এক গ্রীষ্মের রাতে ১৯৭৭ সালে জেরি এহম্যান প্রতিদিনে মতই বসে ছিলেন ওহাইয়ো ইউনিভার্সিটির একটি মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষনাগারে। তাঁর কাজ ছিল বেতার তরঙ্গ গ্রাহক যন্ত্রের সামনে বসে ‘Deep Space’ বা অতি দূরবর্তী মহাকাশ থেকে আসা কোনো অজানা প্রান্ত থেকে রেডিও সিগন্যাল বা বেতার তরঙ্গ বিন্যাস করা। অবশ্য এ পর্যন্ত কোন সংকেত তার মনিটর এ প্রদর্শিত হয়নি, কোন সংকেত আসোনি । তিনি এ SETI প্রজেক্টের একজন স্বেচ্ছাসেবক। ওহাইয়ো ইউনিভার্সিটির এই SETI (Search for Extraterrestrial Intelligence) প্রজেক্টের কাজ হচ্ছে এক্সট্রা টেরেসট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা মহাজাগতিক বুদ্ধিমান প্রানীর অস্তিত্ব অনুসন্ধান করা। এজন্য SETI অতি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে বহুদূরে মহাকাশে বেতার সংকেত পাঠানো হয় এই আশায় যে মহাজাগতিক কোন বুদ্ধিমান প্রানী এই সংকেত ধরতে পারলে তারাও পালটা সংকেত পাঠাবে। জেরির দায়িত্ব ছিল প্রতিরাতে এই সংকেতের জন্য অপেক্ষা করা। দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রজেক্ট কাজ চললেও রিসিভারে টু শব্দটিও করতে শোনা যায়নি। সেরাতেও স্বাভাবিক ভাবেই চলছিল সবকিছু। কিন্তু আকস্মিকভাবে বেতার যন্ত্রটি রাতের নীরবতাকে ভেঙে দিল উচ্চ এবং তীক্ষ্ণ শব্দে। জেরি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে রেডিও রিসিভারের দিকে তাকাল। খরখর করে কেঁপে উঠলো জেরি।নীরবতা ভঙ্গ করে বেতার যন্ত্রটি তরঙ্গ রিসিভ করা শুরু করেছে। অত্যন্ত তীক্ষ্ণ সংকেত আসছে একটানা! হতভম্ব হয়ে রিসিভারের দিকে তাকিয়ে রইল জেরি।
যদিও সে অজানা কোন সংকেতের জন্যই প্রহর গুনতো রাতের পর রাত, তারপরও জেরি বিশ্বাস হচ্ছিল না যে সত্যিই কি সংকেত আসছে নাকি জেরি মতিভ্রম হয়েছে, এরপর জেরি নিজেকে ঠিক করে নিলো এবং নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করলো সত্যিই কি এ সংকেত দূর মহাকাশ থেকে আসছে? পরবর্তী ৭২ সেকেন্ড ধরে একটানা সংকেত আসল। তারপর হঠাৎ করে থেমেগেল রিসিভার। যেভাবে হঠাৎ করে আসা শুরু হয়েছিল সিগন্যালটি সেভাবেই বন্ধ হয়ে গেল। জেরির হতভম্ব ভাব তখনও কাটেনি। রিসিভারের সাথে সংযুক্ত কম্পিউটার প্রিন্টারের প্রিন্ট হওয়ার শব্দে তার জ্ঞান ফিরল। কাঁপাকাঁপা হাতে তিনি প্রিন্টআউটটি হাতে নিলেন। সিগন্যাল গ্রাফটির প্রিন্ট আউট হাতে নেওয়ার পরও তার বিশ্বাস হচ্ছিলনা, তিনিই প্রথম ব্যাক্তি যিনি সম্ভবত অন্য কোন নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে আসা কোন সংকেত রিসিভ করেছেন। সিগন্যাল গ্রাফটএ চোখ বুলিয়ে আরেক বার কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন। এলোমেলো, দূর্বোধ্য মোর্স কোড গুলোর কিছুই বুঝতে পারছেন না তিনি! অভিভূত অবস্থায়ই প্রিন্ট আউটের এক কোনায় একটা মাত্র শব্দ লিখলেন, ‘Wow!’। এরপর থেকেই এই সিগন্যালটি সবার কাছে পরিচিত হলো ‘দ্যা ওয়াও সিগন্যাল’ নামে।
এই সংবাদ প্রচার হওয়ার সাথে সাথে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মাঝে শুরু হয় গেল আলোচনার ঝড়। শুরুহল ‘Wow!’ সংকেত নিয়ে গবেষনা। বেতার তরঙ্গটি ৭২ সেকেন্ড ধরে স্থায়ী ছিল যার অর্থ দাঁড়ায় ওই বেতার তরঙ্গ (সংকেতটি)টি যন্ত্রের ক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ দূরবর্তী সীমানা থেকে এসেছে! সংকেতটি ছিল অত্যন্ত তীক্ষ্ণ এবং এটি প্রেরন করা হয়েছিল ‘স্যাগিট্টেরিয়াস নক্ষত্র পুঞ্জ’ থেকে।
স্যাগিট্টেরিয়াস নক্ষত্র পুঞ্জ হচ্ছে পৃথিবী থেকে ১২০ আলোক বর্ষ দূরবর্তী একটি নক্ষত্র। বলাই বাহুল্য যে সেখানে কোন মানুষ বা কোনো নোভো যান ইতিপূর্বে কখনোই যায়নি।
Wow! signal ডিকোড করেও সেই সংকেতের অর্থ কি বা তাৎপর্য কি সেটা বের করা যায়নি। ব্যার্থ হয়েছে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের দ্বিতীয় বারএর সংকেতকে গ্রহণের প্রচেষ্টাও। যদিও তারা তাদের রিসিভার একেই লোকেশন সেট করেছিল। ওই সংকেত এর পর আর কখনোই এই সংকেত শোনা যায়নি। যার কারণে ‘The Wow Signal’ আজও একটি অমীমাংসিত রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কাছে ।
সূত্র : S21H