দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায়ে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার। কিন্তু পাকিস্তানের কাছে বাঁচা-মরার ম্যাচে ৫ উইকেটে পরাজিত হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ।
অ্যাডিলেডে বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙার ম্যাচে মূল আলোচনা ছিল সাকিবের বিতর্কিত আউট। যার প্রভাব পড়ে প্রথম ইনিংসে। তারপরও বাকি ব্যাটাররা অবদান রাখতে না পারায় স্কোরটা বড় হয়নি। না হলে পাকিস্তানকে চেপে ধরার সুযোগ ছিল। রান আটকানোর সঙ্গে উইকেট তুলে নিতে পারলেও মামুলি স্কোর পেয়ে পাকিস্তান ১১ বল হাতে রেখে ৫ উইকেট হারিয়েই ম্যাচ জিতে নিয়েছে।
১২৮ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নেওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। তাসকিন আহমেদের প্রথম ওভারে ক্যাচ দিয়েছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। কিন্তু সোহান সেটি গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি। না হলে শুরুতে পাকিস্তানকে চাপে রাখা যেতো। তা না হওয়ায় বাবর-রিজওয়ানের ওপেনিং জুটিই ৫৭ রান যোগ করেছে। ১১তম ওভারে দারুণ এই জুটি ভেঙেছেন নাসুম আহমেদ। ৩৩ বলে ২৫ রান করা বাবর মোস্তাফিজের ক্যাচ হয়েছেন। তার ইনিংসে ছিল ২টি চার। এক ওভার পর এবাদত হোসেন বিদায় দিয়েছেন রিজওয়ানকেও। ৩২ বলে ৩২ রান করা এই ব্যাটার শান্তর কাছে ক্যাচ তুলেছেন। তার ইনিংসে ছিল দুটি চার ও একটি ছয়।
অবশ্য বাবর-রিজওয়ানকে বিদায় দেওয়ার পর আরও একটি উইকেট তুলে নেওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। তখন ক্রিজে ছিলেন মোহাম্মদ নওয়াজ-মোহাম্মদ হারিস। কিন্তু রান-আউটের সুবর্ণ সুযোগ তারা মিস করেছেন।
ওই সুযোগে নওয়াজ-হারিসের জুটি অবদান রাখে বেশ খানিকক্ষণ। ৩১ রানের সেই জুটি ভাঙে নওয়াজের রান-আউটে। তিনি ফেরার আগে ১১ বলে ৪ রান করেছেন।
তারপর শান মাসুদ-হারিস ২৯ রানের জুটিতে জয়ের পথটা আরও সহজ করেছেন। হারিসকে বিদায় দিয়ে এই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। হারিস ১৮ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ৩১ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেছেন। ইফতিখার আহমেদকে (১) মোস্তাফিজ বিদায় দিলেও ততক্ষণে জয়ের চৌকাঠে ছিল বাবর আজমরা। শান মাসুদের অপরাজিত ২৪ রানে ১৮.১ ওভারেই পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত হয়েছে। তার ১৪ বলের ইনিংসে ছিল ২টি চার।
বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট নেন নাসুম আহমেদ, সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান ও এবাদত হোসেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১২৭/৮ (শান্ত ৫৪, আফিফ ২৪*; শাহীন ৪/২২)।
পাকিস্তান: ১৮.১ ওভারে ১২৮/৫ (রিজওয়ান ৩২, বাবর ২৫, হারিস ৩১, শান ২৪*; নাসুম ১/১৪, মোস্তাফিজ ১/২১, এবাদত ১/২৫, সাকিব ১/৩৫)।
ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: শাহীন আফ্রিদি।
পাকিস্তানকে ১২৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিতলেই সেমিফাইনাল। এমন সম্ভাবনায় অ্যাডিলেডে পাকিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে খুব বেশি আহামরি সংগ্রহ পায়নি বাংলাদেশ। ৮ উইকেটে ১২৭ রানই করতে পেরেছে।
অবশ্য একটা পর্যায় পর্যন্ত ছন্দেই ছিল। পাওয়ার প্লেতে লিটনের বিদায়ের পর ইনিংস মেরামত করছিলেন সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ৫২ রানের এই জুটি ভাঙে শাদাব খানের ওভারে সৌম্য সরকারের বিদায়ে। এই ওভারটিই মূলত ম্যাচের রঙ পাল্টে দিয়েছে। সৌম্যর ফেরার পরের বলে আম্পায়ারের বিতর্কিত এক সিদ্ধান্তে এলবিডব্লিউ হন সাকিব। জোড়া আঘাতে চাপে পড়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ আর ইনিংস মেরামত করতে পারেনি। এক ওভার বিরতি দিয়ে নাজমুল শান্ত ফিরলে বিপদ বাড়ে আরও। এই ব্যাটারই সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেছেন।
সাকিব বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সাকিব।
শেষ দিকে বাকি ব্যাটাররা অবদান রাখতে পারেননি। শুধু আফিফ হোসেন ২০ বলে ২৪ রান করতে পারায় স্কোর দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ১২৭ রান। বাংলাদেশকে অল্পতে আটকে রাখতে বড় অবদান পেসার শাহীন আফ্রিদির। ২২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। তাছাড়া ৩০ রানে দুটি নিয়েছেন লেগ স্পিনার শাদাব খান। একটি করে নিয়েছেন হারিস রউফ ও ইফতিখার আহমেদ।
সেমির আশায় টস জিতে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ
আগের ম্যাচে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে প্রোটিয়াদের। ফলে সুপার টুয়েলভে গ্রুপ দুইয়ে পাকিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভার্চুয়াল নকআউট। এই ম্যাচ জয়ী দল সরাসরি চলে যাবে সেমিফাইনালে। আর হারলেই বিমানের টিকিট কাটতে হবে। এমন ম্যাচে বাংলাদেশ টসও জেতে। শুরুতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সাকিব আল হাসান।
বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন আনা হয় তিনটি। বাদ পড়েছেন শরিফুল ইসলাম, ইয়াসির আলী, হাসান মাহমুদ। তাদের জায়গায় ফিরেছেন সৌম্য সরকার, নাসুম আহমেদ ও এবাদত হোসেন। পাকিস্তান অবশ্য অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই মাঠে নামে।
বাংলাদেশ একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, নুরুল হাসান, তাসকিন আহমেদ, নাসুম আহমেদ, এবাদত হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।
পাকিস্তান একাদশ: মোহাম্মদ রিজওয়ান, বাবর আজম (অধিনায়ক), শান মাসুদ, মোহাম্মদ হারিস, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ নওয়াজ, শাদাব খান, মোহাম্মদ ওয়াসিম, নাসিম শাহ, হারিস রউফ, শাহীন আফ্রিদি।