Image default
প্রযুক্তি

রুট কি ও কেন, সুবিধা ও অসুবিধা

রুট শব্দটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা প্রায়ই শুনে থাকবেন। অ্যান্ড্রয়েড কথনে তো বটেই, অ্যান্ড্রয়েড বিষয়ক অন্যান্য সাইট, ফোরাম, এমনকি গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপ্লিকেশনও চোখে পড়বে যেগুলো ব্যবহার করতে হলে আপনার ফোন বা ট্যাবলেট রুট করা থাকতে হয়। প্রাথমিকভাবে অনেক অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারীরাই রুট কী এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানেন না। এক সময় এন্ড্রয়েড ফোন রুট করা অনেক কঠিন একটা ব্যাপার ছিল কিন্তু এখন রুট করাটা অনেক সহজতর ব্যাপার হয়েগেছে। রুট করার মাধ্যমে ডিভাইসের পরিপূর্ণ পারফরম্যান্স পাওয়া সম্ভব, এমন কথা শুনে অনেকেই রুট করতে আগ্রহী হয়ে পড়েন। কিন্তু রুট করার পর দেখা যায় তাদের ডিভাইসের পারফরম্যান্স আগের মতোই রয়ে যায়। তখন তারা হতাশ হয়ে পড়েন ও রুটের কার্যকারিতা বা আসল সুবিধা কী এই প্রশ্ন তাদের মনে আবারও উঁকি দিতে শুরু করে।

রুট কি?

শব্দটি এতোই প্রচলিত হয়ে গেছে যে, রুট ইউজার বলার বদলে সবাই এটিকে সরাসরি রুট বলে থাকে। সবচেয়ে সহজ শব্দে বলা যায়, রুট হচ্ছে এ্যাডমিনিষ্ট্রেটর বা প্রশাসক। যদিও এর বাংলা অর্থ গাছের শিকড়, লিনাক্সের জগতে রুট বলতে সেই পারমিশন বা অনুমতিকে বোঝায়, যা ব্যবহারকারীকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করে তোলে।

রুট হচ্ছে একটি এ্যাডমিনিষ্ট্রেশন পারমিশন বা অনুমতি। এই অনুমতি থাকলে ব্যবহারকারী সেই ডিভাইসে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহারকারী এ্যাডমিনিষ্ট্রেটর প্রিভিলেজ ছাড়া সিস্টেম ফাইলগুলো নিয়ে কাজ করতে পারেন না। লিনাক্সেও তেমনি রুট পারমিশন প্রাপ্ত ইউজার ছাড়া সিস্টেম এ্যাডমিনিষ্ট্রেশনের কাজগুলো করা যায় না। যিনি লিনাক্স-চালিত কম্পিউটার বা সার্ভারে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন অথবা যার সব কিছু করার অনুমতি রয়েছে, তাকেই রুট ইউজার বলা হয়। অনেক সময় একে সুপারইউজার বলেও সম্বোধন করা হয়ে থাকে।

লিনাক্স এবং অ্যান্ড্রয়েড

অনেকেরই হয়তো খটকা লাগতে শুরু করেছে যে, অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে কথা বলতে এসে লিনাক্সকে টানা হচ্ছে কেন। মূলত, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটি লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছে। যারা কম্পিউটারে লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেছেন, তারা অ্যান্ড্রয়েড রুট করার পর কম্পিউটারের মতোই ফাইল সিস্টেম (রুট পার্টিশন) দেখতে পাবেন অ্যান্ড্রয়েডে, তখন বিষয়টা আরও স্পষ্ট হবে।

অ্যান্ড্রয়েডে রুট অ্যাক্সেস

লিনাক্স-ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করার পর আপনার যেই পাসওয়ার্ড থাকবে, সেটি ব্যবহার করেই আপনি রুট অ্যাক্সেস পেয়ে যাচ্ছেন। এখন নিশ্চয়ই আপনার মনে প্রশ্ন জাগছে, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসটিও তো আপনিই কিনেছেন, তাহলে আপনি কেন রুট অ্যাক্সেস পাচ্ছেন না?

