স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, কিন্তু কখনো জিপিএস (অথবা সহজ উদাহরণ দিলে) গুগল ম্যাপ ব্যবহার করেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গুগল ছাড়াও হিয়ার, অ্যাপল ম্যাপস, উই গো কিংবা মাইক্রোসফট বিং ম্যাপ এর মতো সার্ভিসগুলো ম্যাপিং সেবা দিলেও আমাদের আশেপাশে গুগল ম্যাপস ব্যবহারকারীই বেশি। তাই উদাহরণ হিসেবে গুগল ম্যাপের কথাই বলা হলো।
নতুন কোনো এলাকায় গিয়ে কিছুই চিনছেন না? আপনাকে সাহায্য করার জন্য আছে অনলাইন ম্যাপিং সার্ভিস। চারদিকের পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট গন্তব্যের দূরত্ব, ট্রাফিক জ্যাম এর অবস্থা পর্যন্ত বলে দিচ্ছে গুগল ম্যাপস।
অ্যাপল ম্যাপস, গুগল ম্যাপস কিংবা অন্যান্য ম্যাপিং সার্ভিস অথবা হালের পাঠাও কিংবা উবার, এদের সাফল্য বলেন কিংবা আপনার সুবিধা- যা ই বলেন না কেন; সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে একটা যাদুকরী প্রযুক্তি। আর সেটা হলো গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা সংক্ষেপে জিপিএস (GPS), যা না থাকলে আপনি হয়তো গুগল ম্যাপ পেতেন- কিন্তু আপনি ঠিক কোন স্থানে আছেন তা জানতে পারতেন না। কিংবা পাঠাও/উবার থাকলেও চালক হয়তো আপনাকে খুঁজে পেতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগিয়ে দিতেন।
অনেকের কাছে “গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম” কথাটা অপরিচিত লাগলেও “জিপিএস” বলার পর আর কারো কাছে অপরিচিত লাগছে না আশা করি। কিছু কিছু ফোনে একে “লোকেশন” নামেও লেখা থাকে। আর নতুন পাঠ্যক্রমের কল্যাণে আজকাল মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদেরও জিপিএস কী এটা নিয়ে ধারণা থাকার কথা।
কিন্তু জিপিএস কীভাবে কাজ করে সেটা হয়ত কম মানুষই জানেন। তবে কৌতূহল যে অনেকেরই আছে তা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। আপনি কি কখনো ভেবেছেন যে জিপিএস কিভাবে কাজ করে? আপনার সেই কৌতূহল মেটানোই এই পোস্টের উদ্দেশ্য।
জিপিএস কী?
নামকরণের সার্থকতা বিচার করেন আর না ই বা করেন, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস (GPS) আসলেই একটা চমৎকার সিস্টেম। আরো স্পষ্ট করে বললে এটা হলো পৃথিবীর কক্ষপথে রাখা কমপক্ষে ২৪ টি কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের সাহায্যে তৈরি একটি সিস্টেম। অবশ্য সাথে ব্যাকআপ হিসেবে আরো ৩টি স্যাটেলাইট রাখা আছে– দূর মহাশূন্যে কখন কী হয় বলা তো যায় না! অবশ্য, কোনো কোনো হিসেব মতে জিপিএসে মোট ৩২টি স্যাটেলাইট আছে।
জিপিএসের এই কৃত্রিম উপগ্রহগুলো কিন্তু একসাথে অবস্থান করছে না। বরং পৃথিবীর চারপাশে প্রায় সমান দূরত্বে (প্রায় ১২০০০ মাইল উচ্চতায়) এগুলো এমনভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে যেন সবগুলো স্যাটেলাইট মিলে পুরো পৃথিবীর প্রত্যেকটা অংশ (এমনকি অ্যামাজন বনের কোন গহিন অংশও) সিগন্যাল পাঠিয়ে কাভার করে। অন্তত ৪টি স্যাটেলাইট আপনি আপনার “সাথে” পাবেনই, এমনটি মাথায় রেখেই এই পুরো নেটওয়ার্ক সাজানো হয়েছে।
জিপিএস এর মালিক কে? জিপিএস স্যাটেলাইটগুলো কে পাঠিয়েছে?
