দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ১৭০ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পরই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডই তাহলে চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছে। তবুও টেস্ট ক্রিকেট বলে কথা। যে কোনো সময় রঙ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। সম্ভাবনাও ছিল। দুটি উইকেট হারিয়ে বসেছিল কিউইরা। তার চেয়ে বড় কথা রান তোলার যে মন্থর গতি, তাতে অনেকেই শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলেন, যে ৫৩ ওভার হাতে ছিল, এর মধে ১৩৯ রান করতে পারবে তো নিউজিল্যান্ড?
এবার আর ভুল করলো না কিউইরা। ২ বছর আগে ইংল্যান্ডের কাছে বাউন্ডারির হিসেবে যে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল, বিশ্বকাপের শিরোপা জেতা হয়নি, সেই ভুল এবার আর হয়নি। রস টেলর আর কেন উইলিয়ামসনের দৃঢ়তার বদৌলতে এবার চ্যাম্পিয়নের মুকুট উঠলো নিউজিল্যান্ডের মাথাতেই। প্রথমবারেরমত আয়োজিত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের ৬ষ্ঠ দিনে গিয়ে ভারতকে ৮ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো নিউজিল্যান্ড। অর্থ্যাৎ, টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলো ব্ল্যাক ক্যাপসরা।
ঠিক দুই বছর আগে চরম দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ টাই করার পর সুপার ওভার, সেখানেও টাই। অবশেষে বাউন্ডারি বেশি মারার সুবাধে নিউজিল্যান্ডকে পেছনে ফেলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় ইংল্যান্ড। দুই বছর পর এসে ম্যাচ টাই কিংবা ড্র হওয়ার পথেই হাঁটলেন না কেন উইলিয়ামসনরা। দুই ওপেনার টম ল্যাথাম এবং ডেভন কনওয়ে কিছুটা রয়ে-সয়ে খেলার চেষ্টা করেন। সময় এবং বল ক্ষেপন করেন। কিন্তু রবিন্দ্রন অশ্বিনের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে এই দুই ব্যাটসম্যানের বিদায়টাই যেন নিউজিল্যান্ডের জন্য ভালো হয়েছে।
কেন উইলিয়ামসন এবং রস টেলর ৪৪ রানের মাথায় জুটি বাধেন। এরপর তাদের তো ভারতীয় বোলাররা বিচ্ছিন্ন করতেই পারেনি। বরং, এই দুই ব্যাটসম্যানের দৃঢ়তা এবং রানের গতি বাড়িয়ে তোলার ফলে দিনের প্রায় ৭ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ নিজেরে হাতের মুঠোয় পুরে নেয় কিউইরা। ৮৯ বল খেলে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন কেন উইলিয়ামসন। তার সঙ্গে ১০০ বল খেলে ৪৭ রান করে অপরাজিত থাকেন রস টেলর। ভারতের হয়ে ২টি উইকেটেই নেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
এটা ছিল আইসিসি আয়োজিত টেস্টের প্রথম বিশ্বকাপ বা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। গত দুই বছর ধরে চলছিল এই চ্যাম্পিয়নশিপ। যেখানে অন্যসব দলকে পেছনে ফেলে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নেয় নিউজিল্যান্ড এবং ভারত। ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনের এজবাস্টনকে করা হয় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের ভেন্যু। তবে মৌসুমী বায়ুর কারণে সাউদাম্পটনে ফাইনালের ৫দিনই বৃষ্টির পূর্ভাবাস ছিল। যে কারণে আইসিসি এই টেস্টের জন্য একটি রিজার্ভ ডে’ও ঠিক করে রাখে। কিন্তু ফাইনাল যে সত্যি সত্যি রিজার্ভ ডেতে গড়াবে, তা কেউ ভাবতেই পারেনি। অর্থ্যাৎ ফাইনালের নিষ্পত্তি হলো টেস্টের ৬ষ্ঠ দিনে এসে।
মূলতঃ টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়ে ৫দিনই। কারণ, বৃষ্টির কারণে প্রথম দিন টসই করা সম্ভব হয়নি। পুরো দিনটাই চলে যায় বৃষ্টির পেটে। দ্বিতীয় দিন টস হয় এবং খেলা শুরু হলেও বৃষ্টির বাগড়া ছিলই। মাঝে বেশ কয়েকবার বৃষ্টির কারণে খেলা মাঠ গড়াতেই পারেনি। তবুও, বৃষ্টি বিঘ্নিত এবং ৬ষ্ঠ দিনে গড়ানো ম্যাচটিতে বড় পরাজয় হলো ভারতের। তাদেরকে হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে যাও একটু লড়াই করেছিল ভারতীয়রা, দ্বিতীয় ইনিংসে কিউই পেসারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বিরাট কোহলি অ্যান্ড কোং। যার ফলে মাত্র ১৭০ রানেই অলআউট হয়ে যায় বিরাট কোহলি অ্যান্ড কোং। নিউজিল্যান্ডের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ১৩৯ রানের। হাতে পেয়েছিল তারা ৫৩ ওভার।
প্রথম ইনিংসে ২১৭ রান করেছিল ভারত। আজিঙ্কা রাহানে করেন সর্বোচ্চ ৪৯ রান। ৪৪ রান করেন বিরাট কোহলি। রোহিত শর্মা করেন ৩৪ রান এবং ২৮ রান করেন শুভমান গিল। কাইল জেমিসন একাই নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। ট্রেন্ট বোল্ট এবং নেইল ওয়াগনার নেন ২টি করে উইকেট। ১টি নেন টিম সাউদি। ব্যাট করতে নেমে অবশ্য নিউজিল্যান্ডও খুব বেশিদুর যেতে পারেনি। তারা অলআউট হয়েছে ২৪৯ রানে। ৫৪ রান করেন তাদের সম্ভাবনাময়ী ব্যাটসম্যান ডেভন কনওয়ে। কেন উইলিয়ামসন করেন ৪৯ রান। টম ল্যাথাম করেন ৩০ এবং টিম সাউদিও করেন ৩০ রান।
৩২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে ভারত। পঞ্চম দিন শেষ বিকেলে ৩০ ওভার ব্যাট করে ভারতের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৬৪ রান। আজ ৬ষ্ঠ দিন ব্যাট করতে নেমেছিলেন ১২ রান নিয়ে চেতেশ্বর পুজারা এবং ৮ রান নিয়ে বিরাট কোহলি। দিনের শুরুতেই উইকেট বিসর্জন দিয়ে আসেন কোহলি এবং পুজারা। কোহলি করেন ১৩ রান এবং পুজারা আউট হন ১৫ রান করে। রিশাভ পান্ত কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। ৮৮ বল খেলে ৪১ রান করেন তিনি। রবিন্দ্র জাদেজা করেন ১৬ রান।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন করেন ৭ রান এবং মোহাম্মদ শামি করেন ১৩ রান। ইশান্ত শর্মা ১ রানে অপরাজিত থাকেন। জসপ্রিত বুমরাহ কোনো রান না করে আউট হতেই অলআউট হয়ে যায় ভারত। আগেরদিন রোহিত শর্মা করেছিলেন ৩০ রান। বরাবরের মত নিউজিল্যান্ডের পেসাররাই আগুন ঝরিয়েছেন এজবাস্টনে। অভিজ্ঞ টিম সাউদি নিয়েছেন ৪ উইকেট। ট্রেন্ট বোল্ট নেন ৩ উইকেট। আগের ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়া কাইল জেমিসন নিয়েছেন ২ উইকেট। বাকি উইকেটটি নিয়েছেন নেইল ওয়েগনার।