Image default
প্রযুক্তি

দেজা ভ্যু : অচেনা ঘটনা পূর্বে চেনার অদ্ভুত অনুভূতি

এই দুনিয়াতে প্রতিনিয়ত অবাক করা কিছু না কিছু জিনিস ঘটে চলেছে। কখনো আমরা তা প্রত্যক্ষভাবে চোখে দেখতে পাই, কখনো তা মস্তিষ্ক বা আমাদের ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করি। আমরা অনেক সময় অনেক জায়গায় ঘুরতে যাই। দূরে বা কাছে যেখানেই হোক, অনেক সময় এটা হয় যে কোন অচেনা জায়গায় গেলে একটা অদ্ভুত অনুভুতি মনের মধ্যে আসতে থাকে। যেন মনে হয় এই অচেনা জায়গা নামে অচেনা হলেও কোথাও যেন এই জায়গা দেখেছি বা এই জায়গায় আগে কখনো এসেছি। একটা টান অনুভব করতে পারি। বা কারো সাথে কোন কথোপকথন যা বলতে বলতে হঠাৎ করে যেন মনে হয় আগে যেন ঠিক এই কথোপকথনে আমি করেছি। এই ঘটনাকে দেজা ভ্যু বলে অভিহিত করা হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে দুনিয়ার প্রায় ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ কম বেশি এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়। ফরাসি ভাষায় দেজা ভ্যু কথার অর্থ ” আগেই দেখা বা পূর্ব পরিচিত”। এখন থেকেই এই কথাটি প্রচলিত হয়েছে।

হিউম্যান ব্রেইন কম্পিউটারের মত এক্সাক্টলি সব ইনফো সেভ করে রাখতে পারেনা । মেমোরির একটা অংশ ভালভাবে সেভ করে, আরেকটা অংশ অস্পষ্ট হয় বা মুছে যায় । কোনো একটা বিশেষ স্মৃতির কিছু অংশ দেখলে আমাদের ব্রেইনের টেম্পোরাল লোব উত্তেজিত হয়ে পড়ে । যদি পুরা মেমোরিটা সে রিকল করতে পারে, তখন কোন সমস্যা নেই । কিন্তু মেমোরির অর্ধেকটা রিকল করতে পারছে, বাকি অর্ধেক পারছেনা – এই রকম সিচুয়েশনে ব্রেইন বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এই সিচুয়েশনকে দেজা ভ্যু বলে । (এক্সাম্পল–রিক্সায় করে লাল সালোয়ার কামিজ পরা মেয়ে দেখলে আপনার মনে পড়ছে যে, এই মেয়েটাকে আমি দেখেছিলাম আগেই, কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে পড়ছেনা, এই সিচুয়েশনটা দেজা ভ্যু)

মনের অগোচরে অনেক সময় আমরা অনেক কিছুই উপলদ্ধি করি কিন্তু তা কাউকে বলতে পারিনা। হতে পারে চক্ষু লজ্জা বা হতে পারে অন্য কোনো কারনে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো এই Déjà vu ! একে “পারামনেসিয়া” ও বলা হয়ে থাকে। গ্রিক (παρα “para” অর্থ নিকটে আর μνήμη “mēmē”, অর্থ “স্মৃতি”) অথবা প্রোমনেসিয় হল একটি নিশ্চিত অনুভবের অভিজ্ঞতা যা একজন ইতঃপূর্বে এ পরিস্থিতি সম্মুখীন হয়েছে অথবা স্বচক্ষে দেখেছে (একজন ব্যক্তি অনুভব করে যে ঘটনাটি ইতিপূর্বে অথবা সাম্প্রতিক ঘটেছে), যদিও পূর্ববর্তী পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার সঠিক ঘটনাটির সম্পর্কে অনিশ্চত। একজন ফরাসী মানসিক গবেষক “এমিল বোইরেক” (১৮৫১–১৯১৭), তার “L’Avenir des sciences psychiques” (লাভনির ডেস সন্স সিসিক বা মানসিক বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ) নামক বইতে একটি বিস্তৃত প্রবন্ধ লিখেছিল যেখানে এই শব্দটি ব্যবহার করেন, তখন তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালযয়ের ছাত্র ছিলেন। দেজা ভ্যু ব্যাপারটি সচরাচর ঘটে থাকে। সাউদার্ন মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী অ্যালান এস. ব্রাউন ২০০৩ খৃস্টাব্দের একটি অনুসন্ধানে দেখেছেন যে, ৬০ শতাংশ মানুষের জীবনে একবার হলেও দেজা ভ্যু জাতীয় অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেজা ভ্যু আসলে কী?

