ছবি তুলতে ভালোবাসেন কমবেশি সবাই। নিজেদের প্রিয় মুহূর্তগুলোকে ছবির মাধ্যমে স্মৃতিবন্দী করে রাখতে চাই সবাই। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো ফটোগ্রাফ কোনটি এর উত্তর কি দিতে পারবেন? কে তুলেছেন বিশ্বের প্রথম ছবিটি?
কী, ভাবনায় পরে গেলেন? ভাবছেন, ঠিক কোন ছবিটি বিশ্বের প্রথম ছবি? চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের প্রথম ফটোগ্রাফ সম্পর্কে—
‘লে গ্রাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে’ শিরোনামের ছবিটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো ছবি। অনেকে আবার এটিকে পৃথিবীর প্রথম ছবি হিসেবেও আখ্যা দিয়ে থাকেন।
১৮২৬ সালে জোসেপ জোসেপ নিসেফোর নিয়েপসে নামের এক ব্যক্তি তুলেছিলেন ছবিটি। ওটা ছিল ফ্রান্সের সেইন্ট-লুপ-ডি-ভারেনেস এর নিয়েপসে’র বাড়িতে তোলা ছবি। তার বাড়ির নাম ছিল ‘লে গ্রাস’। ওটার বাইরে দাঁড়িয়ে ছবিটি তোলেন তিনি।
ছবিটি তোলার জন্য ফটোগ্রাফার নিজের হাতে বানানো অবসকিউর ফোকাস ক্যামেরা ব্যবহার করেছিলেন। আট বাই দশ ইঞ্চির একটা প্লেটে ছবিটা ধারণ করেছিলেন। প্রথম যুগে এখনকার মতো সুইচ চাপলেই ছবি উঠে যেত না। একটি ছবি তোলার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগত। ‘লা গ্রাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে’ ছবিটি তোলার জন্য সময় লেগেছিল আট ঘণ্টা।
আবিষ্কারক আগেই জানতেন যে, ল্যাভেন্ডারের তেলে পিচ গলিয়ে যদি তা একটি দস্তার পাত্রে রাখা যায় এবং কোনো বস্তুকে যদি ওটার ওপর প্রতিফলিত করা হয় (যেমন গাছের একটি পাতা) এবং দস্তার পাত্রটিকে সূর্যের আলোতে দেওয়া হয়, তবে ওই বস্তুর অংশ ছাড়া দস্তার পাত্রের বাকি অংশটুকু শক্ত হয়ে যায়। কারণ, প্রতিফলিত অংশে সূর্যালোক অপেক্ষাকৃত কম পড়ে। এরপর পাত্রটি ধুয়ে ফেললে বস্তুর প্রতিফলিত নরম অংশটুকু ওই বস্তুর চেহারা ফুটিয়ে তোলে। ২০০৭ সালে প্রকাশিত ‘দ্য কনসাইন ফোকাল এনসাইকোপ্লেডিয়া অব ফটোগ্রাফি’তে এ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন জর্জ ইস্টম্যান মিউজিয়ামের ফটোগ্রাফির বিবর্তন বিষয়ক ইতিহাসবিদ মার্ক ওস্টারম্যান।
নিয়েপসের এ পদ্ধতিতে তোলা নিজের বাড়ির ছবিটিই পৃথিবীর প্রথম ফটোগ্রাফি। এ কাজের জন্য তিনি জলের সঙ্গে মিশিয়েছিলেন বিটুমেন অব জুডিয়া। এটা প্রাচীন মিশরীয়রা ব্যবহার করতো। মিশ্রণটি রাখা হয় দস্তার পাত্রে। এরপর পাত্রটিতে তাপ প্রয়োগ করে বিশেষ কিছু অংশ শক্ত করা হয়। পরে পাত্রটিকে একটি ক্যামেরায় নিয়ে তার বাড়ির দ্বিতীয় তলার জানালার দিকে তাক করেন। পরে দীর্ঘ সময় ধরে ক্যামেরাটি ওভাবেই তাক করে রাখেন তিনি। সম্ভবত এভাবে দু’দিন রেখেছিলেন। এ সময়ে পাত্রের যে অংশে বেশি সূর্যালোক পড়ে তা বেশ শক্ত হয়ে ওঠে। আর যে অংশে কম আলো পড়বে সেই অংশটি তিনি ভবনের জানালার দিকে তাক করে রেখেছিলেন। পরে ধুয়ে ফেললেন পাত্রটি। ওখানে ফুটে উঠল বাড়ির আবছা ছবি। ওটা প্রায় দেখাই যায় না। এই ছবিটি রাখা আছে টেক্সাসের অস্টিনের হ্যারি র্যানসম সেন্টারে।
নিয়েপসে ছবি তোলার এ পদ্ধতিটাকে ‘হেলিওগ্রাফিক’ নামে ডাকতেন। জানামতে, সেই পদ্ধতিতে তোলা এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ছবি। ওটার ইমেজ কোয়ালিটি নগণ্য। এভাবে একটি ছবি তুললেই বহু সময় ব্যয় হতো। তবে আরেক আবিষ্কারক লুইস ড্যাগুয়েরের সঙ্গে নিয়েপসের দেখা হওয়ার পর ইতিহাস পাল্টে যায়। তারা আবিষ্কার করেন ‘ড্যাগুয়েরোটাইপ’ যার মাধ্যমে অনেক কম সময়ে ভালো মানের ছবি তোলা সম্ভব হয়েছিল। তবে এ পদ্ধতি সমৃদ্ধ হওয়ার আগেই ১৮৩৩ সালে মারা যান নিয়েপসে।