পুরো ম্যাচটাই নাটকীয়তায় ভরা। শুরুতেই ধারার বিপরীতে গোল হজম করে ফেলা, কলম্বিয়ার পুরোপুরি ডিফেন্সিভ হয়ে যাওয়া, নেইমারের সহজ সুযোগ মিস, এরপর রেফারির বদান্যতায় ব্রাজিলের সমতায় ফেরা এবং ইনজুরি টাইম হিসেবে ১০ মিনিট দেয়া- নাটক আর উত্তেজনার কোনো কমতি ছিল না এই ম্যাচে। যেখানে শেষ পর্যন্ত জয় হলো ব্রাজিলেরই।
রেফারির বদান্যতায় কলম্বিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে জয় পেল ব্রাজিল। কোপা আমেরিকায় গ্রুপ ‘বি’-এর ম্যাচে রিও ডি জেনিরোতে কলম্বিয়া প্রথমে গোল দিয়ে এগিয়ে গেলেও গোল পাচ্ছিল না স্বাগতিক ব্রাজিল। অবশেষে রেফারির ভুলে সেই গোল অবশেষে পেলেন নেইমাররা। শেষ পর্যন্ত ইনজুরি সময়ে আরও একটি গোল। সবমিলিয়ে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ল ব্রাজিলিয়ানরা।
কঠিন এক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল। প্রতিপক্ষের নাম কলম্বিয়া। রিও ডি জেনিরোর এস্টাডিও নিলটন সান্তোসে খেলতে নেমে নেইমাররা বুঝে গেছে ম্যাচটা মোটেও সহজ নয়। কারণ, প্রথমার্ধেই তারা পিছিয়ে যায় ১-০ গোলে। ম্যাচের ১০ম মিনিটেই দুর্দান্ত একটি গোল দিয়ে বসেন কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার লুইজ দিয়াজ। ব্রাজিলের বক্সের মধ্যে জটলার মধ্যেই হুয়ান কুয়াদ্রাদোর নেয়া একটি ক্রসকে মাথার ওপর দিয়ে বাইসাইকেল কিক নেন দিয়াজ। গোলরক্ষক ওয়েভার্টনের কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেটি গিয়ে আশ্রয় নেয় ব্রাজিলের জালে।
একটি গোল দেয়ার পরই পুরোপুরি ডিফেন্সিভ হযে যায় কলম্বিয়া। তাদের ডিফেন্সিভ হাফেই বল নিয়ে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে নেইমারদের জন্য। বল নিয়ে প্রবেশ করতে গেলেই তুমুল বাধার সম্মুখীন কলম্বিয়ানদের কাছ থেকে। শেষ পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেও প্রথমার্ধে কলম্বিয়ার গোলের তালা আর খুলতে পারেনি ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এভার্টন রিবেইরোকে বসিয়ে ব্রাজিল কোচ তিতে মাঠে নামান রবার্তো ফিরমিনোকে। ৬২ মিনিটে বসিয়ে দেন আলেক্স সানড্রোকে। মাঠে নামান রেনান লোদিকে। ৬৮ মিনিটে তুলে নেন ফ্রেডকে। পরিবর্তে মাঠে নামান লুকাস পাকুয়েতাকে। ৭৭ মিনিটে তুলে নেন রিচার্লিসনকেও।
একের পর এক মিস করার কারণেই হয়তো রিচার্লিসনের ওপর বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিতে। তার পরিবর্তে মাঠে নামে গাবিগোল খ্যাত গ্যাব্রিয়েল। একই সময় গ্যাব্রিয়েল হেসুসকেও তুলে নেন তিতে। মাঠে নামান এভার্টনকে। মোট ৫টি পরিবর্তন করেন তিতে। তার ফলও পেলেন শেষ পর্যন্ত, ২-১ গোলের জয়ে। ৭৮ মিনিটে সমতায় ফেরে ব্রাজিল। পরিবর্তিত খেলোয়াড় রেনান লোদির দুর্দান্ত এক ক্রস থেকে কলম্বিয়ার একেবারে গোলমুখ হেড করেন আরেক পরিবর্তিত খেলোয়াড় ফিরমিনো। কলম্বিয়ান গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনা হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু ব্যর্থ হন। বল চলে যায় জালে। ১-১।