বাংলাদেশ গত বছর নিজস্ব (বঙ্গবন্ধু-১) কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটের মালিক হয়েছে। আবার অনেক দেশ আছে যাদের এখন পর্যন্ত কোনো স্যাটেলাইট নেই। তাহলে জিপিএসের জন্য এতোগুলো স্যাটেলাইট মহাশূন্যে কে পাঠিয়েছিলো? এদের মালিক ই বা কে? গুগল, মাইক্রোসফট নাকি নাসা?
আসলে এই জিপিএস স্যাটেলাইটগুলোর মালিক হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার। তাদের প্রতিরক্ষা বিভাগ এই স্যাটেলাইটগুলো মিলিটারিদের ব্যবহারের জন্য ১৯৭০ এর দিকে স্পেসে পাঠিয়েছিল। পরে আশির দশকে তারা এই স্যাটেলাইটগুলো বা পুরো জিপিএস সিস্টেমটিকে সারা পৃথিবীর সব দেশ কিংবা সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। জিপিএস স্যাটেলাইটগুলোর দেখভাল করার জন্য পৃথিবীতে মোট ৩০টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ আছে, যার প্রধানটি কলোরাডো স্প্রিংস এ অবস্থিত।
এত আগের প্রযুক্তি হলেও সাধারণ মানুষ জিপিএস খুব কমই ব্যবহার করতো। তখন শুধু বিমান, জাহাজ, মাছ ধরার জলযান কিংবা এডভেঞ্চারাররা জিপিএস ডিভাইস দিয়ে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতো। কিন্তু স্মার্টফোন আসার পর ফোনের ভিতরেই ঢুকিয়ে দেয়া হলো ছোট্ট জিপিএস চিপ। আর এখন এর সাথে গুগল ম্যাপ কিংবা উবার এর মতো কনসেপ্টগুলোর কম্বিনেশনে জিপিএস এর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে।
জিপিএস কীভাবে কাজ করে?
জিপিএস স্যাটেলাইট সিস্টেমটি মোট ৩২টি উপগ্রহের সমন্বয়ে তৈরি। যা ভূ-পৃষ্ঠ হতে ১৩ হাজার মাইল উপরে অবস্থান করছে এবং পৃথিবীকে ১৪০০০কিমি/ঘন্টা বেগে প্রদক্ষিণ করছে। আর এরই মধ্যে দিনরাত ২৪ ঘন্টাই এই স্যাটেলাইটগুলো আমাদের কিছু সিগন্যাল ট্রান্সমিট করে যাচ্ছে।
আপনার ফোনে যে জিপিএস চিপটি আছে সেটা হচ্ছে জিপিএস সিগন্যাল রিসিভার। এটা জিপিএস স্যাটেলাইট থেকে আগত সিগন্যাল ধরতে পারে। এই রিসিভার চিপ কোনো তথ্য ট্রান্সমিট করে না বা স্যাটেলাইটের নিকট প্রেরণ করেনা।
জিপিএসের স্যাটেলাইটগুলো আসলে দিনে ২৪ ঘন্টা আর সপ্তাহের সাত দিনই এক ধরনের রেডিও সিগন্যাল ট্রান্সমিট করতে থাকে। সেই সিগন্যাল ধরার ক্ষমতা জিপিএস চিপ এর মাঝে আছে যা আপনার স্মার্টফোন কিংবা কার ট্র্যাকারে থাকে। আজকাল অবশ্য জিপিএস চিপ স্মার্টওয়াচ এমনকি চাবির রিংয়েও থাকে।
জিপিএস স্যাটেলাইটগুলোতে এটমিক ক্লক লাগানো থাকে যা দিনের পর দিন ধরে খুবই সূক্ষ্ম সময় দেয়। আর আপনার ফোনে তো একটা ঘড়ি আছেই। স্যাটেলাইটগুলো যে সিগন্যাল পাঠায় তাতে মূলত সিগন্যালটি সেন্ড করার সময়কার সময় থাকে। আপনার ফোনটি প্রাপ্ত সিগন্যালটির উৎপন্ন হওয়ার সময় আর আপনার ফোনটি যখন সেই সিগন্যালটি রিসিভ করেছে তার ব্যবধান থেকে ঐ স্যাটেলাইট আর আপনার ফোনের মধ্যকার প্রকৃত দূরত্ব হিসেব করে ফেলে। এই দূরত্ব থেকেই মূলত জিপিএস আপনার অবস্থান নির্ধারন করে।
