Image default
প্রযুক্তি

ক্রিপ্টোকারেন্সি কী? বিনিয়োগ এবং ক্রিপ্টো কেনার পূর্ণ গাইড

ক্রিপ্টোকারেন্সি, যা সাধারণত “ক্রিপ্টো” নামে পরিচিত, একটি ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা যা ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করে। এটি কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারি সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় এবং একটি বিকেন্দ্রীকৃত সিস্টেমের মাধ্যমে কাজ করে। এর ফলে, ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের রেকর্ড সংরক্ষণ ও নতুন ইউনিট তৈরির ক্ষমতা রাখে।

ক্রিপ্টোকারেন্সির সবচেয়ে বড় সুবিধাগুলি হল এর নিরাপত্তা, গোপনীয়তা, এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা। বিটকয়েন, ইথেরিয়াম এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্যকর হয়, যা তাদের লেনদেন স্বচ্ছ, নিরাপদ এবং হ্যাকারদের থেকে সুরক্ষিত রাখে। ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যেখানে তারা ডিজিটাল মুদ্রায় বিনিয়োগ করে লাভের সুযোগ পেতে পারে।

যদিও ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারে কিছু ঝুঁকি রয়েছে, তবে এর প্রযুক্তি ও সুবিধাগুলি এটি একটি শক্তিশালী ও উদীয়মান প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিশ্বব্যাপী আর্থিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Cryptocurrency কি?

ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম যা কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা বা ব্যাংক ছাড়াই পিয়ার-টু-পিয়ার (P2P) সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে, যেকোনো সময় একে অপরকে অর্থ প্রেরণ করতে পারেন, এবং এতে ফিজিক্যাল মুদ্রার প্রয়োজন পড়ে না। ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনগুলি একটি ডিজিটাল ডাটাবেসে রেকর্ড করা হয়, যা পাবলিকভাবে দৃশ্যমান এবং সুরক্ষিত থাকে। প্রতিটি লেনদেন ব্লকচেইন বা পাবলিক ডেটাবেসে সংরক্ষিত হয়, যা টেম্পার-প্রুফ (যার তথ্য পরিবর্তন করা অসম্ভব) এবং ট্রান্সপারেন্ট (স্বচ্ছ)।

ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম এসেছে এর ট্রানজেকশন ভেরিফিকেশনের জন্য ব্যবহৃত এনক্রিপশন প্রযুক্তি থেকে। এনক্রিপশন হল একটি উন্নত কোডিং পদ্ধতি যা লেনদেনের নিরাপত্তা এবং ইউজারের গোপনীয়তা নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনগুলি সুরক্ষিত থাকে এবং ব্যবহারকারীদের তথ্য রক্ষা পায়।

ক্রিপ্টোকারেন্সি সাধারণত একটি ডিজিটাল ওয়ালেটে সঞ্চিত থাকে, যা একটি সুরক্ষিত, এনক্রিপ্টেড ডেটাবেসের মতো কাজ করে। বিটকয়েন (Bitcoin) ছিল প্রথম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি, যা ২০০৯ সালে “Satoshi Nakamoto” নামক এক অজ্ঞাত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী দ্বারা তৈরি হয়েছিল। এটি ছিল প্রথম ব্লকচেইন-ভিত্তিক মুদ্রা এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রযুক্তির পথপ্রদর্শক।

এই প্রযুক্তি ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে, যেখানে তারা নিরাপদ এবং ডিজিটালভাবে সম্পন্ন লেনদেনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

কিভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি কাজ করে?

ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে কাজ করে, যেখানে প্রতিটি লেনদেনের রেকর্ড সব কারেন্সি হোল্ডারদের মধ্যে আপডেট হয়। ব্লকচেইন একটি বিকেন্দ্রীকৃত, সুরক্ষিত ডাটাবেস যা সকল লেনদেন সংরক্ষণ করে এবং হ্যাক করা বা পরিবর্তন করা অত্যন্ত কঠিন। ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করার প্রক্রিয়াকে মাইনিং বলা হয়, যেখানে বিশেষ কম্পিউটারগুলি জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে নতুন কয়েন বা টোকেন তৈরি করে। মাইনিং প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ এবং শক্তির খরচ বেশি হলেও, এটি ক্রিপ্টোকারেন্সির নিরাপত্তা ও টেকসইত্ব নিশ্চিত করে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার জন্য, ব্যবহারকারীরা সাধারণত ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ বা ক্রিপ্টো এজেন্টদের সাহায্য নিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনে থাকে। একবার ক্রিপ্টোকারেন্সি অর্জিত হলে, এটি একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক ওয়ালেটে সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষিত হয়। এই ওয়ালেটটি এনক্রিপ্টেড থাকে, যাতে শুধুমাত্র সেই ব্যবহারকারী যিনি ওয়ালেটের প্রাইভেট কী জানেন, তিনি তা অ্যাক্সেস করতে পারেন। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করতে, ব্যবহারকারীদের একটি “কী” (private key) থাকে, যার মাধ্যমে তারা লেনদেন করতে পারেন বা অর্থ প্রদান করতে পারেন।

যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সি ফিজিক্যাল মুদ্রার মতো কোনও শারীরিক রূপে উপস্থিত থাকে না, এটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল আকারে থাকে। এর মানে হল, যে কোনও ব্যক্তি যদি ক্রিপ্টোকারেন্সির মালিক হন, তার কাছে শারীরিক মুদ্রা না থেকে একটি ডিজিটাল কী থাকবে, যা তার সম্পত্তি এবং লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।

বিটকয়েন (Bitcoin), যা ২০০৯ সালে চালু হয়, এখনও বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি, তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার আজকাল দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি এখন শুধু একটি বিনিয়োগ পণ্য হিসেবেই নয়, বরং এটি আর্থিক বাজারে বন্ড, স্টক, এবং অন্যান্য আর্থিক সম্পদের লেনদেনেও ব্যবহৃত হচ্ছে। ভবিষ্যতে, ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার আরও বিস্তৃত এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রসারিত হতে পারে।

ক্রিপ্টোকারেন্সির উদাহরণ

বিটকয়েন

বিটকয়েন, যা ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, বিশ্বের প্রথম এবং সবচেয়ে বিখ্যাত ক্রিপ্টোকারেন্সি। বিটকয়েনের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে স্যাটোশি নাকামোতো নামে একটি অজ্ঞাত ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে, তবে আজও তার পরিচয় জানা যায়নি। বিটকয়েন ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি, এবং এটি একটি বিকেন্দ্রীকৃত সিস্টেম-এ কাজ করে, যার ফলে কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকার এর নিয়ন্ত্রণে নেই।

বিটকয়েনের মাধ্যমে পিয়ার-টু-পিয়ার (P2P) লেনদেন সম্ভব, যা বিশ্বব্যাপী মানুষকে দ্রুত এবং নিরাপদে অর্থ স্থানান্তর করতে সহায়ক। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি বিকেন্দ্রীকৃত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা, যেখানে ব্যাংক বা তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন পড়বে না। এর ফলে, বিটকয়েনের লেনদেন গোপনীয়, সুরক্ষিত এবং স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয়।

বর্তমানে, বিটকয়েন শুধু একটি জনপ্রিয় বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে না, বরং এটি বিভিন্ন দেশে আর্থিক প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল অর্থনীতি রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিটকয়েনের বৃদ্ধি ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির ভবিষ্যতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

ইথেরিয়াম

Ethereum (ETH) বা Ether হলো বিটকয়েনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি, যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি। Ethereum শুধু একটি ডিজিটাল মুদ্রা নয়, এটি একটি বিকেন্দ্রীকৃত প্ল্যাটফর্ম যা স্মার্ট কনট্রাক্টস এবং ডিস্ট্রিবিউটেড অ্যাপ্লিকেশন (dApps) চালানোর জন্য একটি শক্তিশালী ফ্রেমওয়ার্ক প্রদান করে।

Ethereum প্ল্যাটফর্মটি ২০১৫ সালে ভিটালিক বুটেরিন এবং তার সহ-প্রতিষ্ঠাতাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডেভেলপারদের জন্য একটি বিকেন্দ্রীকৃত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, যেখানে তারা স্মার্ট কনট্রাক্টস এবং বিভিন্ন ধরনের ডিস্ট্রিবিউটেড অ্যাপ্লিকেশন (dApps) তৈরি এবং পরিচালনা করতে পারেন।

