অবশেষে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্ন কি ভুলতে পারলেন ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস? সেবার ভারতের মাটিতে ইংলিশদের কাদিয়েছিলেন, কেঁদেছিলেন। এবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হাসলেন, হাসালেন।
৬ বছর আগে ভারতের মাটিতে এমনই এক ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে শিরোপা হাতাছাড়া হয়েছিলো ইংলিশদের। ইনিংসের শেষ ওভারে স্টোকসকে মারা ব্রেথওয়েটের টানা ৪ ছক্কাতেই সেদিন হারতে হয়েছিলো ইংল্যান্ডকে। স্টোকস যেন হয়ে গেলেন ইংলিশদের খলনায়ক।
এবার আরেক ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা মাথায় তুললো ক্রিকেটের জনকরা। সেবারের সেইন খলনায়ক থেকে এবারের ফাইনলে নায়ক রূপেই আবির্ভূত হলেন স্টোকস। নিয়তির লেখাকে অসাধারণই বলতে হবে, সেদিনের হারের ছোঁয়া যেমন লেগে ছিলো স্টোকসের সঙ্গে, আজ ইংলিশদের শিরোপা নিশ্চিত করা রানটি এলো তার ব্যাটের ছোঁয়াতেই।
ফাইনালে ৫২ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে দ্বিতীয়বারের মত ইংল্যান্ডকে শিরোপা পাইয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন স্টোকস। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়েও বড় অবদান রেখেছিলেন তিনি।
২০১৬ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালের শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৯ রান দরকার ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের। শেষ ওভার করতে আসা স্টোকসের প্রথম ৪ বলে ৪ ছক্কা মেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে ইংল্যান্ডের স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় লজ্জায় সে দিন মুখ ঢেকেছিলেন স্টোকস।
কিন্তু অন্যদের মতো নয়, দুঃস্বপ্নকে পেছনে ফেলে শক্তিশালী রূপে ফিরে আসেন স্টোকসরা। ইংল্যান্ডের হয়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচ জিতে ক্রিকেটের সব ফরম্যাটেই নিজেকে দলের অপরিহার্য হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি। তারপরও ২০১৬ সালের ফাইনালের শেষ ওভার নিয়ে সব সময় কথা বলতে হয়েছে তাকে। সুযোগ পেলে দুঃস্বপ্ন মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর ছিলেন স্টোকস।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এমসিজি) আইকনিক ভেন্যুতে দুঃস্বপ্ন ভোলার মোক্ষম সুযোগটাই এসেছিল স্টোকসের সামনে। মহাতারকাদের মত সুযোগটি কি দুর্দান্তভাবেই না কাজে লাগালেন তিনি।
প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১৩৭ রান করে পাকিস্তান। জবাবে ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে মহাচাপে পড়ে ইংল্যান্ড। তখন ক্রিজে ছিলেন স্টোকস। ঐসময় ইংল্যান্ডের উপর আরও চাপ বাড়াতে মরিয়া ছিলেন পাকিস্তানের বোলাররা।
চতুর্থ উইকেটে হ্যারি ব্রুককে সঙ্গে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৩৯ রানের জুটি গড়েন স্টোকস। এই জুটির কল্যাণে কিছুটা চাপমুক্ত হয় ইংল্যান্ড। পরে ১ ওভার বাকি থাকতে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান স্টোকস। ৫ উইকেটের জয়ে শিরোপা ঘরে তুলে ইংল্যান্ড। শুধুমাত্র ব্যাট হাতে অপরাজিত ৫২ রানই নয়, বল হাতে ৪ ওভারে ৩২ রানে ১ উইকেট নেন স্টোকস।
ফাইনাল শেষে স্টোকস বলেন, ‘ফাইনালে, বিশেষ করে রান তাড়ায়, আপনি প্রথমে সকল কঠোর পরিশ্রম ভুলে যাবেন। তাদের ১৩৭ রানে আটকে রাখতে বোলারদের অনেক কৃতিত্ব দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিযোগিতার শুরুতে আয়ারল্যান্ডের কাছে হারের পর আমরা বুঝতে পেরেছিলাম এভাবে টুর্নামেন্টে এগিয়ে যাওয়া যাবে না। সেরা দলগুলো এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে এবং পরের ধাপে এগিয়ে যায়। এটি আমাদের জন্য একটি সুন্দর সন্ধ্যা।’