দেজা ভ্যু প্রায় প্রতিটি মানুষের জীবনেই কমপক্ষে একবার করে ঘটে থাকা একটি ঘটনা। কোথাও গিয়ে মনে হল যে এমন কোথাও আপনি আগেও এসেছেন, কিংবা কোন একটি ঘটনা দেখার পর মনে হল ঠিক এমনটাই যেন এর আগেও দেখেছেন আপনি। অথচ বাস্তবে সেটি সত্যি নয়। মোটেও এই স্থানে আসেননি আপনি, এমন কোন ঘটনার মুখোমুখিও হননি। তাহলে এই যে মনে হওয়া? এই যে বিচ্ছিন্ন স্মৃতি? সেটা কী? এটাকেই বলা হয় দেজা ভ্যু। কিন্তু কেন হয় এমনটা? ঠিকঠাক কারণ না জানতে পারলেও এখন অব্দি অনেকেই চেষ্টা করেছেন এর পেছনে থাকা রহস্যকে খুঁজে বের করতে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মস্তিষ্ক ও অনুভূতির মিশ্রণ-

বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের অনুভূতি শক্তি একটার সাথে একটা জড়িত। আর এই অনুভূতি শক্তির সাথে জড়িত আমাদের মস্তিষ্কও। তাই যখন আমাদের ইন্দ্রিয় কোন একটা অনুভূতির মুখোমুখি হয় তখন সেটা সেই অনুভূতির সাথে জড়িত পুরোন সব স্মৃতিকে জাগ্রত করে তোলে মস্তিষ্কে। এই যেমন- কোন একটা গন্ধ, সেটা নাকে লাগার সাথে সাথে আপনি অনেক আগে ঠিক কোথায় এই একই গন্ধ পেয়েছিলেন এবং সেটার সময় কি হয়েছিল সেটার ওপর নির্ভর করে আপনার অবচেতন মন একটা ছবি এঁকে দেয় মস্তিষ্কে। আর সেই ছবিকে মনে রেখেই সামনের পরিস্থিতির সাথে মেলানোর চেষ্টা করে আপনার মস্তিষ্ক। সৃষ্টি হয় দেজা ভ্যু। মস্তিষ্কের এ মিলিয়ে নেয়ার ঘটনা অনেক যৌক্তিক।

ধরণ :

ঘটনা প্রকারভেদ অনুযায়ী এই মোটামুটি চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

১. Attentional : মানে ধরে নেওয়া যাক আপনি একটা কাজ করতে গেলেন, ঠিক সেই সময় অন্য কোনো আওয়াজে সেদিকে আপনার দৃষ্টি গেল। পরবর্তীতে যখন আপনি দরজা খুলে ঢুকতে গেলেন ঘরে, অনেক সময় পূর্ববর্তী ঘটনাকে মনে হবে আগেই ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা।

২. Memory : এক্ষেত্রে অনেক সময় কোনো ঘটনা বা কোনো চোখে দেখা জিনিসের একটা অংশ বিশেষ খুব চেনা লাগে। কিন্তু কোনোভাবেই তার শুরু বা পুরো অংশ বা ঘটনা মনে করা যায় না।

৩. Dual processing : অনেক সময় হয় যে মিল খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু একই সাথে কোথায় কিসের সাথে মিল তার কোনো ধারণাই পাওয়া যায়না। আবার অনেক সময় যে ভাবনা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, তার সাথে আমাদের মস্তিষ্কের হয় তো কোনো যোগাযোগ স্থাপন করা কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।

৪. Neurological : স্নায়ুকোষের কর্মহীনতার কারণে আমাদের ইন্দ্রিয় গুলোর অসংলগ্ন প্রতিক্রিয়া অনেক সময় আমরা অনুভব করে থাকি।

দেজা ভ্যু কেন হয়?