Ether (ETH) হল Ethereum নেটওয়ার্কের নেটিভ ক্রিপ্টোকারেন্সি, যা স্মার্ট কনট্রাক্টস এবং লেনদেনের গ্যাস ফি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি Ethereum ব্লকচেইনে লেনদেন প্রক্রিয়া করতে এবং অ্যাপ্লিকেশন চালাতে সহায়ক। Ethereum প্ল্যাটফর্মের স্মার্ট কনট্রাক্টস স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট শর্ত পূর্ণ হলে একে অপরকে চালানোর কোড বা চুক্তি হিসেবে কাজ করে, যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির গঠনমূলক ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

Ethereum-এর জনপ্রিয়তা বিটকয়েনের পর দ্বিতীয়, এবং এটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহারে একটি বিপ্লবী পরিবর্তন আনছে। বিশেষ করে, এর বিকেন্দ্রীকৃত অ্যাপ্লিকেশন (dApps) এবং স্মার্ট কনট্রাক্টগুলির মাধ্যমে Ethereum ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন ব্যবহারের ভবিষ্যতকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে উন্মুক্ত করছে।

Litecoin

Litecoin (LTC) একটি জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি যা বিটকয়েনের বিকল্প হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। এটি ২০১১ সালে চার্লি লি, এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। Litecoin মূলত বিটকয়েনের কোডবেসের উপর ভিত্তি করে তৈরি, তবে এতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এবং ইনোভেশন রয়েছে, যা এটিকে আরও দ্রুত এবং কার্যকরী করে তোলে।

Litecoin-এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এর দ্রুত পেমেন্ট এবং ট্রানজেকশন প্রসেসিং স্পিড। বিটকয়েনের তুলনায় Litecoin-এর ব্লক জেনারেশন সময় কম (প্রতি ২.৫ মিনিটে একটি ব্লক তৈরি হয়), যার ফলে Litecoin-এর লেনদেন দ্রুত সম্পন্ন হয়। এই দ্রুত লেনদেন সময়ের কারণে Litecoin একটি জনপ্রিয় পেমেন্ট সিস্টেম হিসেবে পরিচিত, বিশেষ করে ছোট এবং দৈনিক লেনদেনের জন্য।

Litecoin-এ ব্যবহৃত ব্লকচেইন প্রযুক্তি সুরক্ষিত এবং ডিজিটাল মুদ্রা স্থানান্তর করার জন্য নির্ভরযোগ্য। এর কম ট্রানজেকশন ফি এবং দ্রুত প্রক্রিয়া এর গ্রহণযোগ্যতাকে আরও বাড়িয়েছে। এছাড়া, Litecoin-এর খনন প্রক্রিয়া বিটকয়েনের তুলনায় সহজ এবং কম শক্তির মাধ্যমে মাইনিং সম্ভব, যা এটিকে একটি সুবিধাজনক বিকল্প হিসেবে তৈরি করে।

Litecoin নিজেকে “ডিজিটাল সিলভার” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যেখানে বিটকয়েনকে “ডিজিটাল গোল্ড” বলা হয়, কারণ এটি অধিক দ্রুত এবং কার্যকরী পেমেন্ট ব্যবস্থার জন্য তৈরি করা হয়েছে। বর্তমান বাজারে, Litecoin একটি অগ্রণী ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, এবং এর ব্যবহার প্রতিদিন আরও বাড়ছে।

Ripple

Ripple (XRP) একটি শক্তিশালী ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার সিস্টেম (DLT), যা ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি শুধুমাত্র একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি নয়, বরং একটি উন্নত টেকনোলজি প্ল্যাটফর্ম যা বিশ্বের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য দ্রুত, সস্তা এবং নিরাপদ আন্তর্জাতিক লেনদেন নিশ্চিত করে। Ripple মূলত একটি পেমেন্ট নেটওয়ার্ক এবং লেজার সিস্টেম হিসেবে কাজ করে, যা আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তর প্রক্রিয়া উন্নত করতে ডিজাইন করা হয়েছে।

