ঠিক যেন ঘুমের মাঝে দেখা মিষ্টি এক স্বপ্নের মতো বিশ্বকাপ যাত্রার সমাপ্তি টানলো মরক্কো। থেমে গেলো স্বপ্নের বিশ্বকাপ যাত্রা। কাতারের মাটিতে বিগত প্রায় এক মাস ধরে যে স্বপ্নযাত্রায় বসবাস করে আসছিলো আফ্রিকার দেশটি তা যেন উবে গেলো ফ্রান্সের কাছে এক হারেই। তবে স্বপ্ন শেষ হলে কি হবে, ফুটবলের সবুজ গালিচায় মরক্কো রেখে গেলো অদ্ভুত সুন্দর সেই স্বপ্নের রেশ।
কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে আফ্রিকার স্বপ্নসারথি মরক্কো। শেষ হয়েছে অ্যাটলাস লায়ন্সদের স্বপ্নযাত্রা। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে আফ্রিকার দেশটি যে বীরত্ব দেখিয়ে গেছে সেই বীরত্বের অহমে ভাটা পড়েনি এক বিন্দুও। হারলেও চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে শেষ মিনিট পর্যন্ত যে বীরের মতোই লড়ে গেছে উত্তর আফ্রিকার দলটি। মরক্কোর বিদায়ে ভক্তদের চোখের পানি ঝরেছে ঠিকই, তবে সেই পানির প্রতিটি ফোটাতেও যেন লেখা ছিলো বীরত্বের অহমিকা।
বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার পরও বিশ্বনেতাদের প্রশংসায় ভাসছে অ্যাটলাস লায়ন্সরা। প্রশংসা পাবেই না বা কেন, বিশ্বকাপের শুরু থেকে দুর্দান্ত ফুটবল খেলে একের পর এক জায়ান্টদের পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে উঠে এসেছিলো মরক্কানরা।
বেলজিয়াম-ক্রোয়েশিয়ার মতো বড় দলের গ্রুপে পড় যেখানে লক্ষ্য ছিলো কোনমতে সম্মানের সঙ্গে লড়াই করা, সেখানেই প্রতিপক্ষ জায়ান্টদের টপকে নক-আউট রাউন্ডে উঠেছিলো মরক্কো। নক-আউটে স্পেনের মতো শিরোপা প্রত্যাশী দলকেও ছিটকে দেওয়ার পরও অনেকের কাছেই অঘটন মনে হতেই পারে। তবে সবার ধারণা ভুল প্রমাণ করে কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকেও বাড়ির পথ দেখিয়ে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই সেমি ফাইনালে ওঠে ওয়ালিদ রেগ্রুগাইয়ের শিষ্যরা।
ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালের আগে মরক্কোর জালে বল জড়াতে পারেননি প্রতিপক্ষের কোনো ফুটবলার। বিশ্বকাপ ইতিহাসে আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে সেমিফাইনালে উঠেছিলো মরক্কো। বিশ্বকাপ শুরুর আগে যাদের কেউ গোনাতেই ধরেনি সেই দলটিই একের পর এক বাধা টপকে জায়গা করে নেয় শেষ চারে।
টুর্নামেন্টের শুরু থেকে ঠিক যেন স্বপ্নযাত্রার মতোই একের পর এক পথ পেরিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে অ্যাটলাস লায়ন্সরা। সেমিফাইনালে হারলেও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দেয় মরক্কো। হাকিমি-জিয়েচ-আম্রাবাতরা একের পর এক আক্রমণে তটস্থ করে রেখেছিলো ফরাসি রক্ষণভাগকে। তবে অভিজ্ঞতার কাছে হার মেনেই ফ্রান্সের কাছে ২-০ গোলে হেরে শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালেই থেমে যায় মরক্কোর স্বপ্নযাত্রা।
খুব কাছে গিয়েও পৌঁছাতে পারেনি বিশ্বকাপের ফাইনালে। যুদ্ধ জয় করা হয়নি আরব আফ্রিকান দেশটির ফুটবল সৈনিকদের। তবে যুদ্ধ জয় করুক বা না করুক মরক্কোর ফুটবলাররা দেশের মানুষের কাছে পাচ্ছে যুদ্ধজয়ী বীরের সম্মান।
বিগত ফুটবল বিশ্বকাপের আসরগুলোতে অনেক দলকেই দেখা গেছে ‘ডার্কহর্স’ হয়ে উঠতে। মরক্কো এবার শুধু ডার্কহর্সই হয়ে ওঠেনি, ফুটবলের মঞ্চে নতুন করে ছড়িয়েছে আফ্রিকান ফুলের সৌরভ।
মরুর বুকের কাতার বিশ্বকাপে দুর্দম, সাহসী আর আগ্রাসী ফুটবলের যে ছাপ রেখে গেছে মরক্কো, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তা নিয়ে আফ্রিকান রূপকথার গল্প শোনানো যাবে আগামী কয়েক যুগ। ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে এই মরক্কো ফিরে আসুক বারবার, সবুজের গালিচায় ফুটবলের সৌরভ ছড়িয়ে যাক অনন্তকাল ধরে।