হ্যাঁ এটা ঠিক যে এই ঘটনার সেই অর্থে কোনো ধরাবাঁধা সময় নেই। কখন কোন সময় ঘটবে বা আদৌ ঘটবে কিনা তা আগে থেকে বোঝা যায় না। তবে স্নায়ু চিকিৎসক, মনোবিদ, এবং বিজ্ঞানীরা ঘটনার ধরন দেখে বুঝবার চেষ্টা করেছেন যে কখন এই ধরনের অনুভূতি কেউ পেতে পারে। বা বলা ভালো কখন এবং কেন এই ঘটনা কেউ অনুভূত করছে তার সহজ সরল ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বা ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করেছেন।

১. স্বপ্নের খেলা

দেজা ভ্যু হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রথম যে ধারণার কথা আমি বলবো সেটি স্বপ্ন সম্পর্কিত। কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, মানুষের মনে যে জিনিসটি নিয়ে সন্দেহ জাগে যে সে সেটি আগে দেখেছে অর্থাৎ দেজা ভ্যু হয় যে জিনিসটি নিয়ে সেটি সে আগেই স্বপ্নে দেখে। কিন্তু মানুষ খুব কম স্বপ্নই মনে রাখতে পারে। আর তাই সকালে উঠে সেই স্বপ্নটি আর তার মনে থাকে না কিন্তু অবচেতন মনে ঠিকই সেই স্বপ্নটি সংরক্ষিত থাকে। পরে যখন সে বাস্তবে সেই ঘটনা বা জিনিসটির সম্মুখীন হয় তখন তার অবচেতন মন সেই স্বপ্নে দেখা স্মৃতিটিকে মনে করিয়ে দেয়। তখনই তার মনে হয় যে ওই জিনিসটি সে আগেই দেখেছে বা ওই ঘটনা আগেও ঘটেছে। আমার যখন প্রথম দেজা ভ্যু হয় তখনো আমার এমনই মনে হয়েছিল। আমার এমন একটি জায়গা দেখে মনে হয়েছিল যে আমি এখানে আগেও এসেছি যেখানে তার আগে আমার যাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে জায়গাটি আমার এত পরিচিত মনে হচ্ছে কেন। পরে আমার বারবার মনে হচ্ছিল যে আমি হয়তো স্বপ্নে দেখেছি জায়গাটি।

২. স্মৃতির অন্তরালে

এখন যে ব্যাখ্যার কথা বলব সেটি স্মৃতির সাথে সম্পর্কিত। এই ধারণায় বলা হয় যে, যেই জিনিস বা স্থান বা ঘটনা সম্পর্কে দেজা ভ্যু হয় সেই জিনিস বা স্থান বা ঘটনা পূর্বেও মানুষ দেখে। কিন্তু অনেক আগে তা দেখার কারণে তা স্মৃতিতে পুরোপুরিভাবে থাকে না। কিন্তু অবচেতন মনে বা স্মৃতিতে তার একটা ছাপ থাকে।
এর ফলে যখন সে পুনরায় সেই জিনিস বা স্থান বা ঘটনার মুখোমুখি হয় তখন স্মৃতির গভীর থেকে ওই পুরনো স্মৃতিও তার সামনে চলে আসে। তখন তার মনে হয় যে এটি আগেও ঘটেছে বা সে এটি আগেও দেখেছে।
এটি একটি ভালো ব্যাখ্যা হতে পারে কিন্তু খুব বেশি শারীরিক নয়। কারণ দেজা ভ্যুর অভিজ্ঞতা যাদের হয়েছে তাদের মধ্য বেশিরভাগই জোর দিয়ে বলে পূর্বে ওই জিনিস বা জায়গা বা ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।

৩. সব দোষ মস্তিষ্কের

এবারের ব্যাখ্যাটি মস্তিষ্কের উপর নির্ভর করে দেয়া। আমরা সবাই জানি যে, মস্তিষ্কের এক এক অংশ এক এক কাজ করে থাকে। দেখার কাজটি মস্তিষ্কের যেই অংশটি করে থাকে সেটি মস্তিষ্কের পেছনে অবস্থিত। এটি কোন কিছু দেখে এবং সেটিকে ব্যাখ্যা করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে যার ফলে আমরা বুঝতে পারি আমরা কী দেখছি।
অনেক বিশেষজ্ঞ দেজা ভ্যু কে মানসিক রোগের সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন।

