সাকিবের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
২৪১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই সাবধানী খেলেছেন লিটন-তামিম। আগের ম্যাচে শূণ্য রানে আউট হওয়া তামিম ইকবাল সাবলীলভাবেই ব্যাট করছিলেন। কিন্তু দশম ওভারে সিকান্দার রাজার চমৎকার ক্যাচে ফিরলেন তামিম। অধিনায়কের বিদায়ে ভাঙে ৩৯ রানের জুটি। ৩৪ বলে চারটি চারে ২০ রান করেন তামিম। তামিম ইকবালের পর সাজঘরে ফিরলেন লিটন দাস। রিচার্ড নাগারাবার শর্ট বল পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন লিটন। প্রথম ওয়ানডেতে ১০২ রান করা লিটন এবার করলেন ৩৩ বলে ২১ রান।
তৃতীয় উইকেটে সাকিবকে সঙ্গ দিতে ব্যাট হাতে নেমে আবারো ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। মাত্রে ২ রান করেই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন তিনি। লুক জংওয়ের অফস্টাম্পের বাইরের বল চালাতে গিয়ে পয়েন্টে মাধবেরের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন মিঠুন। মিঠুনের বিদায়ে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন টাইগার এই ব্যাটসম্যান। নিজের শেষ ৩ ওয়ানডেতে যথাক্রমে ৬,০,১৯ রান করেছেন তিনি।
দলীয় ৭৫ রানে বাংলাদেশ হারালো চতুর্থ উইকেট। রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরলো মোসাদ্দেক। চার উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দল যখন খাদের কিনারায়, তখন দলকে উদ্ধার করে এগিয়ে নিচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ কিন্তু মুজারাবানির বলে চাকাভার তালুবন্দী হয়ে ফিরলেন টাইগারদের এই ভরসার প্রতীক। ব্যক্তিগত ২৬ রান করে সাকিবের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি।
এরপর সিকান্দার রাজার বলে বাউন্ডারি মেরে ৪৭ রান থেকে সাকিব পৌঁছে গেলেন ফিফটিতে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের যা তার ৪৯তম ফিফটি। ৬টি বাউন্ডারিতে ৫৯ বলে ফিফটি পেয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ১৭৪ দিন পর সাকিবের ব্যাট থেকে আসলো এই ফিফটি।
সাকিবের ফিফটির পর বিপদে ফেলে ফিরলেন মিরাজও (৬)। মাধভেরের বল সুইপ করে ডিয়োন মেয়ার্সের তালুবন্দী হন তিনি। ৬ উইকেট হারানোর পর সাকিব-মিরাজে ভালো কিছুর আশা দেখলেও খামখেয়ালিতে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন আফিফ হোসেন। সিকান্দার রাজার বলে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পের শিকার হলেন তিনি। ২৩ বলে ১৫ রান করেন আফিফ।
এরপর একাই খেলে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। সাইফউদ্দিনকে নিয়ে দলকে দেখান জয়ের স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত অষ্টম উইকেট জুটিতে সাইফউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে ৬৯ রানের অপ্রতিরোধ্য পার্টনারশিপ গড়ে দলকে জয় এনে দেন সাকিব। ব্যাট হাতে ১০৯ বলে ৮ চারে ৯৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। এদিকে সাইফউদ্দিন অপরাজিত থাকেন ২৮ রানে।
জিম্বাবুয়ের হয়ে দুটি উইকেট নেন লুক জঙ্গুয়ে, একটি করে উইকেট শিকার করেন মুজারাবানি, এনগারাভা, মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজা।
এর আগে হারারে ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলর। তবে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি স্বাগতিকদের। শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করছিলেন তাসকিন। প্রথম ওভারের শেষ বলে তাসকিন ফিরিয়ে দিলেন জিম্বাবুয়ে ওপেনার টিনাশে কামুনহুকামউইকে। ৫ বলে ১ রান করেন কামুনহুকামউই। তাসকিনের তৃতীয় ওভারে দুটি সুযোগ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। দুবারই বেঁচে যাওয়া ব্যাটসম্যান তাদিওয়ানাশে মারুমানি। প্রথমে ক্যাচ ঠিকঠাক নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। এর পরের বলেই ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন সাইফউদ্দিন। মারুমানি আউট হতে পারতেন ৬ ও ১০ রানে। যদিও মারুমানিকে বেশিদূর যেতে দেননি মিরাজ। দলীয় ৩৩ রানে তার ঘূর্ণিতেই বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটসম্যান। আউট হওয়ার আগে ১৮ বলে ২ চারে ১৩ রান করেন মারুমানি।
চাকাভাকে সঙ্গে নিয়ে এগোচ্ছিলেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। দুজনের জুটিতে এসেছে ৪৭ রান। দলীয় ৮০ রানে চাকাভাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন সাকিব। চাকাভাকে বোল্ড করে ভেঙেছেন টেলরের সঙ্গে তার ৪৭ রানের জুটি।
৩ উইকেট হারিয়ে অধিনায়কোচিত দায়িত্ব নিয়ে খেলছিলেন টেইলর। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হিট উইকেট হয়ে ফিরলেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। শরিফুলের শর্ট বলে আপার কাট করতে গিয়েও পারেননি, তবে সে শটের প্রতিক্রিয়ায় ব্যাটটা ঘুরিয়ে এনেছিলেন পেছনের দিকে। বিপত্তি ঘটলো সেখানেই, টেইলরের ব্যাট আঘাত করলো স্ট্যাম্পে। রিপ্লেতে দেখে তাকে হিট উইকেট দেন আম্পায়ার। ৫৭ বলে পাঁচ চার ও এক ছক্কায় ৪৬ রান করেন টেইলর। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এই প্রথম হিট উইকেট হলেন তিনি। শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নয়, স্বীকৃত ক্রিকেটেই প্রথমবার এমনভাবে আউট হওয়ার স্বাদ পেলেন টেইলর।
এরপর ডিয়ন মেয়ার্সকে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট শিকার করলেন বাঁহাতি স্পিনার সাকিব। সাকিবের শর্ট বল উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন মেয়ার্স। কিন্তু সীমানার আগে মাহমুদউল্লাহর তালুবন্দী হয়ে ফেরেন ৫৯ বলে ৩৪ রান করা মেয়ার্স।
৫ উইকেট হারানোর পর মাধভেরের ব্যাটে প্রতিরোধ গড়েছে জিম্বাবুয়ে। ৫২ বলেই ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি পূর্ণ করেছেন ওয়েসলি মাধভেরে। সিকান্দার রাজার সঙ্গে ৬৩ রানের জুটি গড়ে শরিফুলের শিকার হলেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে নিজের ঝুলিতে মাধেভেরে তুলেছেন ৫৬ রানে।
৪৭তম ওভারে জিম্বাবুয়ে শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন শরিফুল। মোসাদ্দেকের ক্যাচ বানিয়ে শরিফুল ফেরালেন লুক জংওয়েকে (৮)। এই ওভারের শেষ বলে শরিফুলের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লিটনের গ্লাভসে বন্দী মুজারাবানি (০)। আর ৪৪ বলে ৩০ রান করে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে কট বিহাইন্ড হন সিকান্দার রাজা। ৪ রানে চাতারা এবং ৭ রানে এনগারাভা অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। এছাড়া দুটি উইকেট নেন সাকিব আল হাসান।