Ripple এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে একটি দ্রুত এবং কার্যকর পেমেন্ট প্রক্রিয়া প্রদান করা। এর XRP ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা হয়, তবে Ripple এর সিস্টেমটি মূলত ব্লকচেইন প্রযুক্তির বাইরে কাজ করে, যা এটিকে অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির তুলনায় আলাদা করে তোলে। Ripple নেটওয়ার্কের মাধ্যমে লেনদেনগুলি দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং এটি বিশ্বের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে নিরাপদ, কম খরচে এবং দ্রুত পেমেন্ট প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে।

Ripple Labs, যা Ripple এর ডেভেলপার কোম্পানি, বেশ কয়েকটি বৃহৎ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে, যার মধ্যে Santander, American Express, PNC, এবং SBI Holdings-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর পেমেন্ট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, এই প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের আর্থিক লেনদেন আরও দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়।

Ripple এর পেমেন্ট সিস্টেমে XRP টোকেন ব্যবহৃত হয়, যা মূলত ট্রানজেকশন ফি এবং পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে কাজ করে। XRP ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রানজেকশন সম্পন্ন করার জন্য একটি কনভার্সন মিডিয়া হিসেবে কাজ করে, কিন্তু এটি বিটকয়েন বা Ethereum-এর মতো সরাসরি পেমেন্ট মুদ্রার মতো ব্যবহৃত হয় না।

Ripple এর লেজার প্রযুক্তি মূলত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য ডিজাইন করা হলেও, এটি অন্যান্য খাতেও ব্যবহৃত হতে পারে। এর প্রযুক্তি ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট সিস্টেমকে নতুনভাবে রূপান্তরিত করেছে এবং এটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলির একটি।

Altcoins: Ripple সহ বিটকয়েনের বিকল্প হিসাবে তৈরি অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলি altcoins নামে পরিচিত। “Altcoin” শব্দটি “alternative” (বিকল্প) এবং “coin” (মুদ্রা) এর সংমিশ্রণ, যা বিটকয়েনের পরবর্তীতে তৈরি হওয়া ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলিকে বোঝায়। বিটকয়েন ২০০৯ সালে আত্মপ্রকাশের পর, এর প্রযুক্তি এবং ধারণার ভিত্তিতে অনেক নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি হয়, যার মধ্যে Ripple অন্যতম।

কিভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনবেন?

ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা এখন সহজ এবং দ্রুত, তবে সঠিক প্ল্যাটফর্ম বেছে নেওয়া এবং সঠিক পদক্ষেপ অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার জন্য একটি সহজ স্টেপ-বাই-স্টেপ গাইড দেওয়া হলো:

স্টেপ 1: ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার জন্য সঠিক প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করুন

প্রথমে আপনাকে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম বেছে নিতে হবে। আপনি একটি ট্রাডিশনাল ব্রোকার বা ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ থেকে যে কোন একটি বেছে নিতে পারেন।

  • ট্রাডিশনাল ব্রোকার: আজকাল অনেক অনলাইন ব্রোকার ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার এবং বিক্রির সুযোগ দেয়। এই ব্রোকারগুলিতে আপনি বন্ড, স্টক, এবং অন্যান্য আর্থিক সম্পদও কিনতে পারেন।
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ: বিশেষভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার জন্য এক্সচেঞ্জগুলো একটি ভাল অপশন। এগুলি ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং, ওয়ালেট স্টোরেজ, এবং সুদের অ্যাকাউন্ট এর মতো সুযোগও প্রদান করে।

এই প্ল্যাটফর্মগুলি নির্বাচন করার সময়, তাদের ফি এবং ফিচার সম্পর্কে জানুন, যাতে আপনি বুঝতে পারেন কোনটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।

স্টেপ 2: অ্যাকাউন্টে ফান্ড জমা দিন

প্ল্যাটফর্ম বাছাইয়ের পর, পরবর্তী স্টেপ হল অ্যাকাউন্টে ফান্ড জমা দেওয়া। বেশিরভাগ ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ এবং ব্রোকার আপনাকে ফিয়াট মুদ্রা যেমন মার্কিন ডলার, ইউরো, বা ব্রিটিশ পাউন্ড ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার সুযোগ দেয়।

  • ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ক্রিপ্টো কেনা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এবং সব এক্সচেঞ্জেই এটি সাপোর্ট করা হয় না।
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি অত্যন্ত উদ্বায়ী (volatile) হওয়ায় লোনের মাধ্যমে ক্রিপ্টো কেনা এড়িয়ে চলা উচিত।
  • কিছু প্ল্যাটফর্ম ওয়্যার ট্রান্সফার এবং ব্যাংক ট্রান্সফার গ্রহণ করে।
স্টেপ 3: অর্ডার প্লেস করুন

আপনার অ্যাকাউন্টে ফান্ড জমা দেওয়ার পর, এখন ক্রিপ্টোকারেন্সি অর্ডার দেওয়ার সময় এসেছে। এটি ওয়েব প্ল্যাটফর্ম বা মোবাইল অ্যাপ থেকে করতে পারেন। আপনি আপনার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি অর্ডার করতে পারবেন। এছাড়া, PayPal, Cash App, এবং Venmo-এর মতো ফিনটেক অ্যাপ ব্যবহার করেও ক্রিপ্টো কেনা বা বিক্রি করা যায়।

কিভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি স্টোর করবেন?

একবার আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনে ফেললে, সেটি সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিপ্টোকারেন্সির সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রধানত দুটি ধরনের ক্রিপ্টো ওয়ালেট ব্যবহার করা হয়: হট ওয়ালেট এবং কোল্ড ওয়ালেট। এগুলির মধ্যে পার্থক্য এবং সুবিধাগুলি বুঝে সঠিক ওয়ালেট বেছে নেয়া অত্যন্ত জরুরি।

হট ওয়ালেট: অনলাইনে ক্রিপ্টোকারেন্সি স্টোর করার সহজ পদ্ধতি

হট ওয়ালেট এমন একটি ওয়ালেট, যা অনলাইন সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন এর মাধ্যমে কাজ করে। এটি ইউজারের ক্রিপ্টোকারেন্সি অনলাইনে স্টোর করতে ব্যবহৃত হয় এবং এর মাধ্যমে আপনি দ্রুত লেনদেন করতে পারেন। হট ওয়ালেট ব্যবহার করতে সাধারণত কোনো চার্জ দিতে হয় না, তবে এটি ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকায় সাইবার আক্রমণ এবং হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি কিছুটা বেশি। তাই, বড় অঙ্কের ক্রিপ্টোকারেন্সি রাখতে হলে এই ওয়ালেটের নিরাপত্তা খেয়াল রাখতে হবে।

কোল্ড ওয়ালেট: অফলাইন সুরক্ষিত স্টোরেজ

অন্যদিকে, কোল্ড ওয়ালেট একটি অফলাইন ডিভাইস বা স্টোরেজ সিস্টেম, যা ফিজিক্যাল ডিভাইস (যেমন হ্যামারড্রাইভ, USB ড্রাইভ বা হার্ডওয়্যার ওয়ালেট) ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি সঞ্চয় করা হয়। কোল্ড ওয়ালেট অত্যন্ত নিরাপদ কারণ এটি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকে না, ফলে হ্যাকিং বা অথেনটিকেশন সমস্যার সম্ভাবনা কম। তবে, এই ওয়ালেটের জন্য পেমেন্ট করতে হয় এবং এটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ের জন্য উপযুক্ত।

ক্রিপ্টো ওয়ালেটের সুরক্ষা ও ব্যবহারিক পরামর্শ

ক্রিপ্টোকারেন্সি সুরক্ষিত রাখতে হট ও কোল্ড ওয়ালেটের মধ্যে সঠিক পছন্দ করা গুরুত্বপূর্ণ।

  • যদি আপনি ছোট মাপের ট্রেডিং বা দৈনিক লেনদেন করতে চান, তবে হট ওয়ালেট আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে।
  • যদি আপনি দীর্ঘমেয়াদে আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি নিরাপদ রাখতে চান, তবে কোল্ড ওয়ালেট ব্যবহার করা উত্তম।

Related posts

জিমেইলের ছবি সংরক্ষণ করা যাবে গুগল ফটোসে

News Desk

বাজারে এলো মটোরোলার জি১০ পাওয়ার

News Desk

রমজানের তিনটি স্টিকার প্রকাশ করলো ইনস্টাগ্রাম

News Desk

Leave a Comment