ট্রিকটা এখানেই। আপনি ডিভাইসটি কিনেছেন ঠিকই, কিন্তু আপনি কিন্তু অপারেটিং সিস্টেমটি ইন্সটল করেননি, তাই না? ডিভাইস প্রস্তুতকারক ডিভাইসটি প্যাকেটজাত করার আগে তাদের কম্পিউটার থেকে লিনাক্স কার্নেলের উপর তৈরি অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করে দিয়েছে। এখানে বলা বাহুল্য, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের মূল ভিত্তিটা এক হলেও একেক কোম্পানি একেকভাবে একে সাজাতে বা কাস্টোমাইজ করতে পারেন। এই জন্যই সনির একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ইউজার ইন্টারফেসের সঙ্গে এইচটিসির একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ইন্টারফেসের মধ্যে খুব কমই মিল পাওয়া যায়।

যাই হোক, মূল বিষয়ে আসা যাক। আপনার ডিভাইস প্রস্তুতকারক কোম্পানি ইচ্ছে করেই আপনাকে রুট অ্যাক্সেস দেয়নি। এ কথা শুনে কোম্পানির উপর কিছুটা রাগ অনুভূত হলেও সত্য কথা হচ্ছে এই যে, এটি আপনার ডিভাইসের সুরক্ষার জন্যই করা হয়েছে। আসুন জেনে নিই কেন রুট অ্যাক্সেস স্বাভাবিক অবস্থায় দেয়া থাকে না।

কেন রুট করা থাকে না

ডিভাইস প্রস্তুতকারকরা ইচ্ছে করেই ডিভাইস লক করে দিয়ে থাকেন। রুট ফোল্ডার/পার্টিশনে থাকা ফাইলগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর কোনো একটি দুর্ঘটনাবশতঃ মুছে গেলে আপনার পুরো ডিভাইস কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। এছাড়াও ম্যালিশিয়াস বা ক্ষতিকারক প্রোগ্রামও অনেক সময় রুট করা ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে। কিন্তু লক থাকা অবস্থায় ব্যবহারকারী নিজেই রুট অ্যাক্সেস পান না, তাই অন্য প্রোগ্রামগুলোর রুট অ্যাক্সেস পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে।

ডিভাইস লক করা থাকার আরেকটি কারণ হচ্ছে সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন ও ফাইল। অনেকেই ইন্টারনাল মেমোরি খালি করার জন্য বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন এসডি কার্ডে ট্রান্সফার করে থাকেন। রুট করা থাকলে সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশনগুলোও ট্রান্সফার করে ফেলা যায়। কিন্তু অপারেটিং সিস্টেমের কিছু ফাইল রয়েছে যেগুলো ইন্টারনাল মেমোরির ঠিক যেখানে আছে সেখানেই থাকা আবশ্যক। ব্যবহারকারী যখন ডিভাইস রুট করেন, তখন স্বভাবতঃই অনেক কিছু জেনে তারপর রুট করেন। তখন বলে দেয়াই থাকে যে, কিছু কিছু সিস্টেম অ্যাপস এসডি কার্ডে ট্রান্সফার করলে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু যদি স্বাভাবিক অবস্থায়ই সেট রুট করা থাকে, তাহলে ব্যবহারকারী না জেনেই সেটের ক্ষতি করতে পারেন।

আশা করছি এবার বুঝতে পারছেন কেন ডিভাইস বাই ডিফল্ট রুট করা থাকে না। কিন্তু ৯০% (কিংবা তারও বেশি) ডিভাইসই রুট করা যায়। যাদের রুট করার একান্ত প্রয়োজন, তাদের রুট করার উপায় রয়েছে। কিছু কিছু কোম্পানি (যেমন সনি) নিজেদের সাইটেই ডিভাইস রুট করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজের প্রণালী দিয়ে রেখেছে। কিন্তু তবুও কোম্পানি নিজেরা রুট করা ডিভাইস বাজারে ছাড়ে না, কারণ বেশিরভাগ ক্রেতাই সাধারণ ক্রেতা হয়ে থাকেন যাদের ডিভাইস রুট করার কোনো প্রয়োজনই নেই।

কেন ডিভাইস রুট করবেন?

ডিভাইস রুট করার কারণ একেক জনের একেক রকম হয়ে থাকে। কেউ ডিভাইসের পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য বা ইন্টারনাল মেমোরি ফাঁকা করার জন্য রুট করে থাকেন, কেউ ওভারক্লকিং করার মাধ্যমে ডিভাইসের গতি বাড়ানোর জন্য রুট করেন, কেউ স্বাধীনভাবে কাজ করা ডেভেলপারদের তৈরি বিভিন্ন কাস্টম রম ব্যবহার করার জন্য, কেউ বা আবার রুট করার জন্য রুট করে থাকেন। আমি নিজেও প্রথম রুট করেছিলাম কোনো কারণ ছাড়াই। লিনাক্স ব্যবহার করি বলে বিভিন্ন সময় রুট হিসেবে অনেক কাজ করেছি কম্পিউটারে। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ফোনে রুট পারমিশন না থাকায় একটু কেমন যেন লাগছিল। তাই রুট হওয়ার জন্য রুট করেছিলাম।

পরে অবশ্য পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে শুরু করেছি যেগুলো রুট করা ডিভাইস ছাড়া কাজ করে না। তবে সেসব নিয়ে পড়ে কথা হবে। চলুন আগে এক নজর দেখে নিই রুট করার সুবিধা ও অসুবিধা।

