Image default
প্রযুক্তি

কম্পিউটারের দুনিয়ায় বিপ্লব: কোয়ান্টাম এবং জেটা টেকনোলজির আগমন

গত আগস্ট মাসের শেষে এক দেশ এমন একটি কম্পিউটার তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যা পুরো কম্পিউটার দুনিয়াকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। এই কম্পিউটারটি এমন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করবে, যা এর আগে কখনও তৈরি হয়নি। যদি এই কম্পিউটার সফলভাবে তৈরি হয়, তাহলে বর্তমানের সবচেয়ে দ্রুত কম্পিউটারও তার সামনে ম্লান হয়ে যাবে। এটি একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ, যা প্রযুক্তির উন্নয়নে বিপ্লব ঘটাতে পারে এবং ভবিষ্যতে কম্পিউটার বিজ্ঞানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।

যে দেশটি এমন একটি বিপ্লবী ঘোষণা করেছে, তার নাম শুনলেই প্রযুক্তি বিশ্ব তাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বাধ্য হবে। সেই দেশটি হলো জাপান। গত আগস্ট মাসের ২৮ তারিখে, জাপানের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক ঘোষণায় জানিয়েছে, তারা আগামী বছর থেকেই নতুন ‘জেটা-ক্লাস’ সুপারকম্পিউটার তৈরির কাজ শুরু করবে। এই সুপারকম্পিউটার তৈরির স্বপ্ন অনেক বছর ধরেই ছিল, তবে তা বাস্তবে রূপ দিতে কেউ সফল হয়নি। নতুন সুপারকম্পিউটারটি জেটাফ্লপস গতিতে কাজ করবে, এবং পুরোপুরি কার্যকর হলে এটি আজকের সবচেয়ে দ্রুত সুপারকম্পিউটারকেও ১০০০ গুণ দ্রুত গতিতে কাজ করতে সক্ষম হবে। এই প্রযুক্তি যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

জাপান ঘোষণা করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে তারা নতুন ‘জেটা-ক্লাস’ সুপারকম্পিউটার তৈরি করতে সক্ষম হবে। এই প্রকল্পে আনুমানিক ৭৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে। যদি জাপান সফলভাবে এই সুপারকম্পিউটার তৈরি করতে পারে, তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ক্ষেত্রে তারা উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে যাবে। এমনকি, এই প্রযুক্তি নিয়ে জাপান এতটাই অগ্রসর হতে পারে যে, অন্য কোনও দেশ তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারে। এটি জাপানের প্রযুক্তি খাতে একটি বিশাল মাইলফলক হতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

জেটা-ক্লাস সুপারকম্পিউটার কি এবং এর বৈশিষ্ট্যসমূহ

ফ্লোটিং-পয়েন্ট অপারেশনস পার সেকেন্ড (FLOPS) বা ফ্লপস কম্পিউটারের ক্ষমতা পরিমাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। যেমন বাইনারি ডিজিটকে সংক্ষেপে বিট বলা হয়, ঠিক তেমনি ফ্লোটিং-পয়েন্ট অপারেশনস পার সেকেন্ডকেও উচ্চারণের সুবিধার্থে ফ্লপস বলা হয়। এটি ব্যবহার করে জানানো হয় যে, একটি কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে কতটি গণনা বা ফ্লোটিং-পয়েন্ট অপারেশন করতে সক্ষম। সাধারণভাবে, একটি কম্পিউটারের শক্তি নির্ধারণের জন্য এই FLOPS পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যা জানায় কম্পিউটারের সক্ষমতা এবং শক্তির স্তর। তাই, কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা বা শক্তিমত্তা বোঝার জন্য FLOPS একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূচক।

বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটারগুলোর গতি এক্সাফ্লপস স্তরের। এক্সাফ্লপস মানে হলো, এই কম্পিউটারটি এক সেকেন্ডে ১ কুইন্টিলিয়ন গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। কিন্তু, ১ কুইন্টিলিয়ন আসলে কতটা বড় সংখ্যা? ১-এর পর ১৮টি শূন্য যোগ করলে যা হয়, সেটাই ১ কুইন্টিলিয়ন। এটি যেন খুব বড় একটি সংখ্যা, আর এই পরিমাণ গণনা এক সেকেন্ডে সমাধান করতে পারে আজকের সবচেয়ে দ্রুত সুপারকম্পিউটার। এটি কেবল কম্পিউটার বিজ্ঞান নয়, বরং প্রযুক্তির অগ্রগতিতে একটি বিশাল মাইলফলক।

