দল ঘোরাফেরা করছে অবনমন অঞ্চলে। এখন প্রতিটা পয়েন্ট অমূল্য। এ অবস্থায় রেফারির ভুলের কারণে প্রাপ্য পয়েন্ট যদি হাতছাড়া হয়, মেজাজ কি ঠিক থাকে?
ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডেরও মেজাজ চড়েছে। গত রাতে ল্যাম্পার্ডের এভারটন নিজেদের মাঠে ১-০ গোলে হেরে বসেছে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে। ৮২ মিনিটে ইংলিশ মিডফিল্ডার ফিল ফোডেনের গোলই গড়ে দিয়েছে ম্যাচের ভবিষ্যৎ। তবে ফোডেনের গোল নয়, ল্যাম্পার্ড খেপেছেন একটা ‘ন্যায্য’ পেনাল্টি না পাওয়ার কারণে। ৮৫ মিনিটে যে পেনাল্টিটা ম্যানচেস্টার সিটিকে না হারাতে পারুক, অন্তত ড্র করে ১ পয়েন্ট এনে দিতে পারত এভারটনকে। আর অবনমন এড়ানোর লড়াইয়ে এই এক-একটা পয়েন্ট যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা না বললেও চলছে!
ল্যাম্পার্ড সরাসরি দুষেছেন ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি ক্রিস কাভানাঘকে। সাবেক এই চেলসি তারকার চোখে কাভানাঘ অযোগ্য একজন কর্মকর্তা, যিনি নিজের কাজটুকু ঠিকঠাক করতে পারেন না। ৮২ মিনিটে ফোডেনের গোলের ঠিক পরপরই দলকে সমতায় ফেরানোর সুযোগ পান এভারটনের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রিচার্লিসন। রিচার্লিসনের শট আটকানোর পর বল উঁচুতে উঠে যায়। সে বল নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে নিজেদের পেনাল্টি বক্সের মধ্যে হাতের ব্যবহার করে ফেলেন সিটির স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি।
ব্যস, তারস্বরে পেনাল্টির আবেদন করে এভারটনের খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কোচ, সবাই। লাভ হয়নি। ম্যাচ রেফারি পল টিয়েরনি সাড়া দেননি, সাড়া দেননি ভিএআর রেফারি ক্রিস কাভানাঘ। ভিএআর সিদ্ধান্ত দিয়েছে, হাতে বল লাগাননি রদ্রি। ম্যাচ শেষে এভারটনের সহকারী কোচ অ্যাশলি কোল উল্টো প্রতিবাদ করতে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখেছেন।
ওই সময় মোটামুটি শান্ত থাকলেও ম্যাচ শেষে স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চাঁছাছোলা ভাষায় রেফারিকে একদম ধুয়ে দিয়েছেন ল্যাম্পার্ড, ‘এটা যে পেনাল্টি, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অবিশ্বাস্য একটা সিদ্ধান্ত। স্রেফ অবিশ্বাস্য। এই সিদ্ধান্তের ফলে এমন একটু সুযোগ থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে, যা আমাদের প্রাপ্য ছিল।’
ল্যাম্পার্ডের দাবি, ম্যাচ শেষে তিনি রেফারিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন পেনাল্টির ব্যাপারে। পরে রেফারি স্বীকার করেছেন, ওটা পেনাল্টিই ছিল, ‘এটা ভিএআরের দায়িত্ব, পেনাল্টি দেওয়া বা না দেওয়া। এটা ক্রিস কাভানাঘের দায়িত্ব। আমি রেফারির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানে এটা পেনাল্টি ছিল।’
পেনাল্টি না দেওয়ার একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, রেফারি হয়তো ভেবেছিলেন শট নেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে রিচার্লিসন অফসাইডে ছিলেন। তবে ল্যাম্পার্ডের দাবি, রেফারি এটাও স্বীকার করেছেন, রিচার্লিসন অফসাইডে ছিলেন না, ‘একটা প্রশ্ন উঠতে পারে যে শট নেওয়ার আগে অফসাইড হয়েছিল কি না। না, অফসাইড হয়নি। আমি শান্তই ছিলাম। ওই সময়ে আমি রেফারিকে কিচ্ছু বলিনি, তাঁকে লক্ষ্য করে চিৎকার করিনি। আমি জানতে চেয়েছিলাম শট নেওয়ার আগে অফসাইড হয়েছিল কি না, আমাকে তাঁরা বলেছেন অফসাইড হয়নি। আমরা কেন ভিএআর ব্যবহার করি, এর পেছনে একটা কারণ আছে। এটা পেনাল্টি কি না, সেটা জানার জন্য ৫ সেকেন্ড ব্যয় করলেই হয়। কাভানাঘের উচিত ছিল পেনাল্টির ঘোষণা দেওয়ার জন্য রেফারিকে বলা, অথবা তাঁকে ভিডিও দেখতে বলা।’
কাভানাঘকে অযোগ্য বলে তবেই ক্ষান্ত হয়েছেন ল্যাম্পার্ড। তাঁর কথা তিনি নিজের কাজটাও ঠিকঠাক করতে পারেন না, ‘আমরা আজ একটা পয়েন্ট হারালাম এমন একজন কর্মকর্তার জন্য যিনি তাঁর কাজটা ঠিকঠাক করতে পারেন না। এই সিদ্ধান্ত ভুল দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অযোগ্য হতে হবে। পেপ জানবেন, এভারটনের সমর্থকেরা জানবেন, সিটি–ভক্তরা জানবেন, এটা পেনাল্টি ছিল। হাত বাইরে আছে, স্লিভের নিচে বল লেগেছে—সবকিছুই পেনাল্টির দিকেই ইঙ্গিত দেয়। আমি পেনাল্টির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অযোগ্যতার চূড়ান্ত। দেখা যাবে তাঁদের পক্ষ থেকে একটা বক্তব্য দেওয়া হবে বা ক্ষমা যাওয়া হবে, কিন্তু এসবের আর কোনো মানে নেই। বাসায় আমার তিন বছরের একটা মেয়ে আছে, সে-ও বলবে এটা পেনাল্টি।’
এই জয়ে ২৭ ম্যাচে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ম্যানচেস্টার সিটি। ওদিকে ১৭ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে অবনমন অঞ্চলের ঠিক ওপরে অবস্থান করছে এভারটন।