তবে এই গোল তুমুল আপত্তি তোলে কলম্বিয়া। রেফারি প্রথমে ভিএআর দিয়ে অফসাইড চেক করেন। এরপর গোলের চূড়ান্ত বাঁশি বাজালেও কলম্বিয়ানরা গোল মেনে নিচ্ছিল না। মাঠের মধ্যখানেই ঘিরে ধরে রেফারিকে। তাদের দাবি গোল বাতিল করতে হবে। কারণ, রেনান লোদি ফিরমিনোকে ক্রস দেয়ার আগে বল পেয়েছিলেন রেফারির কল্যাণে। নেইমার বল পাস দিলে সেটা গিয়ে থেমে রেফারির গায়ে লেগে। সেখান থেকেই বল পেয়ে যান রেনান লোদি। অথচ, রেফারি তার গায়ে লাগার পরই বল থামিয়ে দেয়ার কথা। তা না করে তিনি খেলা চালিয়ে যান। কলম্বিয়ার ফুটবলাররা এখানেই আপত্তি তোলে। এ নিয়ে রেফারির কাছে দাবি জানাতেই থাকে তারা।
রেফারিও নাছোড়বান্দা। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এ নিয়ে খেলা ৫-৬ মিনিট বন্ধ থাকে। শেষ পর্যন্ত রেফারির সিদ্ধান্ত নেমে নিলেও বেশ অসন্তুষ্ট চিত্তেই খেলতে দেখা যায় তাদের। খেলার এই সময়টা নষ্ট হওয়ার কারণে ইনজুরি টাইম বাড়িয়ে দেয়া হয় ১০ মিনিট। খেলা শেষ হওয়ার একেবারে শেষ মুহূর্তে ৯০+১০ মিনিটে আবারও গোল করে ব্রাজিল। এবার ডান পাশের কর্নার থেকে কিক নেন নেইমার। সেই কিকে ভেসে আসা বলে দুর্দান্ত হেড করেন ক্যাসেমিরো। তার এই হেডেই কাঁপিয়ে দেয় কলম্বিয়ার জাল। ২-১।
১০০ মিনিটে ক্যাসেমিরোর গোলের পর ব্রাজিলিয়ানদের উল্লাস ছিল দেখার মতো। সবাই মাঠে নেমে গোল হয়ে যেভাবে উদযাপন করেছে, তাতে মনে হয়েছে চ্যাম্পিয়নই হয়ে গেছে তারা। মূলত ম্যাচের যে পরিস্থিতি ছিল, তাতে এমন একটি গোল এবং জয়ের পর বাঁধভাঙা উল্লাসই ছিল এর প্রধান কারণ। এর আগে ৬৭ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন নেইমার। রিচার্লিসনের কাছ থেকে বল পেয়ে যান ফিরমিনো। তিনি এমনভাবে বলটি বাড়িয়ে দেন যে নেইমারের সামনে গোলরক্ষক ছাড়া আর কেউ ছিল না। গোলরক্ষককে কাটাতে গিয়ে নেইমার বল মেরে দেন পোস্টে। গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে সুযোগটা দিলে হয়তো গোলটা হয়েও যেতে পারতো।
এই জয়ে গ্রুপ ‘বি’তে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। এরই মধ্যে তিনটিতেই জয় পেয়েছে তারা, পয়েন্ট ৯। ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কলম্বিয়া। এরই মধ্যে তারা নিজেদের সব ম্যাচ খেলে ফেলেছে। পরের রাউন্ডে যাওয়ার জন্য এখন তাদের অন্য ম্যাচগুলোর দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে।