেই বেশ বড় ভূমিকা রেখেছিল বার্সা। এখন বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের থেকে তিন পয়েন্ট পিছিয়ে ৯ ম্যাচ পর টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ক্লাসিকোর আগে বার্সেলোনা ৮ ম্যাচে মাত্র এক গোল হজম করেছিল। কিন্তু কাল প্রথমার্ধেই সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। এর মাধ্যমে লিগে একমাত্র দল হিসেবে এখনো অপরাজিত রয়েছে মাদ্রিদ।
মাদ্রিদ মিডফিল্ডার লুকা মড্রিচ বলেন, ‘আমরা জানতাম ম্যাচে একটা সময় এমন পরিস্থিতি হবে যখন আমরা ছন্দে থাকতে পারবোনা। কারণ তারা বলের নিয়ন্ত্রণ বেশ ভালই আদায় করে নিচ্ছিল। আর সে কারণেই আমাদের সবাইকে নিজেদের সামর্থ্যের বাইরে গিয়েও বেশী কিছু দিতে হয়েছে। আমরা তাদের ভালই প্রতিরোধ করেছি। আক্রমণভাগে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছি। তারই ধারাবাহিকতায় তিন গোল এসেছে। এই পারফরমেন্সে আমি দারুণ খুশী।’
সপ্তাহের মাঝামাঝিতে ইন্টার মিলানের সাথে ড্র করে কোনমতে নিজেদের রক্ষা করলেও এখনো ইউরোপিয়ান আসর থেকে বিদায় শঙ্কা কাটেনি বার্সেলোনার। কাল মূল একাদশে জেরার্ড পিকের জায়গায় আবারো দলে ফিরেছিলেন জুলেস কুন্ডে। গত মৌসুমে বার্নাব্যুতে বার্সেলোনার সেরা মুহূর্তটি এসেছিল। ঐ ম্যাচে জাভির দল বিস্ময়করভাবে ৪-০ গোলে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু কালকের ম্যাচে সম্ভবত জাভির অধীনে সবচেয়ে বাজে পারফরমেন্স করেছে পুরো দল।
জাভি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার কাছে যা মনে হচ্ছে কোন কিছুই আমাদের পক্ষে নেই। কোন কিছু নিয়েই আমি খুশী হতে পারছি না। বার্নাব্যুতে ৩-১ গোলের পরাজয় সত্যিই বাজে এক অনুভূতি।’
১২ মিনিটে বাম দিক থেকে ভিনিসিয়াসের কারণেই প্রথম গোলটি আসে। মধ্যমাঠে টনি ক্রুস সার্জিও বাসকুয়েটসকে কাটিয়ে উইংয়ে ভিনিসিয়াসের দিকে বল বাড়িয়ে দেন। ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গারের শট টার স্টেগান রুখে দেন। কিন্তু ফিরতি বলে বেনজেমা কোন ভুল করেননি। ফরাসি এই স্ট্রাইকার গত পাঁচ ম্যাচে কোন গোল পাননি। কিন্তু বড় ম্যাচে এসে তিনি গোলখরা কাটালেন। সার্জি রবার্তোর চ্যালেঞ্জের বিপক্ষে অভিযোগ করে ভিনিসিয়াসকে হলুদ কার্ড দেখতে হয়েছে। ৩৫ মিনিটে ফারলান্ড মেন্ডির ক্রসে ভালভার্দে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।
বিরতির পরও মাদ্রিদের আধিপত্য বজায় ছিল। বেনজেমার একটি কার্লিং শটে বল জালে জড়ালেও অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। লা লিগার এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ গোলদাতা রবার্ট লেভেন্ডোস্কি ফ্রি-কিকের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। ডানি কারভাহালের বিপক্ষে একটি পেনাল্টির আবেদন করেও সফল হতে পারেননি লেভা। ৮৩ মিনিটে ফাতির ক্রসে স্প্যানিশ উইঙ্গার তোরেস বার্সেলোনা শিবিরে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফেরালেও তা শেষ পর্যন্ত আর কাজে আসেনি। শেষ মিনিটে রদ্রিগোর পেনাল্টিতে মাদ্রিদ মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার উপলক্ষ খুঁজে পায়।