বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট যেন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। অফিস, বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শপিং মল, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়—সব জায়গায় এখন ইন্টারনেটের ব্যবহার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শুধু বড়রা নয়, শিশুরাও এখন ট্যাবলেট, পিসি, বা মোবাইল ফোনে ভিডিও গেম এবং কার্টুন দেখতে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করছে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে ওয়াই-ফাই ছাড়াও এখন এক মুহূর্তও চলা সম্ভব নয়। আজকের ডিজিটাল যুগে ওয়াই-ফাই এবং ইন্টারনেটের সংযোগ প্রতিটি ক্ষেত্রেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অনেকের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে যে, ওয়াই-ফাই রাউটার ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। তারা মনে করেন, ওয়াই-ফাই রাউটার থেকে নির্গত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বিকিরণ মানব শরীরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে, অধিকাংশ বিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্য সংস্থা এই ধারণাকে সমর্থন করেন না। তাদের মতে, ওয়াই-ফাই রাউটার থেকে নির্গত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বিকিরণের মাত্রা খুবই কম এবং এটি মানব স্বাস্থ্যের জন্য সরাসরি ক্ষতিকর নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়াই-ফাই রাউটার থেকে আসা বিকিরণ এতটাই ক্ষীণ যে, এর মাধ্যমে কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা (আইএআরসি) এবং অন্যান্য বিজ্ঞানী ও গবেষণা সংস্থাগুলোর মতে, ওয়াই-ফাই রাউটার থেকে নির্গত নন-অয়োনাইজিং বিকিরণ সরাসরি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
তবে, দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চমাত্রার বিকিরণের এক্সপোজার থাকলে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। যদিও এর বিরুদ্ধে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তারপরও কিছু সাধারণ সাবধানতা অবলম্বন করা যেতে পারে।
প্রথমত, ওয়াই-ফাই রাউটার থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখা উচিত, যেমন রাউটারটি বিছানার কাছাকাছি না রাখা বা রাউটার থেকে কিছুটা দূরে বসে কাজ করা। এতে বিকিরণের মাত্রা অনেকটাই কমে যায়।
তাছাড়া, দীর্ঘ সময় ধরে এক জায়গায় রাউটারের কাছাকাছি অবস্থান এড়ানো ভালো, যদিও স্বাভাবিক ব্যবহারে কোনো সরাসরি ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ওয়াই-ফাই রাউটার ব্যবহারের সময় কিছু সহজ সাবধানতা অবলম্বন করা যেতে পারে, যা আপনার স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
প্রথমত, ওয়াই-ফাই রাউটারের সিগন্যাল লেভেল সব সময় কম রাখুন। এর মাধ্যমে বিকিরণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শোবার ঘরে কখনো রাউটার রাখা উচিত নয়, কারণ রাতে দীর্ঘসময় বিকিরণের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের রাউটারের কাছাকাছি রাখা এড়িয়ে চলুন। এই দুই গ্রুপের জন্য অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা সবচেয়ে ভালো।
ইন্টারনেট ব্যবহারের পর রাউটারটি সুইচ অফ করে রাখা একটি ভালো অভ্যাস, যা অপ্রয়োজনীয় বিকিরণ এড়াতে সাহায্য করবে।