জেটা-ক্লাস সুপারকম্পিউটার বর্তমানের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটারের চেয়েও অনেক এগিয়ে থাকবে। এটি কাজ করবে জেটাফ্লপস গতিতে, যা বর্তমানে একটি সুপারকম্পিউটারের জন্য অসম্ভব হলেও, জেটা-ক্লাস কম্পিউটারের জন্য এটি একটি নতুন শীর্ষ। যখন একটি সুপারকম্পিউটার ১ জেটাফ্লপস গতিতে কাজ করতে পারবে, তখন সেটি হবে একটি জেটা-ক্লাস কম্পিউটার। ১ জেটাফ্লপস মানে হলো, ১ সেকেন্ডে ১ সেক্সটিলিয়ন গণনা সম্পন্ন করা। ১ সেক্সটিলিয়ন হল ১-এর পর ২১টি শূন্য, যা সত্যিই একটি বিপুল সংখ্যা। এই পরিমাণ শক্তি সম্পন্ন সুপারকম্পিউটারকে সামনে রেখে, জেটা-ক্লাস প্রযুক্তির গুরুত্ব এখন আরও পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠছে।

জাপানের জেটা-ক্লাস সুপারকম্পিউটার: জানুন এর বৈশিষ্ট্য এবং প্রযুক্তিগত দিক

জাপানের নতুন সুপারকম্পিউটারের নাম হতে পারে ‘ফুগাকু নেক্সট’। এটি তৈরি করবে জাপানি কোম্পানি আরআইকেইএন এবং ফুজিৎসু, যারা আগেও ‘ফুগাকু’ নামে একটি সুপারকম্পিউটার তৈরি করেছিল। ফুগাকু নেক্সট হবে সেই ফুগাকু সিরিজের পরবর্তী সংস্করণ। কিছু সূত্রের দাবি, ফুজিৎসুর নকশা করা উপাদানগুলোই নতুন সুপারকম্পিউটারে ব্যবহৃত হতে পারে, যাতে ফুগাকু ও ফুগাকু নেক্সটের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় থাকে। তবে, এই উপাদানগুলো সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। আরও জানা যাচ্ছে, বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন এএমডি, এনভিডিয়া এবং ইনটেল, এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।

জাপান এর আগে ‘ফুগাকু’ নামের যে সুপারকম্পিউটারটি তৈরি করেছিল, সেটির গতি ছিল ০.৪৪ এক্সাফ্লপস। একসময় এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত সুপারকম্পিউটার। তবে ২০২২ সালে, আমেরিকার ‘ফ্রন্টিয়ার’ সুপারকম্পিউটার ফুগাকুকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখল করে। টেনেসির ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে অবস্থিত ফ্রন্টিয়ার সুপারকম্পিউটারের গতি ১.২ এক্সাফ্লপস। তবুও, ফুগাকু এখনও বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দ্রুততম সুপারকম্পিউটারের মধ্যে একটি।

ফুগাকু নেক্সট তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য হলো, সুপারকম্পিউটার প্রযুক্তিতে জাপানকে শীর্ষে রাখতে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সম্পর্কিত প্রযুক্তিতে বিশ্বে নেতৃত্বে থাকতে। বিশ্লেষকদের মতে, জাপান জেটা-ক্লাস সুপারকম্পিউটার তৈরির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এআই গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে অন্যান্য দেশগুলিকে পেছনে ফেলতে চায়। গত শতকে জাপান প্রযুক্তিতে যে উন্নতি করেছে, তা মনে রাখলে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষায় আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে জাপানকে এই প্রকল্পে ব্যাপক পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে কোনও বাধা নেই, এবং এটি তাদের আগামীর প্রযুক্তিগত নেতৃত্বের লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

আরআইকেইএন সেন্টার ফর কম্পিউটেশনাল সায়েন্সের পরিচালক সাতোশি মাতসুওকা বলেছেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সুপারকম্পিউটিং প্রযুক্তিতে অগ্রগামী হয়েছে। আমরা তাদের অর্জিত জ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুসরণ করে, জাপানের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে এমন এক স্তরে নিয়ে যেতে চাই, যা আন্তর্জাতিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।”

নতুন জেটা-ক্লাস সুপারকম্পিউটার তৈরি করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জের কাজ, এবং এটি দক্ষতার সাথে পরিচালনা করাও সহজ নয়। বিশেষজ্ঞরা গত বছরই এ বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। তাদের মতে, বর্তমান প্রযুক্তিগত সুবিধা ব্যবহার করে এই ধরনের সুপারকম্পিউটার তৈরি করা হলে, তা চালানোর জন্য বিপুল পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন হবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, একটি জেটা-ক্লাস সুপারকম্পিউটার চালাতে প্রায় ২১টি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট শক্তির সমপরিমাণ শক্তি প্রয়োজন হতে পারে। এটি নির্দেশ করে যে, এমন একটি সুপারকম্পিউটার পরিচালনার জন্য বিশেষ ধরনের শক্তি ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা প্রয়োজন হবে।

