প্রথম দুই ম্যাচে দু’ দুটি (৮৪ আর ১২৫) ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিকুর রহীম। প্রথম ম্যাচে তার ইনিংসটিতে রসদ জুগিয়েছিলেন পঞ্চপাণ্ডবের দুই সদস্য তামিম ইকবাল (৫২) আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৫৪)। দ্বিতীয় ম্যাচে আবারও মাহমুদউল্লাহ (৪১)।
তৃতীয় ম্যাচেও মাহমুদউল্লাহ রান পেয়েছেন। করেছেন হাফসেঞ্চুরি (৫৩)। কিন্তু এবার সেভাবে পারেননি মুশফিক। ৫৪ বলে ২৮ রান করে ফিরেছেন সাজঘরে। তাতেই ধসে পড়লো বাংলাদেশ দলও। তার মানে কি পুরোপুরিই সিনিয়রনির্ভর এই দলটি? তরুণদের কি কিছুই করার নেই?
সবমিলিয়ে হিসেব কষলে সদ্য সমাপ্ত সিরিজে অভিজ্ঞরা ঠিকই পারফর্ম করেছেন। সাকিব আল হাসান ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও বল হাতে পুষিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আসল দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে। এই সিরিজেও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি তরুণরা!
লিটন দাসের টানা ব্যর্থতায় যাকে ১৫ জনের বাইরে থেকে শেষ ম্যাচে এনে খেলানো এলো, সেই নাইম শেখ সবাইকে হতাশ করে আউট হলেন ১ রানে। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলকে জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন স্লিপে।
অনেক সম্ভাবনাময় পারফরমার ভেবে যাকে টি-টোয়েন্টি থেকে আবার ওয়ানডে খেলানো হলো, সেই আফিফ হোসেন ধ্রুবও টানা তিন ম্যাচে সুযোগ পেয়ে চোখে পড়ার মতো কিছু করতে পারেননি। আগের দুই ম্যাচে ২৭ আর ১০ রান করা এ বাঁহাতি আজ সাজঘরে ফিরেছেন ১৬ রানে। স্পিনার হাসারাঙ্গার বলে হাঁটু মুড়ে সুইপ করতে গিয়ে তিনি ক্যাচ দিয়েছেন শর্ট ফাইন লেগে।
তরুণদের ব্যর্থতার সাতকাহন এখানেই শেষ নয়। রান পেলেও কার্যকর ভূমিকা রাখার সুবর্ণ সুযোগ হারিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। মোহাম্মদ মিঠুনের বদলে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে রান পাননি মোসাদ্দেক। স্পিনার সান্দাকানের বলে ডাউন দ্য লেগ গিয়ে ১০ রানে কট বিহাইন্ড হয়েছিলেন। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়ে তিনিও ‘ব্যর্থদের কাতারে’।
ভাবছেন মোসাদ্দেক তো সুযোগ পেয়ে দ্বিতীয় ম্যাচেই ফিফটি হাঁকিয়েছেন, তাহলে আর বয়সে নবীনরা ব্যর্থ হলো কি করে? ব্যর্থ এই কারণে যে মোসাদ্দেক পাঁচ নম্বরে নেমে ৭২ বলে ৫১ রান করে যখন আউট হন, তখনও বাংলাদেশ ইনিংসের বাকি ছিল ১১০ বল। উইকেটের অন্যপ্রান্তে ছিলেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
মোসাদ্দেক উইকেটে থাকার ধৈর্য দেখাতে পারলে নিজের ক্যারিয়ারে একটা বড় ইনিংস খেলতে পারতেন। হাতে পর্যাপ্ত ওভার ছিল। তাতে করে রিয়াদ আর তার জুটি লম্বা হতো। হয়তো হারের ব্যবধান কমতো, এমনকি খেলার ফলও ভিন্ন হতে পারতো।
আরও কথা আছে। মোসাদ্দেক ফিফটি করলেও সেটা দলের কতটা কাজে লেগেছে, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন তার আউটের ধরন নিয়ে। হাফসেঞ্চুরি হয়ে যাওয়ার পরই আত্মঘাতী শট খেলে বসেন এই অলরাউন্ডার। অফস্পিনার রমেশ মেন্ডিসের বলে করতে চেয়েছিলেন রিভার্স সুইপ, যেটি কিনা ক্যাচ হয় শর্ট ফাইন লেগে।
সবমিলিয়ে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর মতো সিনিয়রদের মধ্যে দলকে জেতানোর আপ্রাণ চেষ্টা দেখা গেলেও তরুণদের মধ্যে পুরো সিরিজেই তেমন উদ্যম ছিল অনুপস্থিত। যার মাশুলই মূলত দিতে হলো শেষ ম্যাচের বড় হারে।
মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, তামিম, সাকিবের মতো সিনিয়ররা আর কতবার ভালো খেলে দল জেতাবেন? বয়সে তরুণরা যদি সামনে এগিয়ে না আসেন, তাহলে ভবিষ্যৎ তো অন্ধকার!শেষ ম্যাচেও কার্যকর ভূমিকা নিতে ব্যর্থ তরুণরা