আপনার ফোনের জিপিএস চিপটি একই সাথে ৩-৪টি জিপিএস স্যাটেলাইট থেকে নিজের দূরত্ব নির্ণয় করে নেয়। সাধারণত তিনটি জিপিএস স্যাটেলাইটের সিগন্যাল নিয়েই উপরের উদাহরণের মতো আপনার লোকেশন বের করে ফেলে আপনার ফোনটি। এভাবে যত বেশি স্যাটেলাইটের সিগনাল পাবে আপনার লোকেশনও তত বেশি এক্যুরেট পাবেন। খোলা আকাশের নিচে এই সিস্টেম সবচেয়ে ভালো কাজ করে, কারণ স্যাটেলাইট সিগন্যাল পেতে তখন সুবিধা হয়।
জিপিএস এবং ডিজিটাল ম্যাপের সমন্বয়
জিপিএস বের করে আপনার কোঅরডিনেট পয়েন্ট। ল্যাটিচ্যুড আর লঙ্গিচ্যুড (অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ) নামক দুটি বিন্দুর মাধ্যমে এটা আপনার দ্বিমাত্রিক অবস্থান জেনে নেয়। পুরো পৃথিবীর প্রতিটা বিন্দুকেই আপনি কোন না কোন কোঅরডিনেট পয়েন্টে প্রকাশ করতে পারবেন। দুটি জায়গার নাম এক হতে পারে কিন্তু কোঅরডিনেট এক হবেনা। এই জিপিএস কোঅরডিনেট পয়েন্টস আপনার ফোনের গুগল ম্যাপ, বিং ম্যাপ কিংবা অ্যাপল ম্যাপের মতো ডিজিটাল ম্যাপের উপর প্লট করে দেয়ার পর আপনি বুঝতে পারেন যে আপনি কোন জায়গায় অবস্থান করছেন। এই প্লটিংয়ের কাজটা করে ম্যাপিং অ্যাপগুলো, যেমন গুগল ম্যাপস।
জিপিএস কি ইন্টারনেট ছাড়া চলে?
প্রকৃতপক্ষে জিপিএস সিগন্যাল রিসিভ করার জন্য আপনার ফোনে ইন্টারনেট কানেকশন থাকার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। শুধুমাত্র গ্রাফিক্যাল ম্যাপ ডাউনলোড হওয়ার জন্য আপনার ইন্টারনেট দরকার হয়। তাই আপনি যদি গুগল ম্যাপ এর কোনো অংশ অফলাইনে ব্যবহারের জন্য ডাউনলোড করে রাখেন তাহলে পরবর্তিতে ইন্টারনেট ছাড়াই জিপিএস অন করে আপনার নিজের লোকেশন দেখতে পাবেন।
জিপিএস ও অন্যান্য নেভিগেশন সিস্টেম
বিশ্বব্যাপী জিপিএস এখন এক জনপ্রিয়তার নাম কামিয়েছে। আর এর মুল মালিক হলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার। তবে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম/ জিপিএস এর পাশাপাশি আরো কিছু নেভিগেশন স্যাটেলাইট রয়েছে। আর পৃথিবীর এই প্রধান চারটি গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমগুলির মধ্যে জিপিএস একটি। সেগুলো-
- জিপিএস (ইউএস)
- গ্লোনাএস (রাশিয়া)
- গ্যালিলিও (ইইউ)
- বিডিউ (চীন)
এছাড়াও অতিরিক্তভাবে, দুটি আঞ্চলিক ব্যবস্থা রয়েছে – কিউ,জেড,এস,এস (জাপান) এবং আই,আর,এন,এস,এস বা নাভিক (ভারত)।
আমেরিকা যদি জিপিএস বন্ধ করে দেয়?
