যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া শহরে থাকেন বাংলাদেশের ফুটবলের সফল অধিনায়ক জুয়েল রানা। সেখানে স্ত্রী, ১৬ বছর বয়সী পুত্র জাবির আরহাম, ১ বছর বয়সের কন্যা আরফা ওয়াজিহাকে নিয়ে প্রায় পাঁচ বছর ধরে বসবাস করছেন এ দেশের ফুটবলের সফল সেনাপতি জুয়েল রানা। তিন দিন হলো ঢাকায় এসেছেন। আজ জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। ভাচুর্য়ালি উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাত সমুদ্র পেরিয়ে না এলেও পারতেন। অন্য কাউকে দিয়ে পুরস্কার গ্রহণ করতে পারতেন। জুয়েল রানা বিশ্বাস করেন, নিজের হাতে পুরস্কার গ্রহণ করা যেমন সম্মানের, তেমনি যিনি দিচ্ছেন বা যারা দিচ্ছে, তারাও সম্মানিত হয়।
১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে চার জাতি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগে থেকে সাফ গেমস ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য লড়াই করছিল বাংলাদেশ। বারবার ব্যর্থ হওয়ায় একটা সময় সাফ গেমস ফুটবলের স্বর্ণ যেন সোনার হরিণ হয়ে গেলো। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৯ সালে নেপালের কাঠমান্ডুর মাঠে ডিফেন্ডার জুয়েল রানার নেতৃত্বে সাফ গেমস ফুটবলের সোনার হরিণ স্বর্ণপদক জয় করেছিল বাংলাদেশ।
এত বড় সাফল্য উপহার দিয়েও জুয়েল রানা বুঝলেন জাতীয় দলে খেলে অপরাধ হয়ে গেছে। ফুটবল দলবদলে পুল করা হলো। কোনো ক্লাব পাঁচ জনের বেশি জাতীয় দলের খেলোয়াড় নিতে পারবে না। শেকল পরিয়ে দেওয়া হলো। জাতীয় দলের ভালো ফুটবলার উপক্ষোর পাত্র হয়ে গেলেন। যারা ক্লাব পাচ্ছিলেন না, তারা বুঝলেন জাতীয় দলে খেলে অপরাধ হয়ে গেছে।
জুয়েল রানা বললেন, ‘আমাদের অপরাধ, আমরা কেন চ্যাম্পিয়ন হলাম। খারাপ প্লেয়ার টাকা পাচ্ছে আর জাতীয় দলে খেলেও সে যোগ্য পারিশ্রমিক পাচ্ছিল না। এসব দেখে চোখের পানি পড়েছে অনেকের।’ সেই রাগে-ক্ষোভে-অভিমানে জুয়েল রানা বাফুফেকে চিঠি দিয়ে বললেন, ‘যে দেশে জাতীয় দলে খেলে খেলোয়াড়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেই দেশের জাতীয় দলে না খেলাই ভালো।’ এক কথায় জাতীয় দল থেকে বিদায় নিলেন জুয়েল রানা। এখনো তার গায়ে স্বর্ণপদক জয়ী চ্যাম্পিয়ন দলের গন্ধ পাওয়া যায়। প্রচার খোঁজেন না, নিজেও কাউকে বলেন না। ফুটবলারদের প্রতি যোগ্য সম্মান না করায় চিঠি দিয়েছিলেন সেদিন।
এখনকার ফুটবল নিয়ে জুয়েল রানা বললেন, ‘এখনকার ফুটবলাররা অনেক ভাগ্যবান। আমাদের সময়ে মোহামেডান ও আবাহনী দুইটা দল। আর এখন মোহামেডান, আবাহনী ছাড়াও বসুন্ধরা কিংস, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব সহ কত দল। ১৫-২০ কোটি টাকার বাজেট হয়। খেলোয়াড় নিয়ে কাড়াকাড়ি। যার ৫ টাকা পাওয়ার কথা, সে পাচ্ছে ১৫ টাকা। কোয়ালিটি খেলোয়াড় নেই।’
জুয়েল রানা বললেন, ‘এখন ক্লাবগুলোর মেইন টার্গেট চ্যাম্পিয়ন হওয়া। অন্য কিছু ভাবে না। ক্লাবগুলোকে বয়সভিত্তিক দল গঠন করতে বাধ্য করতে হবে। উঁচুমানের কোচ আনতে হবে। ভালো কোচের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।’ নিজের অভিজ্ঞতা খণ্ডন করে জুয়েল রানা বললেন, ‘আমরা নিজেরা শিখে ফুটবল খেলেছি। তারপর ভালো মানের কোচ পেয়েছি। তখন আমাদের কার শেখার মাথা ছিল না? আমরা সেন্স দিয়ে খেলেছি। এখন ওভাবে চললে হবে না। লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া একটা অ্যাচিভমেন্ট, ভালো খেলোয়াড় তৈরি করতে পারাও একটা অ্যাচিভমেন্ট।