বল পায়ে আবারো ঝলক দেখালেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। আর দারুণ জয় দিয়ে সবার আগে নকআউট পর্বে পৌঁছলো ফ্রান্স। গতকাল ফিফা বিশ্বকাপের ম্যাচে ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারায় শিরোপাধারী ফরাসিরা। দোহার নাইন সেভেন ফোর স্টেডিয়ামে ফ্রেঞ্চ-ডেনিশ দ্বৈরথে জোড়া গোল করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ‘ডি’ গ্রুপে ফ্রান্সের এটি টানা দ্বিতীয় জয়। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগে গোল হজম করেও পরিষ্কার ৪-১ ব্যবধানে জয় পেয়েছিল দিদিয়ের দেশমের দল। ৬ পয়েন্ট শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত হলো তাদের। ২০০৬ বিশ্বকাপের পর ফ্রান্সই কেবল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেরবার নক আউট পর্ব নিশ্চিত করলো। ২০১০ বিশ্বকাপে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে অংশ নিয়েছিল ইতালি। ওই আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যায় দলটি।
২০১৪ বিশ্বকাপে একই পরিণতি বরণ করতে হয় চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে। ২০১৮ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যায় জার্মানি। গ্রুপে দুই ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ডেনমার্ক ও তিউনিশিয়ার সংগ্রহ সমান ১ পয়েন্ট। প্রথম ম্যাচে তিউনিশিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্রতে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছিল ডেনিশরা।
শেষ দুই সাক্ষাতে হতাশার স্মৃতি ছিল ফরাসিদের। চলতি বছর ইউরোপিয়ান নেশনস লীগে দুবার মুখোমুখি হয় তারা। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়েÑ দুই ম্যাচেই জয় পায় ডেনমার্ক (২-১ ও ২-০)।
গতকাল দোহায়ও বল পজিশনে দু’দল ছিল কাছাকাছি। ফ্রান্স ৫২% এবং ডেনমার্ক ৪৮%। সফল পাসের সংখ্যা ছিল ফ্রান্সের ৫২৬ এবং ডেনমার্কের ৪৯১। কিন্তু অ্যাটাকিং থার্ডে ফরাসিরা ছিল বেশি আক্রমণাত্মক। ম্যাচে মোট ২১টি শট নেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। এর ৭টি শট ছিল অনটার্গেটে। বিপরীতে ১০ শট নিয়ে মাত্র দুটি লক্ষ্যে রাখতে পেরেছিল ডেনিশরা।
গতকাল দু’দলে পার্থক্য গড়ে দেন সেই এমবাপ্পে। প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) স্ট্রাইকার জাতীয় দলের জার্সি গায়েও আছেন তুখোড় ফর্মে। ফ্রান্সের হয়ে এ পর্যন্ত ৩১ গোল পেলেন এমবাপ্পে। আর ২৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড ফ্রান্সের জার্সিতে শেষ ১২ ম্যাচে পেলেন ১৪ গোল। বিশ্বকাপে এ নিয়ে ৭ গোল পেলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। রাশিয়ায় ২০১৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের শিরোপা জয়ের পথে চার আসে এমবাপ্পের চমকে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ফাইনালেও এক গোল পান এমবাপ্পে। ব্রাজিলিয়ান লিজেন্ড পেলের পর বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল পাওয়া দ্বিতীয় কনিষ্ঠ ফুটবলার তিনি। ১৯৫৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে ১৭ বছর বয়সে গোল করেছিলেন ফুটবলের ‘কালো মানিক’ পেলে।
দোহায় ৬১তম মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পের গোলেই এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ডেনমার্কের রক্ষণব্যুহ ভেঙে গোল করেন এমবাপ্পে। থিয়ো হার্নান্দেজের দুরন্ত পাস পেয়ে চলতি বলে শট নিয়ে বিপক্ষ গোলকিপারকে পরাস্ত করেন তিনি। তবে সমতায় ফিরতে খুব সময় নেয়নি ডেনমার্ক। ৮৬তম মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ থেকে জোরালো হেডে সমতাসূচক গোল আদায় করেন আন্দ্রেস ক্রিস্টিনসেন। চেলসি ও বরুশিয়া মুনশেনগ্লাডবাখ ক্লাবে আট বছরের ব্যস্ততা শেষে চলতি মৌসুম বার্সেলোনায় যোগ দেয়া ডেনিশ সেন্টার-ব্যাকের ন্যাশনাল-ক্যারিয়ারে এটি ৬০ ম্যাচে তৃতীয় গোল। কিন্তু ফ্রান্সে দলে যে একজন এমবাপ্পে আছেন! ৮৫তম মিনিটে ফ্রান্সকে জয়সূচক গোল এনে দেন তুখোড় ফর্মের এ স্ট্রাইকার। ডানপ্রান্ত থেকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ তারকা আতোয়াঁ গ্রিজম্যানের লম্বা ক্রসে গোলের একবারে কাছ থেকে গোল আদায় করেন এমবাপ্পে। এক ডেনিশ ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে ঊরুর ধাক্কায় বল জালে পাঠান ফ্রান্সের ‘নাম্বার টেন’ তারকা। এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ তিন গোলের কৃতিত্বও তার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে এক গোল পান তিনি। চলতি বিশ্বকাপে তিন গোলে কৃতিত্ব রয়েছে আর কেবল এনার ভ্যালেন্সিয়ার। কাতারের বিপক্ষে জোড়া গোলের পর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১-১ সমতার ম্যাচেও লক্ষ্যভেদ করেন ইকুয়েডোরিয়ান অধিনায়ক।
বিশ্বকাপে চতুর্থবার মুখোমুখি হলো ফ্রান্স-ডেনমার্ক। ১৯৯৮ সালে প্রথম সাক্ষাতে ২-১ গোলে জেতে ফ্রান্স। পরের আসরে ২-০ গোলে ফ্রান্সকে হারায় ডেনমার্ক। আর গত বিশ্বকাপের ম্যাচটি শেষ হয়েছিল গোলশূন্য সমতায়।
ডেনমার্কের বিপক্ষে গর্বের এক রেকর্ডের হাতছানি ছিল অলিভার জিরুর। কাতারে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল পান জিরু। এতে ফ্রান্সের হয়ে সর্বাধিক গোলের রেকর্ডে (৫১ গোল) থিয়েরি অঁরিকে স্পর্শ করেন আর্সেনাল-চেলসি-এসি মিলানের এ ফরোয়ার্ড। গতকাল ৬৩ ম্যাচ খেলে দুটি শট নেন তিনি। তবে কোনটাই লক্ষ্যে ছিল না।