ম্যারাডোনার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী ছিল শুক্রবার। দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিনে ঘুরেফিরে এলো ১৯৯০ বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ। সেবার ক্যামেরুনের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা। তারপরও ম্যারাডোনার একক নৈপূণ্যে খেলেছিল ফাইনাল। এবার মেসির হাত ধরে তারই পুনরাবৃত্তির অপেক্ষায় আর্জেন্টিনার ভক্তরা। শনিবার দিবাগত রাত ১টায় লুসাইল স্টেডিয়াম মেক্সিকোর বিপক্ষে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার লড়াই জিততে পারবেতো আর্জেন্টিনা, নাকি আরও একবার স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে মেসির দলকে। সবকিছু মিলিয়ে আর্জেন্টিনার কাছে মেক্সিকো ম্যাচ আজ ‘ফাইনাল’।
ফেভারিট হিসেবে কাতারে পা রাখা আর্জেন্টিনা সৌদি আরবের বিপক্ষে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে। প্রথম ম্যাচ হারের পর শনিবার মেক্সিকোর বিপক্ষে লড়াইটা আলবিসেলেস্তেদের জন্য অস্তিত্ব রক্ষার। শেষ ষোলোতে যেতে হলে মেসিদের সামনে জয়ের বিকল্প নেই। যদিও কাগজে-কলমে এগিয়ে আর্জেন্টিনাই। তবে তাদের খারাপ দিনে চেপে ধরতে পারে মেক্সিকো-ও।
১৯৩০ সালের উদ্বোধনী বিশ্বকাপে প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকো। সে লড়াইয়ে ৬-৩ গোলে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপে দুই দলের মধ্যকার তিনটি ম্যাচই জিতেছে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপে শেষবার ২০১০ সালে ৩-১ গোলে জিতেছিল মেসিরা। শুধু তাই নয়, দুই দলের মুখোমুখি লড়াইতেও এগিয়ে আর্জেন্টিনা। ৩৫ ম্যাচের মধ্যে আর্জেন্টিনার জয় ১৬টিতে, মেক্সিকোর জয় ৫টিতে। বাকি ১৪টি ম্যাচ ড্র হয়েছে।
এবারও তেমন কিছুই প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার লাউতারো মার্তিনেস বলেছেন, ‘এটি আমাদের জন্য ফাইনালের মতো। এটি এমন একটি ম্যাচ, যা এই বিশ্বকাপে আমাদের টিকে থাকা নির্ধারণ করবে। সৌদি আরবের বিপক্ষে হার আমাদের মনোবলে একটি বড় ধাক্কা ছিল, কিন্তু আমরা শক্তিশালী দল এবং খুব ঐক্যবদ্ধ আছি।’
অন্যদিকে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জিতে শেষ ষোলো নিশ্চিত করতে মরিয়া মেক্সিকো। দলটির আর্জেন্টাইন কোচ জেরার্দো মার্তিনো বলেছেন, ‘মেক্সিকোর জয়ের জন্য আমরা সব কিছু করব, আমাদের জিততেই হবে। এছাড়া অন্য কোনও পথ নেই। মেসিকে আটকানোর পথ আমাদের খুঁজতে হবে। সে সেরাটা খেলবে, এটা ধরে নিয়েই আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। আমরা জানি পাঁচ মিনিটের মধ্যে সে মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।’
আর্জেন্টাইন গণমাধ্যম মুন্দো আলবিসেলেস্তে তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মেক্সিকোর বিপক্ষে একাদশে পরিবর্তন আনার ভাবনা রয়েছে কোচ স্কালোনির। সৌদি আরবের বিপক্ষে সেন্টার-ব্যাক ক্রিস্তিয়ান রোমেরোকে উঠিয়ে নামানো হয়েছিল লিসান্দ্রো মার্তিনেজ। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকাকে মেক্সিকোর বিপক্ষে দেখা যেতে পারে ম্যাচের প্রথম থেকেই। চোটআক্রান্ত জিওভানি লো সেলসোর শূন্যস্থান পূরণের দায়িত্ব আগের ম্যাচে ছিল পাপু গোমেজের কাঁধে। মেক্সিকোর বিপক্ষে মাঝমাঠের বামদিকে পাপুর জায়গা নিতে পারেন এঞ্জো ফার্নান্দেজ কিংবা আলেক্সিক ম্যাক আলিস্তার। রাইট-ব্যাক ও লেফট-ব্যাক পজিশনেও দেখা যেতে পারে বদল। নিকোলাস তাগলিয়াফিকোর জায়গায় মার্কোস আকুনিয়া এবং নাহুয়েল মলিনার জায়গায় গঞ্জালো মন্তিয়েল সুযোগ পেতে পারেন।
মেক্সিকোর বিপক্ষে জিততে হলে মেসিকে জ্বলে উঠতে হবে আপন মহিমায়। মেসির পাশাপাশি আনহেল দি মারিয়া, লাউতারো মার্তিনেজদেরও রাখতে হবে বড় ভূমিকা। রক্ষণভাগে লিসান্দ্রো মার্তিনেজ, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোদের হতে হবে নিঁখুত। সৌদির ম্যাচের মতো ভুল করা চলবে না। মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচে আর্জেন্টিনা ৪-৩-২-১ লাইনআপ নিয়ে মাঠে নামতে পার। অন্যদিকে মেক্সিকোকে ৪-৩-৩ ফরমেশনে দেখা যেতে পারে।
সম্ভাব্য একাদশ (আর্জেন্টিনা): এমিলিয়ানো (গোলরক্ষক), মন্তিয়েল, তাগলিয়াফিকো, রোমেরো, মার্তিনেজ, ডি পল, পারেদেস, অ্যালিস্তার, মেসি, দি মারিয়া, লাউতারো।
সম্ভাব্য একাদশ (মেক্সিকো): ওচোয়া (গোলরক্ষক), গ্যালার্দো, মোরেনো, মন্তেস, সানচেজ, শ্যাভেজ, আলভারেজ, হেরেরা, ভেগা, মার্তিন, লোজানো।