আবদ্ধ ডোম তৈরী করে তাতে নাসা কর্তৃক পরিচালিত মঙ্গলে জীবনযাপনের অনুরূপ পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে চলা পরীক্ষা অবশেষে শেষ হলো। হাওয়াইতে চলা এই পরীক্ষায় ছয়জন স্বেচ্ছাসেবী গত একবছর একটি বদ্ধ গুম্বজ আকৃতির ঘরে অবস্থান করেন। লাল গ্রহটির সাথে মিল রেখে HI-SEAS দলটি ৩৬৫ দিন মোয়ানা লোয়ার বিগ আইল্যান্ডের অনুর্বর ঢালে পাথুরে, পাতলা ভুখন্ডের মাঝে একটি জিওডেসিক ঘরে বসবাস করেন। এই একবছর ধরে দলের সদস্যগণ নভোযারীদের জন্য তৈরি বিশেষ পোশাক পরিধান করে ছিলেন এবং বাইরের পরিবেশের সাথে শুধুমাত্র ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে সক্ষম হতেন। তবে এই ই-মেইল আদান প্রদান করতে ২০ মিনিট সময় লাগতো কারণ মূলত মঙ্গল এবং পৃথিবীর মাঝে তথ্য আদান প্রদানে এপরিমাণ সময় লাগে।
এই পরীক্ষাটি নাসার অর্থায়নে এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘতম পরীক্ষা। HI-SEAS এর পরিচালিত এই ধারাবাহিক কার্যক্রমে বিজ্ঞানীর ধারণা নেয়ার চেষ্টা করেছেন যে, একটা লম্বা সময় ধরে চলা মঙ্গল অভিযানে নভোচারীরা বাস্তব জীবনে কেমন পরীস্থিতির সম্মুখীন হবে কিভাবে তা সহ্য করবেন এবং তা কিভাবে মানিয়ে নেবেন।
যদিও পূর্বে বিজ্ঞানীরা আট মাস সময় ধরে চলা আবদ্ধ জায়গায় অবস্থান করে দেখেছেন তবে এবার সম্পূর্ণ এক বছর অবস্থানে নাসা নতুন এক রেকর্ড তৈরী করে ফেলেছে। কিন্তু ইরোপ ও চীনের মার্স-500 দলটি ২০০৭ এবং ২০১১ সালে অনুরূপ মঙ্গলের পরিবেশের মতো পরিচালিত একটি পরীক্ষায় ৫২০ দিনের মতো অবস্থান করেছিলো।
HI-SEAS- দলের সদস্যদের সুর সবাইকে আশাবাদী করেছে। তাদের ভাষ্য মতে আবদ্ধ যায়গায় দীর্ঘদিন অবস্থান করার ফলে মানুষিক এবং প্রযুক্তিগত কঠোরতা ভীবষ্যতে লাল গ্রহের ভ্রমণে তেমন কোন সমস্যার সৃষ্টি করবে না। দলের একজন সদস্য এবং ফরাসি এষ্ট্রোবায়োলজিষ্ট Cyprien Verseux বলেন, “আমার ব্যক্তিগত ধারণা যদি আপনাদের বলি তবে বলব, মঙ্গল যাত্রা অদূর ভবিষ্যতে সত্যি হতে যাচ্ছে এবং আমি এও মনে করি শারীরিক এবং প্রযুক্তিগত বাধা অতিক্রম করা যাবে।”
Cyprien Verseux ছাড়াও দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন একজন পদার্থবিদ, প্রকৌশলী, স্নায়ুবিজ্ঞানী, স্থপতি ও মৃত্তিকা বিজ্ঞানী।
ঘরটি মাত্র ১১ বাই ৬ মিটার যায়গায় তৈরী করা হয়েছিল যার মাঝে বসবাস করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ছিল। দলের প্রধান কারমেল জনস্টোন বলেন, “এটা এমন একটা যায়গায় বসবাস করার মতো যেখানেইচ্ছে হলেও আপনি আপনার রুমমেট থেকে কখনোও আলাদা হতে পারবেন না। তাই আমি মনেকরি অনেকেই অবস্থাটা বুঝতে সক্ষম হবেন। যদি তারপরেও আপনি না বুঝতে পারেন তবে কল্পনা করুণ আপনি কারোও কাছ থেকে আলাদা হতে পারছেন না।”
সদস্যরা বছর জুরে জীবনধারণের জন্য সাথে আনতে পেরেছিলেন শুধুমাত্র গুড়া খাবার এবং টিনজাত টুনা মাছ। গিনিপিগ সদৃশ খাধ্য সরবরাহ করার মাধ্যমে আমরা বুঝতে সক্ষম হয়েছি আবদ্ধ একটি যায়গায় দীর্ঘদিন বসবাস করার ফলে মানুষিকভাবে কেমন পার্শ্বপতিক্রিয়া হতে পারে। এছাড়াও গবেষকরা সেখানে কিছু পরীক্ষা চালিয়েছেন যেমন, কঠিন যায়গা থেকে কিভাবে পানি তোলা যায়। যা কিনা মঙ্গলে জীবন মৃত্যুর মাঝে পার্থক্য তৈরী করে দিতে পারে।
জার্মানীর গবেষক ক্রিষ্টিয়ান হেইনিকি বলেন, “মনে হচ্ছে মতো শুষ্ক মাটির যায়গা থেকে পানি তোলা সম্ভব হবে । এটা ইঙ্গিত করে যে মঙ্গল গ্রহে সামান্য গ্রিনহাউজ স্থাপন করে পানি পান করা সম্ভব হবে এবং এটা কর্যকরী হবে।”
তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি ছিল একঘেয়মি কাটানো। দলের সদস্যরা নিজেদেরকে বিনোদিত করার জন্য গিটার বাজাতেন কিংবা সালসা নাচ শেখার চেষ্টা করতেন। Verseux বলেন, “আমরা সবসময় এক যায়গায়ই ছিলাম এবং একই মানুষদের সাথে থাকতাম।” তিনি ২০১৭ এবং ২০১৮ তে শুরু হওয়া দীর্ঘ মেয়াদী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকদের “বই নেয়ার” পরামর্শ দেন।
দলটি আপাতত বাড়িতে ফিরেছে এবং গত ১২ মাসের বিচ্ছিন্নতায় তাঁদের মানষিক অবস্থা পর্যবেক্ষন করে সামনের মাসগুলোতে প্রকাশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে চুক্তির সবচেয়ে মজার অংশ হচ্ছে, যেহেতু নাসা সাম্প্রতিক গবেষণার সকল অর্থ সরবরাহ করছেন তাই আমাদের বেশি অপেক্ষা কররতে হবেনা প্রায় শূণ্যের মতো স্থানে এই দীর্ঘ সময় কি ঘটেছে তা জানার জন্য।