কোন কিছু দেখে সেটিকে ব্যাখ্যা করতে মস্তিষ্কের এই অংশটির খুব কম সময় লাগে, সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যেই এই কাজটি সম্পন্ন হয়ে যায়। কিন্তু যদি কোন কারণে কোন কিছু দেখা আর ব্যাখ্যা করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করার এই ক্ষুদ্র সময়ে আমাদের মন সামান্য সময়ের জন্য বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় তাহলে দেজা ভ্যু হয়। এর কারণ হচ্ছে একবার চোখ জিনিসটি বা ঘটনাটি দেখে, তারপর মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য। পরে যখন চোখ আবার সেই জিনিসটি বা ঘটনাটি দেখে এবং তা ব্যাখ্যা করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে তখন একটু আগে দেখার ঘটনাটাও মনে পড়ে যায়। তখন মনে হয় এটি আমি আগেও দেখেছি। কিন্তু সে আগে যে একটু আগেই তা মাথায় আসে না। ফলে মনে হয় অনেক আগের ঘটনা এটি।

এই ব্যাখ্যাটি মোটামুটি চলনসই বলা চলে। এগুলো ছাড়াও আরো কিছু ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে দেজা ভ্যু সম্পর্কে। অনেকেই আবার অতিপ্রাকৃত ঘটনার সাথে দেজা ভ্যুর যোগসূত্র আছে বলে মনে করেন।

দেজা ভ্যু কখন হয়?

১. বেড়াতে গেলে ‘দেজা ভ্যু’ হয়

সাধারণত কোন জায়গায় বেড়াতে গেলেই আমরা ‘দেজা ভ্যু’র মতো অনুভূতির মুখোমুখি হই। ‘দেজা ভ্যু গবেষক ক্রিস মোলিনের মতে, যখন আমরা যখন একেবারে নতুন কোন জায়গা বা অভিনব কোন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই, তখনই এই অনুভূতিটা সবচেয়ে প্রবল হয়।

 বেড়াতে গেলে 'দেজা ভ্যু' হয়
এই জায়গাটা কি আমি আগেও দেখেছি ; ছবি : quoracdn

তার মতে, একেবারে অপরিচিত জায়গায় গিয়ে যখন আমাদের জায়গাটা চেনা বলে মনে হতে থাকে, আবার এটাও জানি যে সেখানে আমরা আগে কখনো যাই নি, তখন এই দুয়ের মধ্যে একটা বিরাট দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যত বেশি ভ্রমণ করে, তত বেশি ‘দেজা ভ্যু’র অনুভূতি হয়।

২. তরুণ বয়সীদের বেশি দেজা ভ্যু হয়

যখন আপনার বয়স কম থাকে, তখন আপনার অনেক বেশি ঘন ঘন দেজা ভ্যু হয়। তবে সাধারণত মাসে একবারের বেশি নয়। যখন আপনার বয়স যখন ৪০ বা ৫০ এর কোঠায়, তখন দেজা ভ্যুর এই হার কমে আসে।

তরুণ বয়সীদের বেশি দেজা ভ্যু হয়
এর আগে কতবার এই পাহাড়ের চূড়াউ উঠেছেন? ; ছবি : GETTY IMAGES

আর বয়স ৬০ পেরিয়ে গেলে আপনার যদি বছরেও একবার দেজাভু হয়, তাহলে আপনাকে সৌভাগ্যবানই বলতে হবে।

৩. অনেক মানুষের দিনভর দেজা ভ্যু হয়

ডেজা ভু হতে পারে মজার অভিজ্ঞতা, কিন্তু খুব দীর্ঘ সময় ধরে যদি এই অভিজ্ঞতা হয় সেটা আবার যন্ত্রণাদায়ক বেশিরভাগ মানুষের জন্য এই দেজা ভ্যু হচ্ছে এক বিরল এবং খুবই ক্ষণস্থায়ী একটি মূহুর্তের অভিজ্ঞতা। তবে এমন বিরল ঘটনাও আছে, যেখানে কোন কোন মানুষের জন্য এই দেজা ভ্যু এক মারাত্মক সমস্যা। যুক্তরাজ্যের মানচেস্টারের বাসিন্দা লিসা সেরকম একজন।