জেটা-ক্লাস সুপারকম্পিউটার তৈরির ঘোষণা দেওয়া সহজ, কিন্তু বাস্তবে এটি তৈরি করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, জাপানের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে, যা তাদের এই প্রকল্পে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। বর্তমানে, অন্য কোন দেশই এই ধরনের সুপারকম্পিউটার তৈরি করার ঘোষণা দিতে সাহস পাচ্ছে না, যা জাপানের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে। সুতরাং, খুব সম্ভবত ফুগাকু নেক্সট বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার হিসেবে আবির্ভূত হতে চলেছে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার: বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যত সম্ভাবনা

কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে গত ছয় বছর ধরে কম্পিউটার প্রযুক্তির দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এই নতুন ধরনের কম্পিউটার তৈরির জন্য একে অপরকে ছাড়িয়ে যেতে চেষ্টা করছে, এবং তাদের লক্ষ্য হচ্ছে কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করা। তবে, এখনও কোনো প্রতিষ্ঠান—গুগল হোক বা আইবিএম—কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। যদিও এটি একটি বড় প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ, তবুও কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির দৌড়ে সবাই এখনো অক্লান্তভাবে লেগে রয়েছে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার দেখতে সাধারণ কম্পিউটারের মতো নয়। এটি একেবারেই ভিন্ন রকম, যেখানে অনেক ধাতব সিলিন্ডার এবং প্যাঁচানো তার দিয়ে তৈরি একটি কিম্ভূত-কিমাকার যন্ত্র থাকে। এই কম্পিউটারটি কোয়ান্টাম মেকানিকসের জটিল সমীকরণগুলির মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। এর শক্তি আসে কোয়ান্টাম বিট বা কিউবিটের মধ্যে থাকা বিশেষ বৈশিষ্ট্য থেকে, যা প্রচলিত কম্পিউটারগুলোর থেকে অনেক দ্রুত ও শক্তিশালী কার্যক্ষমতা প্রদান করে।

সাধারণ কম্পিউটার দুটি বাইনারি সংখ্যা, ০ ও ১ দিয়ে কাজ করে। এই কম্পিউটারগুলো একসাথে ০ ও ১-এর মধ্যে কেবল একটির প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, এবং একবারে একটিই কাজ করতে সক্ষম। অন্যদিকে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার সম্পূর্ণ আলাদা। এটি একই সময়ে ০ ও ১—এ দুটি সংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, এমনকি ০ এবং ১-এর মধ্যে বিভিন্ন অবস্থানও একসাথে প্রদর্শন করতে সক্ষম। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য, কিউবিটের মাধ্যমে, তাকে একাধিক কার্যক্রম একসাথে সম্পাদন করার ক্ষমতা প্রদান করে। যেখানে প্রচলিত কম্পিউটারগুলো একটি কাজ শেষ করে আরেকটি শুরু করে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার একই সময়ে অনেকগুলো কাজ করতে পারে, যা তাকে অনেক বেশি দ্রুত এবং শক্তিশালী করে তোলে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মৌলিক একক হলো কোয়ান্টাম বিটস, বা কিউবিটস। সাধারণ কম্পিউটার বিটসের তুলনায় কিউবিটস অনেক বেশি ক্ষমতাশালী এবং বহুগুণ বেশি কার্যক্ষমতা প্রদানে সক্ষম। কোয়ান্টাম কম্পিউটার দুটি প্রধান কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কৌশল ব্যবহার করে কাজ করে। একটি হলো সুপারপজিশন, যা কিউবিটকে একসাথে একাধিক অবস্থানে থাকতে সক্ষম করে, এবং অন্যটি হলো এনট্যাংগেলমেন্ট পদ্ধতি, যেখানে দুটি কিউবিট একে অপরের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত থাকে এবং তাদের অবস্থান একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়। এই দুটি কৌশলের কারণে কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রচলিত কম্পিউটারের তুলনায় অনেক দ্রুত এবং শক্তিশালী, একই সময়ে অনেকগুলো জটিল কাজ একসাথে করতে সক্ষম।