জিপিএস হলো লোকেশন নির্ণয় করার একটা সিস্টেম মাত্র। জিপিএস ছাড়াও লোকেশন জানার অন্যান্য বিকল্প পদ্ধতি আছে। তবে ওইগুলো বেশি প্রচলিত না, আবার জিপিএসের মতো এতো শক্তিশালীও না।
জিপিএস এর মালিক হলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার। যদিও তারা এটা সারা পৃথিবীর জন্য উন্মুক্ত করে রেখেছে, কিন্তু তারা চাইলেই (হতে পারে যুদ্ধ বিগ্রহের মতো পরিস্থিতিতে) এটা বন্ধ করে দিতে পারে।
তাই রাশিয়া এরকম জিপিএসের মতো সিস্টেম ডেভেলপ করেছে যার নাম দিয়েছে তারা GLONASS। আজকাল স্মার্টফোনের স্পেসিফিকেশনে দেখতে পাবেন Location: A-GPS with GLONASS। এর মানে হচ্ছে ফোনটি আমেরিকার জিপিএস ও রাশিয়ার গ্লোনাস উভয় সিস্টেমেই লোকেশন বের করতে পারে।
এছাড়া চীন বিডিএস নামে ও ইউরোপ গ্যালিলিও নামে তাদের নিজস্ব পজিশনিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে।
আবার মোবাইল ফোন সেবাদাতা কোম্পানিগুলো আপনার ফোন কোন টাওয়ার থেকে কত দূরে আছে তার ওপর ভিত্তি করেও আপনার অবস্থান জেনে নিতে পারে। একই ভাবে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেও অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
জিপিএস এর ভবিষ্যৎ
জিপিএস এর ভবিষ্যতের কথা বলতে গেলে বলতে হবে এর আরো কিছু সম্ভাব্য ফিচারের কথা। আর এরই মধ্যে একটির কথা না বললেই নয় সেটি হলো জিপিএস-৩। জিপিএস-৩ স্যাটেলাইটগুলি প্রায় ২০২৫ এর মধ্যে চালু হবে । তাদের আরও বেশি ট্রান্সমিট শক্তি থাকার কারণে জিপিএস অভ্যর্থনা আরও নির্ভরযোগ্য হতে পারে। এমনকি বাড়ির অভ্যন্তরে এবং ঘন শহরাঞ্চলেও নিজের অবস্থান দেখতে পারবেন। নতুন সফ্টওয়্যারটির বিকাশের সাথে সাথে, ২০২০ এর দশকে জিপিএস গাড়ি ট্র্যাকারগুলি আরো বেশি সমৃদ্ধ হবে বলে সবাই আশাবাদী। জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের ভবিষ্যত ব্যক্তিগত ট্র্যাকিংয়ের পাশাপাশি ব্যবসায়িক ব্যবহারের জন্য আরও সঠিক ও কার্যকর হতে চলেছে যা আমাদের সবার জন্যই এক মহা খুশীর খবর।
জিপিএস এর সুবিধাবলী
গ্রাহকরা যেমন দ্রুত পরিসেবা, দ্রুত সরবরাহের সময়, চালান ট্র্যাকিং এবং কাস্টমাইজড বিতরণ প্রয়োজনীয়তার পুরো পরিসীমা আশা করে চলেছেন জিপিএসও তেমনি এর সুবিধাগুলো দিয়েই যাচ্ছে । পাশাপাশি নেভিগেশনের জন্য একটি পুরো জাহাজের বহরের জন্যও যাত্রাপথকে করেছে আরও সহজ।
