ম্যাচের প্রায় এক ঘণ্টা। তখন পর্যন্তও আর্জেন্টিনা অনেকটাই বিবর্ণ। যাকে বলা যায় ছন্দহীন এলোমেলো ফুটবল। লুসাইল স্টেডিয়াম সমর্থকদের চোখের কোণে জল! নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ২০ গজ দূর থেকে বলে বলে অগণিত ফ্রি-কিক মেরেছেন মেসি। সেই কারণেই কিনা ফুটবলবোদ্ধারা ওই অঞ্চলকে অঘোষিত ‘মেসি জোন’ বলেও ডেকে থাকেন। ইউটিউবে সার্চ দিলে চোখের সামনে ভেসে উঠবে এসব জায়গা থেকে করা তার অসংখ্য সব গোল। কিন্তু সেগুলো অতীত। মেক্সিকোর বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে সেই জোন থেকেই মেসি ফ্রি-কিক উড়িয়ে দিলেন আকাশে।
অবশ্য তাকে যে ভিনগ্রহের ফুটবলার এমনি এমনি বলা হয় না, তার প্রমাণও পাওয়া যায় ৬৪ মিনিটে। দুর্দান্ত গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দিলেন সেই মেসি। ডান দিক থেকে ডি মারিয়া পাস দিয়েছিলেন। বাঁ পায়ের মেসির গড়ানো শট গোলকিপার ওচোয়াকে পরাস্ত করে ঢুকে যায় জালে। আনন্দের জোয়ারে ভেসে ওঠে লুসাইল স্টেডিয়ামে। শুধু কি লুসাইল? মেসির এক শটেই পৃথিবীর কত অজানা পাড়া, গলি, এলাকা, বস্তি— কোটিপতি থেকে রিকশা চালানো কত অগণিত মানুষের বুক থেকে ভার নেমে গেলো কে জানে!
গোলের পর ফুটবল দুনিয়া যে দৃশ্য দেখলো, সেটা দেখে অভ্যস্ত নয় কেউই। গোল করা যার কাছে ডাল-ভাত তারই কিনা দুটি চোয়াল একেবারে শক্ত। দৃপ্ত দুই চোখ তাকিয়ে আছে গ্যালারির দিকে। ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কী যেন বললেন। আর্জেন্টাইন দর্শকেরা নাকি শনিবার লুসাইল স্টেডিয়ামে হাজির হয়েছিলেন ‘ফুটবল ঈশ্বর’ ডিয়েগো মেরাডোনার বিশেষ বার্তা নিয়ে। সেই বার্তাই হয়তো কাজে দিলো। ফুটবল দেবতা কি ‘ফুটবল রাজপুত্র’-এর কথা ফেলে দিতে পারেন? তাই কিনা এদিন দেখা মিললো ম্যাগনিফিসেন্ট মেসির!