রুট করার সুবিধা

মোবাইলের স্পিড ও পারফরমেন্স বৃদ্ধি করা যায়। মোবাইলের সিস্টেম এ্যাপসগুলোকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চাইলে যেকোন সিস্টেম এ্যাপ ডিলিট করা যায়। বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে মোবাইলের অব্যবহৃত বা টেমপোরারি ফাইল নিয়মিত মুছে ফোনের স্পিড বাড়ানো যায়। কোনো বিশেষ কাজে প্রসেসর এর গতি বাড়ানোর প্রয়োজন হলে তা বৃদ্ধি করা যায়। অপ্রয়োজনীয় এ্যাপস বন্ধ রেখে ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ানো সম্ভব হয়। বিভিন্ন ধরনের কাস্টম মডিউল ব্যবহার করে ফোনকে ইচ্ছামত ডিজাইন করা যায়। যাল ফলে ফোনের বাহ্যিক সুন্দর্য্য বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। মোবাইলে পছন্দমত কাষ্টম ফন্ট ইনস্টল করা যায় মোবাইলে যেকোন ধরনের Crack, Patch ও Hacking Scripts ব্যবহার করা যায়।

রুট করার অসুবিধা

ফোন রুট করলে ওয়ারেন্টি থাকবে না। তাই রুট করার আগে এ বিষয়েটি মাথায় ভালোভাবে গেথে নিবেন। তবে সার্ভিস সেন্টারে নেওয়ার আগে মোবাইল পুনরায় আনরুট করে নিলে মোবাইল কোম্পানি সেটি বুঝতে পারবে না। এ ক্ষেত্রেও কিছুটা ঝুকি থেকে যায়। ফোন রুট করলে মোবাইল ব্রিক করতে পারে। ব্রিক মানে হচ্ছে কাজ করার ক্ষমতা হারাতে পারে। এ ক্ষেত্রে ফ্লাশ করলে আবার ঠিক হয়ে যাবে। রুট করার পর আপনার মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট পাবেন না। কারণ OTA আপডেট করার সময় Error ম্যাসেজ শো করবে। মোবাইলে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। কারণ রুট করা ফোনের অপারেটিং সিস্টেম আনলক থাকে। সঠিকভাবে না বুঝে মোবাইল রুট করলে রুট করার সময়ই ফোন নস্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এই ছিল রুট এর কাহিনী এবার আসি আনরুট কী ?

মানে আপনার ডিভাইস টি কেনার পরে এর অপারেটিং সিস্টেমটি ফ্যাক্টরি ডিফল্ট যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া কে আনরুট বলে। আনরুট করে ফেলার পর রুট থাকা অবস্থায় যেসব সুবিধা ভোগ করতেন সেগুলো আর পাবেন না। একেক ডিভাইস রুট করার পদ্ধতি এক এক রকম। আবার এন্ড্রয়েড ভার্সন ভেদেও আলাদা হয়ে থাকে। আপনার যদি রুট করার প্রয়োজন না থাকে এবং পরিষ্কার ধারনা না থাকে তাহলে রুট-আনরুট হতে বিরত থাকুন।

এই ছিল রুট নিয়ে যত বকবকানি। রুট নিয়ে বা এর করা-না করা, উপকারিতা-অপকারিতা নিয়ে আরও অনেক কথা বলা যায়, কিন্তু এগুলোই হচ্ছে বেসিক কথা। আশা করছি এতটুকু পড়েই আপনারা বেশ স্পষ্ট একটি ধারণা পেয়েছেন ডিভাইস কেন রুট করা হয়, এর সুবিধা-অসুবিধা ইত্যাদি। এখন অনেকেই তাদের ডিভাইস রুট করতে চাইবেন। তাদের জন্য বলছি, একেক ডিভাইস রুট করার পদ্ধতি একেক রকম। স্যামসাং গ্যালাক্সি ওয়াই রুট করার পদ্ধতির সঙ্গে এইচটিসি ওয়ান এক্স রুট করার পদ্ধতির কোনো মিল নেই। এইচটিসি কেন, গ্যালাক্সি ওয়াই-এর সঙ্গে স্যামসাং-এরই অন্য কোনো সেট রুট করার পদ্ধতি এক নয়।

Related posts

WiFi কি ? কিভাবে কাজ করে, কেন ব্যবহার করা হয় এবং এর সুবিধা-অসুবিধা

News Desk

চীনের বিরুদ্ধে ৩০ হাজার প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার অভিযোগ

News Desk

শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণ প্রজন্মই হাতিয়ার : টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী

News Desk

Leave a Comment