আর গ্লোবাল পজিশনিং স্যাটেলাইট (জিপিএস) ট্র্যাকিং সিস্টেমের মতো ক্রমাগত বিকশিত বহর পরিচালন সরঞ্জামগুলির সাথে প্রতিটি ব্যবসায়ের একটি সহজ সমাধান সহজেই উপলব্ধ হয়ে উঠছে। জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের সুবিধা যে কোনও বহর মালিকের কাছে অমূল্য। একটি পুরো বহর ট্র্যাকিং সিস্টেম প্রয়োগ করে পরিচালকরা তাদের পুরো বহরে অভূতপূর্ব মাত্রায় অ্যাক্সেস এবং নিয়ন্ত্রণ পান এবং আপনি যখন কোনও জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করেন তখন প্রতিটি জাহাজ ট্র্যাক করতে সক্ষম হন। আপনি যে সমস্ত সুবিধা আশা করতে পারেন তার কেবলমাত্র শুরু। কেননা আরোও যে সেবাগুলো পাচ্ছেন জিপিএস এর কাছে তা হলো-
- সুরক্ষা উন্নতি : জিপিএস এর মাধ্যমে বহর পরিচালনাকারীরাও জানতে পারবেন যে কোনও যানবাহনের যদি কোনও সহায়তার প্রয়োজন হয় তবে এটি ঠিক কোথায় রয়েছে সেই অবস্থান । এর মাধ্যমে কোনও ভাঙ্গা ইঞ্জিন হোক বা যে কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে, বহর পরিচালনকারীরা তাদের সহায়তা করতে রাস্তার পাশে সহায়তা পাঠাতে পারেন।
- জ্বালানী ব্যয়ের মিনিমাইজ : গ্যাসের মূল্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তবে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেমের অন্যতম সেরা সুবিধা হ’ল কোনও গাড়ির জ্বালানী খরচ পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা। নিরীক্ষণ সফ্টওয়্যারটি গাড়ির আইডলিং, ড্রাইভারের গতি বাড়ানো, কোনও অনুমোদিত ব্যবহার বাদ দিয়ে জ্বালানীতে ব্যয় করা পরিমাণের পরিমাণ হ্রাস করবে এবং এর মাধ্যমে বহর পরিচালকদের ড্রাইভিং রুটগুলি অনুকূল করতে সক্ষম করবে।
- চুরি রিকভারি : যানবাহন চুরির ক্ষেত্রে যে কোনও সংস্থার জন্য একটি জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেমই হতে পারে সেরা সরঞ্জাম। গাড়িটি চুরি হয়েছে কিনা তা সনাক্ত করতে এবং সতর্কতা ও ম্যাপিং ডেটা সহ আপনাকে অবহিত করুন এবং দ্রুত পুনরুদ্ধার সক্ষম করতে তার অবস্থান কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন। এর মাধ্যমে গাড়ী চুরি হলে খুব সহজেই তা খুঁজে পেতে পারবেন।
- নিম্ন অপারেশনাল ব্যয় : জিপিএস ট্র্যাকিং সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে বহর পরিচালকদের কারোর অকার্যকর উদ্দেশ্যে কে বা কেউ অযৌক্তিক উদ্দেশ্যে কোনও গাড়ি ব্যবহার করছে তা দেখার অনুমতি দেয়। এটি কেবলমাত্র রাস্তার সমস্যাগুলিতেই সমাধান করবে না পাশাপাশি চালকরা কাজ করেছেন কি না তার বিষয়ে সঠিক পাঠ্য সরবরাহ করে।
- উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি : ড্রাইভারদের কাজ ট্র্যাক করার ক্ষমতার কারণে এটি বহর পরিচালকদের কোনও কর্মচারীর সময়ের আরও ভাল ব্যবহার করতে দেয়। জিপিএস ট্র্যাকিং সফ্টওয়্যারটি আপনার ড্রাইভারগুলি সর্বদা কোথায় রয়েছে তা দেখায় এবং সেই সময়ে তারা কী কাজ করছে তা রেকর্ড করে। জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের সুবিধাগুলি অফুরন্ত। কর্মীরা কীভাবে সম্পাদন করছে তার একটি আরও ভাল উপলব্ধি পান এবং একটি বিস্তৃত বহর ট্র্যাকিং সিস্টেমের সাহায্যে কাজের চাপগুলি পরিচালনা করার আরও ভাল উপায়গুলি পান। কেবলমাত্র আপনি সময় এবং অর্থ সাশ্রয় করবেন না, তবে আপনার ড্রাইভারগুলি নিরাপদ হবে এবং তাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনার জন্য সম্পাদন করবে। এর সবগুলিই একটি মসৃণ ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ এবং আপনার গ্রাহকের প্রত্যেককে পছন্দ করবে উন্নত গ্রাহক পরিসেবা যুক্ত করে।
- নেভিগেশন : সম্ভবত জিপিএসের সবচেয়ে সাধারণ ব্যবহার নেভিগেশন সিস্টেমগুলিতে। মানচিত্র প্রযুক্তির সাথে একত্রিত হয়ে এটি সড়ক যানবাহন এবং নৌকোগুলির একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে ওঠে। জিপিএস কোনও ডিভাইসের অবস্থান যথার্থতার সাথে চিহ্নিত করতে পারে এবং স্থানাঙ্কগুলির সাথে তুলনা করে, পরিসংখ্যানগুলি ডিভাইসগুলির গতি এবং গতির দিক নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হতে পারে। এই তথ্যটি রিয়েল টাইমে পয়েন্ট এ থেকে পয়েন্ট বি পর্যন্ত ধাপে ধাপে নির্দেশাবলী সরবরাহ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- পারিবারিক সুরক্ষা : জিপিএস ট্র্যাকিং পিতামাতারা তাদের বাচ্চাদের ট্যাব রাখতে ব্যবহার করতে পারেন। স্বামী বা স্ত্রীরাও তাদের অংশীদারদের নজর রাখতে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে। শ্রমিকরা এবং অন্যান্যরাও ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য জিপিএস ট্র্যাকিং ব্যবহার করতে পারেন, যাতে কোনও জরুরি অবস্থা থাকলে তাদের অবস্থানটি জানা যায়।
- সামরিক ব্যবহার : নেভিগেশন এবং অন্যান্য সাধারণ ব্যবহারে কার্যকর হওয়ার পাশাপাশি, গাইডেড মিসাইলগুলির জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করার সময় সামরিক বাহিনী জিপিএস নিয়োগ করে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে নির্দিষ্ট স্থানাঙ্কের সেট দেওয়ার মাধ্যমে জিপিএস নির্ভুলতার উন্নতি করে, এবং যথাযথ ক্ষতিটিকে হ্রাসের মাধ্যমে হ্রাস করে।
