জাদুকর। না, এই শব্দটা ঠিক ফুটবলার লুকা মডরিচকে ফুটিয়ে তুলতে পারে না। তিনি যা, তা পরিপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে একটা শব্দই—শিল্পী। শিল্পীর কাজ তৈরি করা। ফুটবলের মাঠে লুকা মডরিচ সেই কাজটাই করেন। মাঝমাঠের কারিগর হিসেবে তিনি দলের খেলাটা তৈরি করেন। নিজের এই কাজে তিনি কতটা দক্ষ, কতটা সার্থক-তা ফুটবল দুনিয়া জানে। বিশ্বসেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে নিজের এই শৈল্পিক দক্ষতাটা দেখিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘ এক দশক ধরে। যদি ক্রোয়েশিয়া জাতীয় দলের প্রসঙ্গটি আসে, সেক্ষেত্রে মডরিচ শুধুই একজন শিল্পী নন। জাতীয় দলের জার্সিতে শিল্পীর পাশাপাশি তিনি একজন দক্ষ সেনাপতি।
সেনাপতির কাজ মূলত দুটি—প্রথমত, নিজের কাজটা ঠিকঠাকভাবে করা। দ্বিতীয়ত, দলকে শক্ত হাতে সঠিক পথে পরিচালনা। ৩৭ বছর বয়সি মডরিচ ক্রোয়েশিয়ার হয়ে এই দুটি দায়িত্বই অত্যন্ত সার্থকতার সঙ্গে পালন করে চলেছেন। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে মডরিচদের ক্রোয়েশিয়া কেউ গনাতেই রাখছিল না। কিন্তু দক্ষ সেনাপতি হয়ে মডরিচ সবাইকে চমকে দিয়ে দেশ ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে যান ফাইনালে। পরে ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হারলেও মডরিচ ও তার দল জিতে নেয় বিশ্ববাসীর মন। মডরিচ ব্যক্তিগতভাবে জিতে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার সোনার বল। যার সুবাদে ঐ বছরে তিনি পেয়েছিলেন মর্যাদার ব্যালন ডি’অরও।
প্রায় সাড়ে চার বছর পর চলমান কাতার বিশ্বকাপেও চলছে শিল্পী মডরিচের শৈল্পিকতার প্রদর্শনী। তাতে তার দল ক্রোয়েশিয়া এবারও ছুটে চলেছে ফাইনালের পথে। এরই মধ্যে এক এক ধাপ পেরিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেছে ক্রোয়েশিয়া। যে পথে গত পরশু কোয়ার্টার ফাইনালে তারা হারিয়েছে পরাশক্তি ব্রাজিলকে, টাইব্রেকারে। দলীয় শক্তিমত্তা, ফুটবলীয় ঐতিহ্যে ব্রাজিলের ধারের কাছেও নয় ক্রোয়েশিয়া। মডরিচদের দলটি ব্রাজিলের মতো তারকাসমৃদ্ধও নয়। তারপরও দীর্ঘ ১২০ মিনিট নেইমার-রিচার্লিসনদের ব্রাজিলের সঙ্গে সমানতালে টেক্কা দিয়ে পরে টাইব্রেকারে জিতে ক্রোয়েশিয়া সেমিফাইনালে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ মেসির আর্জেন্টিনা।
অধিনায়ক হিসেবে দলকে কঠিন পথেও অবিচল রাখার মূল কাজটা করছেন তিনিই। এমনিতে তিনি অনেকটা আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার। ক্লাব রিয়ালের হয়ে এই ভূমিকাতেই বেশি দেখা যায় তাকে। কিন্তু বিশ্বকাপে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তিনি পালন করে চলেছেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ভূমিকা। নিচে নেমে রক্ষণকে সমতায়তার পাশাপাশি দলের খেলাটা তৈরি করেন। ষাড়ের মতো দৌড়ে বেড়ান পুরো মাঠ জুড়ে। দলকে লক্ষ্যের পথে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মডরিচ আছেন কাতার বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়েও। এরই মধ্যে দুই ম্যাচে ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনি। তবে ব্যক্তিগত পুরস্কার নয়, সেনাপতি মডরিচের একমাত্র লক্ষ্য যে দেশকে প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ জেতানো, সেটি মাঠে তার ভূমিকাতেই স্পষ্ট।