গতকালই একটা নতুন রেকর্ড গড়েছেন। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টানা পাঁচ ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার রেকর্ড হলো তাঁর। অ-ভারতীয় স্পিনার-অলরাউন্ডারদের মধ্যে বিশ্বসেরা তারকাদের প্রায় সবাইকে আগেই বিভিন্ন দল রেখে দেওয়ায় মনে করা হয়েছিল, সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বুঝি আইপিএলের নিলামে আজ টানাটানি হবে।
কিন্তু কিছুই হলো না! বাংলাদেশের বাঁহাতি অলরাউন্ডারের জন্য নিলামের প্রথম দফায় কোনো দলই দর হাঁকায়নি। অবিক্রিতই থেকে গেলেন সাকিব!
সম্ভবত পুরো আইপিএলে তাঁকে পাওয়া নিয়ে সংশয়ই সাকিবের অবিক্রিত থেকে যাওয়ার মূল কারণ। আইপিএলের শুরু আর শেষের দিকে যে বাংলাদেশ জাতীয় দলের দুটি সিরিজ আছে! একটি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে, অন্যটি নিজেদের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
আইপিএলের শুরুর দিনক্ষণ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি, তবে ২৭ মার্চই সেটি শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশের তিন ওয়ানডের সিরিজ শুরু হবে ১৮ মার্চ, শেষ হবে ২৩ মার্চ। দুই টেস্টের সিরিজ ৩১ মার্চ শুরু হয়ে শেষ হবে ১২ এপ্রিল, যদিও টেস্ট সিরিজে সাকিব খেলবেন না বলেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরার পর বাংলাদেশ নিজেদের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ খেলবে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ সেই দুই টেস্ট হবে মে মাসে। তখন আইপিএলের শেষ অংশ চলবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস দুদিন আগে জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে খেলবেন বলে বিসিবিকে জানিয়ে দিয়েছেন সাকিব। কিন্তু সেই সিরিজে খেলতে গেলে ৮ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত আইপিএলে সাকিব খেলতে পারবেন না বলে বিসিসিআইকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিবি, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর এমনই।
সেটিই হয়তো শেষ পর্যন্ত সাকিবের অবিক্রিত থেকে যাওয়ার কারণ। ২ কোটি রূপি ভিত্তিমূল্যের সাকিবকে যদি অনেক ম্যাচে না-ই পাওয়া যায়, তাহলে তাঁর পেছনে কে অর্থ বিনিয়োগ করতে যাবে! আজ আইপিএলের নিলামে সাকিবের নাম ওঠার পর অনেকক্ষণ দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন নিলাম সঞ্চালনাকারী, কিন্তু কোনো দলই সাকিবের জন্য দর হাঁকায়নি।
অথচ ফর্মের বিচারে, খেলোয়াড়ের ‘প্রোফাইল’ বিচারে সাকিবকে ঘিরে আগ্রহ কম থাকার কথা ছিল না।
একে তো ব্যাটে-বলে সাকিব আছেন চোখধাঁধানো ফর্মে। বিপিএলে ফরচুন বরিশালের সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচেই সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়ার পথে সাকিব ব্যাট হাতে তিনটি অর্ধশতকসহ করেছেন ২৩০ রান। এই পাঁচ ম্যাচে তাঁর সর্বনিম্ন স্কোরই ৩৮! আর বল হাতে শুধু এই পাঁচ ম্যাচ কেন, বিপিএলে এবার কোনো ম্যাচেই উইকেটশূন্য থাকেননি সাকিব। ৯ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১৫টি।
যদিও আইপিএলে সাকিব সেভাবে আলো ছড়াতে পেরেছেন কমই। গত আইপিএলেও ৮ ম্যাচে রান করেছেন ৪৭, উইকেট পেয়েছেন ৪টি।
সেটির পাশাপাশি একদিকে যখন সাকিবকে বেশিরভাগ ম্যাচেই না পাওয়ার শঙ্কা, বিপরীতে সাকিবের ভিত্তিমূল্যই যখন ২ কোটি, ‘কস্ট-বেনিফিট’ বিশ্লেষণে হয়তো সাকিবকে কেনার সিদ্ধান্তে সুবিধার চেয়ে খরচই বেশি মনে হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর।
আর খেলোয়াড়ের প্রোফাইল দেখতে যাবেন? বাঁহাতি স্পিনারই এ সময়ে আছেন হাতেগোনা কয়েকজন, তাঁদের মধ্যে সাকিব যে সেরা, এ নিয়ে সংশয় সামান্যই। আর স্পিনার-অলরাউন্ডারের হিসাবে যাবেন? রশিদ খান, মঈন আলী, সুনীল নারাইনরা তো আগেই দল পেয়ে গেছেন। কারও ক্ষেত্রে আগের দল তাঁকে ধরে রেখেছে, তো কাউকে টেনে নিয়েছে আইপিএলের নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি। নিলামে ওঠা স্পিনার-অলরাউন্ডারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নামডাক ছিল সাকিবেরই।
কিন্তু সেই সাকিব দল পেলেন না। অথচ সাকিবের কিছুক্ষণ পরই নিলামে ওঠা শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছিল। নিলামকারী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ায় আপাতত স্থগিত আইপিএলের নিলাম, দুঃস্বপ্ন উপহার দেওয়া এই ঘটনার সময়ে হাসারাঙ্গার নিলামই চলছিল। ১ কোটি রূপি ভিত্তিমূল্যের হাসারাঙ্গার দাম ততক্ষণেই ১০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছিল! বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় নিলাম আবার শুরু হওয়ার পর হাসারাঙ্গার দাম কোথায় গিয়ে ঠেকে, কে জানে!
সাকিবের খেলা নিয়ে সংশয় না থাকলে তাঁর দামও নিশ্চয়ই বেশ চড়ত!