গবেষকরা বলছেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটার গণিতের জটিল সমস্যাগুলি এক মুহূর্তে সমাধান করতে সক্ষম হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রধানত শিল্প খাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে এবং এটি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার বর্তমানের প্রচলিত সুপারকম্পিউটারের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত এবং দক্ষ। গুগল এক পরীক্ষায় দেখিয়েছে যে, কিছু ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রথাগত প্রসেসরের চেয়ে ১০ কোটি গুণ দ্রুত কাজ করতে পারে। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে এমন জটিল সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে পারে, যা বর্তমানে সেরা সুপারকম্পিউটারগুলোর জন্যও অসম্ভব।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার যে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে, তার একটি বিশাল পরিসর রয়েছে। এটি বিপুল পরিমাণ ডেটা দ্রুত বিশ্লেষণ করতে সক্ষম, যা বর্তমান কম্পিউটারের জন্য প্রায় অসম্ভব। কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে নতুন ওষুধ তৈরির গবেষণা, মৌলিক পদার্থের সৃষ্টির গবেষণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন, এমনকি সামরিক খাতে অস্ত্র নির্মাণ এবং যুদ্ধ কৌশল নির্ধারণেও সহায়তা পাওয়া যাবে। এছাড়া, কোয়ান্টাম কম্পিউটার আরও কিছু নতুন এবং উদ্ভাবনী ক্ষেত্র যেমন নতুন স্বাদের খাবার তৈরি এবং অন্যান্য শিল্প খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে বিপ্লব ঘটাতে পারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যা মানবতার জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।

এখনও কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সম্ভাবনা শুধুমাত্র তত্ত্বের পর্যায়ে রয়েছে, কারণ যদিও বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল পরিমাণ অর্থ ও শ্রম কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির জন্য বিনিয়োগ করছে, তবুও তারা এখনও কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করতে পারেনি। কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি সেই পর্যায়কে বোঝায়, যখন কোয়ান্টাম কম্পিউটার তার শক্তিমত্তায় ক্ল্যাসিকাল (প্রথাগত) কম্পিউটারকে ছাড়িয়ে যাবে। এই অর্জন সাধনের জন্য প্রয়োজন হবে মিলিয়ন মিলিয়ন কিউবিটসের কোয়ান্টাম কম্পিউটার, কিন্তু বর্তমানে যেসব কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছে, তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা প্রায় ১০০০ কিউবিটস। এর মানে হলো, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পূর্ণ শক্তি ব্যবহারের জন্য আরও অনেক কাজ বাকি রয়েছে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির যাত্রা এখনও দীর্ঘ এবং চ্যালেঞ্জিং, তবে সম্প্রতি একটি সুখবর এসেছে কোয়ান্টিনিউয়াম নামক প্রতিষ্ঠান থেকে। এতদিন গুগলের সিকামোর মেশিনটি কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জনের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল, কিন্তু মাসখানেক আগে কোয়ান্টিনিউয়াম দাবি করেছে যে, তাদের তৈরি কোয়ান্টাম কম্পিউটার গুগলের সিকামোরের তুলনায় ১০০ গুণ বেশি কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম। যদিও এই দাবির পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনও চলছে, তবুও এটি স্পষ্ট যে, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জগতে নতুন একটি যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। এই প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন ভবিষ্যতে অনেক ক্ষেত্রে বিপ্লবী পরিবর্তন আনতে পারে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কম্পিউটিং প্রযুক্তিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। একদিকে, জেটা-ক্লাস সুপারকম্পিউটার তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রযুক্তি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এখন মূল প্রশ্ন হলো, কোন দেশ বা প্রতিষ্ঠান এই প্রযুক্তিগুলো প্রথমে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। যেহেতু এই প্রযুক্তিগুলোর সফল বাস্তবায়ন আগামী পৃথিবীর প্রযুক্তিগত নেতৃত্ব নির্ধারণ করবে, তাই যাদের হাতে এই সোনালী সুযোগ আসবে, তারা ভবিষ্যতের শক্তিশালী দুনিয়ার অংশ হয়ে উঠবে।

তথ্যসূত্র: পপুলার মেকানিকস ডটকম, সায়েন্স অ্যালার্ট, ফুজিৎসু ডটকম, লাইভ সায়েন্স, নিক্কেই ডটকম, ফার্স্ট পোস্ট, এনডিটিভি, এশিয়া ফিন্যান্সিয়াল ডটকম

Related posts

সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট: জাতিসংঘের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে বাংলাদেশ

News Desk

স্টাইলিশ ও স্লিক ডিজাইনের ভিভো ভি২৩ই এর যাত্রা শুরু

News Desk

মহাবিশ্বের সবথেকে বড় রহস্য: ব্ল্যাকহোল! কতটুকু জানি?

News Desk

Leave a Comment