- নমনীয় রুট বিকল্পসমূহ : জিপিএস আপনাকে লাইভ টাইমে রুট পছন্দ দেয়, নমনীয়তা সক্ষম করে। আপনি আপনার বিশেষ প্রয়োজন বা ইচ্ছা অনুযায়ী কোনও রুট বেছে নিতে পারেন। আপনি যদি কোনও ভুল পালা নেন, জিপিএস ব্যবহার করে একটি নতুন রুট গণনা করা যায়। যদি আপনার রুট কোনও ঘটনা দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে যায় তবে জিপিএস একটি নতুন পাথওয়ে গণনা করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- সমীক্ষা ক্ষেত্রে : নির্মাণ বা উন্নয়নের আগে জমি জরিপ হয়। সময়ের সাথে সাথে, জিপিএস ধীরে ধীরে ঐতিহ্যবাহী জমি জরিপ কৌশলগুলি প্রতিস্থাপন করেছে, মূলত এটি সস্তা, দ্রুত এবং সাধারণত আরও সঠিক হয় এটি বেশিরভাগ সময় দিনের চেয়ে জিপিএস সহ কয়েক ঘন্টা সময় নেয়।
- আপডেট এবং রক্ষণাবেক্ষণ : মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ কর্তৃক জিপিএস সিস্টেমের জন্য অর্থ প্রদান করা, আপডেট করা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, যাতে এটি সর্বদা নির্ভুল থাকে। বেশিরভাগ সফ্টওয়্যার, অ্যাপস এবং ডিভাইস যা জিপিএস ব্যবহার করে সেগুলি নিয়মিত আপডেট করা হয়, সুতরাং একটি ঐতিহ্যগত মুদ্রিত মানচিত্রের বিপরীতে যা কিছু সময়ের পরে অতিক্রান্ত হয়, জিপিএস এবং সম্পর্কিত প্রযুক্তিতে তা সাধারণত খুব নির্ভুল থাকে।
জিপিএস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি
জিপিএস ও জিপিএস যেভাবে কাজ করে এ সম্পর্কে আমাদের একটি ধারণা এই মূহুর্তে হয়ে গেছে। তবে এর বাইরেও জিপিএস এর যে আরো কিছু জিনিস রয়েছে যা না জানলেই নয় তা হলো এর সম্পর্কিত কিছু তথ্যাবলি। যেগুলো হলো-
- কক্ষপথে উপগ্রহ : ৩২
- মোট উপগ্রহ : ৩৩
- নির্ভুলতা : ৫০০–৩০সেমি (১৬–০.৯৮ফুট)
- কক্ষপথের উচ্চতা : ২০,১৮০ কিলোমিটার (১২,৫৪০মাইল)
- অপারেটর : মার্কিন স্পেস ফোর্স
- প্রথম লঞ্চ : ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮ – ৪২ বছর আগে মোট লঞ্চ ৭২
জিপিএস স্যাটেলাইট উচ্চতা : জিপিএস উপগ্রহগুলি প্রায় ১২,৫৫০ মাইল উচ্চতায় মধ্যম পৃথিবীর কক্ষপথে উড়ে যায়। প্রতিটি উপগ্রহ দিনে দুবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে।
জিপিএস কম্পাঙ্ক মাত্রা: প্রতিটি জিপিএস উপগ্রহ দুটি ফ্রিকোয়েন্সি, এল ১(১৫৭৫.৪২ মেগাহার্টজ) এবং এল ২(১২২৭.৬০ মেগাহার্টজ) তে ডেটা সংক্রমণ করে। উপগ্রহের উপরে থাকা পারমাণবিক ঘড়িগুলি ১০.২৩মেগাহার্টজ মৌলিক এল-ব্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সি উত্পাদন করে। এল ১ এবং এল ২ ক্যারিয়ার ফ্রিকোয়েন্সিগুলি যথাক্রমে ১৫৪ এবং ১২০ দ্বারা মৌলিক ফ্রিকোয়েন্সি গুণ করে উৎপন্ন হয়।
- জিপিএস এর বিভাগ : গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন ইউটিলিটি যা ব্যবহারকারীদের পজিশনিং, নেভিগেশন এর মতো পরিষেবাগুলি সরবরাহ করে থাকে। আর এই সিস্টেমে মূলত তিনটি বিভাগ রয়েছে। যা হলো-
- স্পেস সেগমেন্ট
- নিয়ন্ত্রণ বিভাগ
- ব্যবহারকারী বিভাগ।
সূত্র: বাংলাটেক 24, বিশদ