ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দিনভর বৃষ্টির শঙ্কা ছিল। তবে মিরপুরের তপ্ত রোদ সে শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে। সকালের দিকে খানিক মন খারাপ ছিল আকাশের। বৃষ্টিতে মাঠ ভিজলেও প্রথম ইনিংসে অন্তত সেটির প্রভাব পড়েনি। ভেজা মাঠে ১০ মিনিট দেরিতে টস হলেও ব্যাট-বলের লড়াই শুরু হলো নির্ধারিত সময়েই। ব্যাট হাতে বিধ্বংসী শুরু পেলেও সূর্যের তেজ বাড়ার সঙ্গে টাইগার বোলারদের কাছে খেই হারাতে থাকেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। তবু বড় সংগ্রহ পেয়েছে তারা।
তিন ম্যাচের শুরুর দুটি হেরে আগেই সিরিজ হার নিশ্চিত হয়েছে সফরকারীদের। ধবলধোলাইয়ের লজ্জা এড়াতে এ ম্যাচে জয় ভিন্ন ভাবনা নেই লঙ্কানদের। সে লক্ষ্যে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামে সফরকারীরা। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক কুশাল পেরেরার সেঞ্চুরির ওপর ভর করে নির্ধারিত ওভার শেষে ২৮৬ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। প্রতিপক্ষকে ধবল ধোলাই করতে টাইগারদের প্রয়োজন ২৮৭ রান। বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে একাই ৪ উইকেট নিয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ।
শুক্রবার ছুটির দিন। স্বাগতিক সমর্থকরা অপেক্ষায় ছিলেন আগেই দুই ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও টস জিতবেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আগে ব্যাট করতে নেমে ঝড় তুলবেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। তবে কুশাল পেরেরা দেখালেন উল্টো চিত্র। তাতে শুরুর দিকে হতাশা বাড়ল স্বাগতিক শিবিরে, হতাশ লাল-সবুজের সমর্থকরা।
ধানুষ্কা গুনাথিলাকাকে নিয়ে ইনিংস শুরু করতে নেমে আগ্রাসী ব্যাট করতে থাকেন পেরেরা। পাওয়ার-প্লের শুরুর ১০ ওভারে টাইগার বোলারদের সুযোগ না দিয়ে স্কোর বোর্ডে ৭৭ রান জমা করেন দুজন। তবে সে জুটি বাড়তে দেননি তাসকিন। সাইফউদ্দিনের পরিবর্তে একাদশে ঢুকে ইনিংসের ১২তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন। তার শিকারে ৩৯ রানে ফেরেন গুনাথিলাকা। খালি হাতে সাজঘরের পথ ধরেন পাথুম নিসাঙ্কা।
৮২ রানে ২ উইকেট হারানো লঙ্কানদের রানের চাকা সচল রাখেন পেরেরা। কুশল মেন্ডিসকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় সংগ্রহ বাড়িয়ে নেন তিনি। মাঝে ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন লঙ্কানদের ভারপ্রাপ্ত দলপতি। সেটিকে পরে তিন অঙ্কে রূপ দেন। এতে অবশ্য বাংলাদেশি ফিল্ডারদের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করে উপায় নেই পেরেরার। ব্যক্তিগত ৯৯ রানের সময় জীবন পান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ক্যাচ ফসকালে।
শুধু মাহমুদউল্লাহ নন। সেঞ্চুরির পথে ছুটতে আরও দুই বার জীবন পেয়েছেন পেরেরা। ব্যক্তিগত ৬৬ রানের সময় মুস্তাফিজের কাছ থেকে সুযোগ পান তিনি। ৭৯ রানের সময় পেরেরার ক্যাচ ফেলেন আফিফ হোসেন। পরে মুস্তাফিজের করা ইনিংসের ৩২তম ওভারের শেষ বলটি ডিপ স্কোয়ার লেগে ঠেলে ব্যক্তিগত শতক উদযাপন করেন শ্রীলঙ্কার ওপেনার। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। কোনো লঙ্কান অধিনায়কের প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি বাংলাদেশের বিপক্ষে।
এর আগেই অবশ্য মেন্ডিসকে নিজের তৃতীয় শিকার বানান তাসকিন। দলীয় ২১৬ রানের সময় পেররার উইকেট তুলে নেন শরিফুল ইসলাম। এবার আর ভুল করেননি মাহমুদউল্লাহ। দৃষ্টিনন্দন ক্যাচ নেন তিনি। এতে ১২০ রানে থামে পেরেরার ইনিংস। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ১২২ বলের ইনিংসটি সাজান ১১টি চার ও ১টি ছয়ের মারে।
পেরেরার আউটের পর দলের হাল ধরেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। অর্ধশতক হাকানো সিলভা শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৫৩ রানে। ৬৯ বলের ইনিংসে ওভার বাউন্ডারি না থাকলেও বাউন্ডারি মারেন ৪টি। সঙ্গে হাসারাঙ্গার ১৮ রানের সুবাদে নির্ধারিত ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রানের সংগ্রহ পায় লঙ্কানরা। জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ২৮৭ রানের।
সম্প্রতি বল হাতে আলো ছড়াচ্ছেন বাংলাদেশি পেসার তাসকিন আহমেদ। যদিও চলমান শ্রীলঙ্কা সিরিজের শুরুটা সুখকর ছিল না তার জন্য। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে আবার স্বরূপে ফিরেছেন ২৬ বছর বয়সী এই পেসার। লঙ্কানদের ৪ উইকেট তুলে নেওয়ার পথে ১৩তম বাংলাদেশি বোলার এবং অষ্টম পেসার হিসেবে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে পঞ্চাশ উইকেট নেওয়ার কোটা পূরণ করেন।