অনেক মানুষের দিনভর দেজা ভ্যু হয়
খুব দীর্ঘ সময় ধরে যদি এই অভিজ্ঞতা হয় সেটা আবার যন্ত্রণাদায়ক ; ছবি : GETTY IMAGES

লিসার বয়স যখন ২২ বছর, তখন থেকে তিনি দীর্ঘসময়ের জন্য দেজা ভ্যুর মুখোমুখি হতে শুরু করেন। তার দেজা ভ্যু হতো সারাদিন ধরে। “সকালে ঘুম ভাঙ্গার পরই আমার কোন কোন দিন দেজা ভ্যু শুরু হতো, আমার মনে হতো যা কিছু ঘটছে তার সবই যেন আগেও ঘটেছে।” লিসা আরও ঘন ঘন দেজা ভ্যুর মুখোমুখি হতে শুরু করেন। তার সমস্ত ইন্দ্রিয়ের ওপর এর প্রভাব পড়ে। লিসা পরে জানতে পারেন তার এই ঘন ঘন দেজা ভ্যুর সঙ্গে সম্পর্ক আছে বিরল এক ধরণের ‘এপিলেপসি’ বা মৃগি রোগের। এটিকে বলা হয় ‘টেম্পোরাল লোব এপিলেপসি’। পরে অবশ্য তিনি এর চিকিৎসা নিতে পেরেছিলেন।

দেজা ভ্যু শব্দটি যিনি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন

একজন প্যারা-সাইকোলজিস্ট এমিল বইরাচ ‘দেজা ভ্যু’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। ১৮৭৬ সালে তিনি একটি চিঠি লেখেন ফরাসী জার্নাল ‘ফিলোসফিকে।’ সেখানে তিনি এই ‘আগে যেন দেখেছি’র অনুভূতি বর্ণনা করেছিলেন ‘দেজা ভ্যু’ শব্দটি দিয়ে। বহুদিন পর্যন্ত ‘দেজা ভ্যু’কে একটি প্যারা-নরমাল বা ‘অস্বাভাবিক’ অভিজ্ঞতা বলে মনে করা হতো।

দেজা ভ্যু হওয়া কি খারাপ?

অনেক বিশেষজ্ঞ দেজা ভ্যু কে মানসিক রোগের সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী দেজা ভ্যু তাদেরই হয় যাদের কিছুটা মানসিক সমস্যা আছে। কিন্তু এর পক্ষে তারা কোন প্রমাণ দেখাতে পারেন নি। পৃথিবীর প্রায় ৬০%-৭০% মানুষ দেজা ভ্যুর মুখোমুখি হয়। তাদের বেশিরভাগেরই কোন রকম মানসিক সমস্যা নেই।

দেজা ভ্যু নিয়ে অনেক আলোচনা করলাম।চলুন এবার দেজা ভু এর বিপরীত নিয়ে একটু দেখে আসা যাক –

জেমাইস ভূ আরেকটি রহস্য। এটাকে দেজা ভূ র বিপরীত বলা হয়। এই অনুভূতির কারনে কোন মানুষ অনেক পরিচিত জিনিস চিনতে পারে না। তার কাছে মনে হয় যেন সে এটা প্রথমবার দেখছে। কোন কিছুই সে চিনতে পারে না। ‘জেমাইশ ভূ’ শব্দের অর্থ যা ‘কখন দেখা হয়নি। ‘এটি একটি ফ্রেঞ্চ শব্দ। যেকোন কিছুর জন্য এটি হতে পারে,যেকোন সময় হতে পারে। একটি অতি পরিচিত শব্দ ,একটি অতি পরিচিত মুখ দেখেও মনে হতে পারে যে জীবনেও এটি দেখা হয় নি। ভূজা দে আরেকটি রহস্য এটিও জেমাইস ভূ এর মতই।

সূত্র : বিবিসি, ছারপোকা, বোল্ডস্কাই

Related posts

কম্পিউটারের উপর এখনই ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ না করার আহ্বান

News Desk

প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে কুড়িগ্রামে বই বিতরণ উৎসব পালন

News Desk

শুক্র গ্রহে অভিযান চালাবে নাসা

News Desk

Leave a Comment