বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ভক্তের উন্মাদনায় আরেকবার ঢেউ তুলেছেন লিওনেল মেসিরা। কাতার বিশ্বকাপে সুপার স্টার মেসির প্রথমার্ধে ও জুলিয়ান আলভারেজের দ্বিতীয়ার্ধে করা গোলে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। শনিবার রাতে আল রাইয়ানের আহমদ বিন আলী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছে তারা। এর ফলে গত বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়ার দুঃখ ভুলেছে আর্জেন্টাইনরা। কোয়ার্টারে আগামী শুক্রবার রাত ১টায় হল্যান্ডের মুখোমুখি হবে মেসির দল।
পেশাদার ক্যারিয়ারে ক্লাব ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে এদিন ১০০০তম ম্যাচে নেমে বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে প্রথম গোলের দেখা পান ফুটবল যাদুকর মেসি। তার মনোমুগ্ধকর শৈল্পিক নৈপুণ্যে গত বিশ্বকাপের দুঃখ ভুলে শেষ আটে পা রাখে আর্জেন্টিনা। গত আসরে ফ্রান্সের কাছে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ সালের পর থেকে শুধু গতবারই কোয়ার্টার ফাইনালের আগে বিদায় নেয় তারা। এবার বেশ ভালভাবেই কোয়ার্টারে পা রেখেছে লাতিন আমেরিকার ফেভারিটরা। আর ২০০৬ সালের পর আবার দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা অস্ট্রেলিয়া বিদায় নিয়েছে এই হারে।
৩৫ মিনিটের সময় নিকোলাস ওটামেন্ডির পাস থেকে বড় ডি-বক্সে দাঁড়ানো মেসি বল পেয়ে গোলপোস্টের ডান প্রান্ত থেকে বাঁ পায়ের শটে পরাভূত করেন অস্ট্রেলিয়ার গোলরক্ষক ম্যাথিউ রায়ানকে (১-০)। এই গোলটির আগে প্রায় সমানে সমানেই খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। যদিও আর্জেন্টিনাই বেশিরভাগ সময় বল রেখেছে পায়ে। কিন্তু সেভাবে সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি। সকারুসদের বিপদে ফেলার মতো কোন ভয়ানক আক্রমণ শাণাতে পারেননি মেসিরা। এদিন ডি মারিয়াকে ছাড়াই নামতে হয়েছে আর্জেন্টাইনদের।
যদিও পাপু গোমেজ ভালই খেলছিলেন, কিন্তু আক্রমণের ধার অনেকটাই কম দেখা গেছে। এমনকি গোলের আগে অস্ট্রেলিয়ার টার্গেটে একবারই শট নিতে পেরেছেন মেসিরা। ক্যারিয়ারের ১০০০তম ম্যাচে এটি মেসির ১২৯তম প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ৭৮৯তম গোল। স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে ৭৭৮, ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) হয়ে ৫৩ এবং আর্জেন্টিনার জার্সিতে এদিন ১৬৯তম ম্যাচ খেলেছেন এল এম টেন। এর আগে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে গোল পাননি মেসি- ২০১০, ২০১৪ ও ২০১৮ বিশ্বকাপে টানা ৩ আসরে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে অবশ্য দ্বিতীয় রাউন্ডে গোলের জোগানদাতা ছিলেন।
সেই খরা কাটিয়েছেন মেসি এবং বিশ্বকাপে নিজের ২৩তম ম্যাচে ৯ম গোলে পেরিয়ে গেছেন নিজ দেশেরই কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা ও গুইলার্মো স্ট্যাবিলকে। ম্যারাডোনা ২১ ম্যাচে ও স্ট্যাবিল ৪ ম্যাচে ৮ গোল করেছেন। এখন মেসির সামনে দেশের পক্ষে বিশ্বকাপে ১২ ম্যাচে সর্বাধিক ১০ গোল পাওয়া গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। মেসির গোলে প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই স্বস্তিতে শেষ করে আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা চড়াও হয়ে খেলার চেষ্টা করে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তারা আর্জেন্টাইনদের সুশৃঙ্খল ফুটবল দক্ষতা ও সংঘবদ্ধ আক্রমণে কোণঠাসা হতে থাকে। এরই ফলস্ব্রূপ ৫৭ মিনিটের সময় সকারুস অধিনায়ক ও গোলরক্ষক রায়ানের ভুলে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন (২-০) জুলিয়ান আলভারেজ। আগের ম্যাচেও গোল পাওয়া এই তরুণ স্ট্রাইকার বল কেড়ে নেন রায়ানের কাছ থেকে। সেন্টার ব্যাক কাই রাওলেস ব্যাক পাস দিলেও সেটি হাতে না ধরে রায়ান কাটানোর চেষ্টা করেন আক্রমণোদ্যত গতিময় আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের। তাতেই ঘটে বিপত্তি।
আর্জেন্টিনার ষষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম দুই ম্যাচে গোল করেন আলভারেজ। এরপর আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলা চলেছে। তবে ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের ৭৭ মিনিটে। ২৫ গজ দূর থেকে আচমকা শট নেন গুডউইন। তা এনজো ফার্নান্দেজের গায়ে লেগে আর্জেন্টিনার জালে জড়িয়ে যায় (২-১)। ফলে আত্মঘাতী গোল হিসেবে বিবেচিত হয় এটি। এর কয়েক মিনিট আগে বক্সের মধ্যেই দারুণ কয়েকটি সুযোগ পেয়ে গোল করতে ব্যর্থ হয় অস্ট্রেলিয়া। এমনকি ৯৬ মিনিটে নিশ্চিত গোল হজম থেকে বেঁচে যায় আর্জেন্টিনা।
তবে ৭ মিনিটের ইনজুরি সময়ে অনেকগুলো সহজ সুযোগ সৃষ্টি করেও গোল পায়নি আর্জেন্টিনা। তেমনি সুযোগ হাতছাড়া করেছে সকারুসও। শেষ পর্যন্ত তাই গোলের ব্যবধানে কোন পরিবর্তন আসেনি। ২-১ গোলের জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। ২০০৬ বিশ্বকাপে আরেকবার শেষ ষোলোয় ওঠে অস্ট্রেলিয়া গাস হিডিঙ্কের অধীনে। সেবার ফ্রান্সেসকো টোট্টির শেষ মুহূর্তে করা গোলে ইতালি হারিয়ে দেয় সকারুসকে। এবারও তারা বিদায় নিল দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে। ২০০৭ সালের পর এই প্রথম আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়ে পরাজয় দেখল অস্ট্রেলিয়া।