স্যাটেলাইট শব্দটা জ্যোতির্বিজ্ঞানে প্রথম ব্যবহার করেছিলেন জোহানেস কেপলার, ১৬১০ সালে, বৃহস্পতিকে ঘিরে ঘূর্ণায়মান চাঁদগুলোকে বুঝানোর জন্য, যে চাঁদগুলো প্রথম দেখেছিলেন গ্যালিলিও গ্যালিলি, তার নিজের নির্মিত টেলিস্কোপ দিয়ে। স্যাটেলাইট শব্দটা আসছে ল্যাটিন থেকে, যেটার ইংরেজি অনুবাদ করলে দাঁড়ায় “অনুসরণ করা”। চাঁদ পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরছে, চাঁদ একটি স্যাটেলাইট। পৃথিবী সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে, সুতরাং পৃথিবীও একটি স্যাটেলাইট। সূর্য আকাশগঙ্গা গ্যালাক্সিকে ঘিরে ঘুরছে, সুতরাং সূর্যও একটি স্যাটেলাইট। এগুলা হচ্ছে প্রাকৃতিক স্যাটেলাইট। কিন্তু, “মানুষের তৈরি কোনো যন্ত্র পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরছে” এই ধরণের কিছু বুঝানোর জন্য “স্যাটেলাইট” শব্দটার ব্যবহার হয় প্রথমে থিওরিটিক্যালি, ১৯৩৬ সালে এবং পরে বৈজ্ঞানিকভাবে গৃহীত হয় ১৯৫৭ সালে, যখন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে মানবসভ্যতার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠায়। স্পুটনিক-১ এর নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। এর পরের বছরই ১৯৫৮ সালে আমেরিকা পাঠায় তাদের বানানো প্রথম স্যাটেলাইট, নাম এক্সপ্লোরার-১।
২) Satellite এর প্রয়োজনীয়তা কি?
ইতিমধ্যে আমরা বুঝে গেছি স্যাটেলাইট এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে। কিন্তু এখন একটু বিস্তারিত বলতে চাই। অনেকে প্রশ্ন করে আমি এন্টেনা ব্যবহার করে কিংবা টাওয়ার বসিয়েই তো আমার তথ্য দূরে পাঠাতে পারি। স্যাটেলাইট কেন দরকার??
ধরুন, আপনি আপনার একটা ছবি ইন্টারনেট এ আপনার আত্নীয়ের কাছে পাঠাবেন যে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। এখন এই ডাটাটি চাইলেই আমি এন্টেনা, টাওয়ার ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর প্রচেষ্টা করতে পারি। কিন্তু সেটা পন্ডশ্রম হবে। কেন? কারণ পৃথিবী কমলালেবুর মত বা প্রায় গোলাকৃতির। তাই অনেক দূর যখন ডাটাটি ভ্রমণ করবে সেক্ষেত্রে ডাটা লসের ঘটনাটি ঘটবে। শেষ মেষ তার গন্তব্যে পৌছাতে পারবেনা। তাই স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয় সেতুবন্ধন কারী হিসেবে।
যে বাংলাদেশ & অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে যোগাযোগ এর সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, ধরেন আপনি আপনার ফ্রেন্ডকে একটা বল ছূড়ে মারতে চান। সে আপনার থেকে অনেক দূরে। বলটা সে পর্যন্ত নাও যেতে পারে। তাই দুজনের মাঝে যদি অন্য একজন বন্ধু রাখেন তাহলে সহজেই কাজটা হবে। সে আপনার থেকে নিয়ে আপনার বন্ধুকে চালান করে দিবে।
৩) স্যাটেলাইট কয় ধরনের?
কাজের ভিত্তিতে তিন ধরনের স্যাটেলাইট আছে। সেগুলো হল :
LEO ( Low Earth Orbit ) – পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ১৬০-২০০০ কি.মি. উপরে অবস্থিত। সাধারণত পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইটগুলো এই কক্ষপথে থাকে। পৃথিবী পৃষ্ঠের খুব কাছে থাকায় এই কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীকে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। আন্তর্জাতিক স্পেস ষ্টেশন এই কক্ষপথে অবস্থিত। এগুলো টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট এর জন্য ব্যবহার হয়।
MEO ( Medium Earth Orbit) – পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ২০০০০ কি.মি. উপরে অবস্থিত। সাধারণত জিপিএস স্যাটেলাইট গুলো এই কক্ষপথে থাকে। এই কক্ষপথের স্যাটেলাইট গুলোর গতিবেগ মন্থর। এই স্যাটেলাইটগুলো পাঠাতে অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়। এটা নেভিগেশন, সামরিকবাহিনীদের কাজে লাগে।
GEO (Geostationary Earth Orbit) – GEO পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৩৫০০০ কি.মি. উপরে অবস্থিত। এই কক্ষপথে অ্যান্টেনা এর অবস্থান নির্দিষ্ট থাকে। সাধারণত রেডিও এবং টিভি এর ট্রান্সমিশনের কাজে ব্যাবহার করা হয়।
৪) Satellite / স্যাটেলাইট ভূ-পৃষ্ঠে পড়ে যায় না কেন? এটা কিভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে?
এ আলোচনার আগে আমি আপনাদের একটু পদার্থবিজ্ঞান এর পরমাণু অধ্যায় টা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। যেখানে আলোচনা করা হয়েছিল পরমানুর কক্ষপথে ইলেকট্রন কিভাবে ঘুরে? কেন নিউক্লিয়াস এ পতিত হয়না? নিশ্চয় মনে আছে সবার? এক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সেরকম। স্যাটেলাইট পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকে তখন পৃথিবীর কেন্দ্র বরাবর তার একটি বল কাজ করে যাকে বলে কেন্দ্রমুখী বল। আরেকটি বল কাজ করে যেটা তাকে তার কক্ষপথ থেকে ছিটকে নিয়ে যেতে চায়। একে কেন্দ্রাবিমুখী বল বলে। এখন, এই কেন্দ্রমুখী & কেন্দ্রাবিমুখী বল সমান থাকায় সেটা একটি নির্দিষ্ট বেগে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকে। ছিটকে পড়ে না বা ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়না। ধরেন, আপনি দড়িতে একটি পাথর বেধে ঘুরাচ্ছেন। এই পাথর তখনি ছিটকে পড়বে যখন এই দুই বল পরস্পর সমান হবেনা।
৫) কিভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়?
কক্ষপথে স্যাটেলাইট স্থাপন করার জন্য আলাদা মহাশূন্য যান রয়েছে। একে বলা হয় “উৎক্ষেপণ যন্ত্র (Launch Vehicle)। কক্ষপথে স্যাটেলাইট স্থাপনের ক্ষেত্রে যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি মাথা ঘামাতে হয়, তা হলো অভিকর্ষজ ত্বরণ এবং মহাশূন্য যানটির গতির সমতা রক্ষা করা। কারণ অভিকর্ষজ ত্বরণ আমাদের উৎক্ষেপণ যন্ত্রকে পৃথিবীর দিকে টানতে থাকে।
দুই ধরনের উৎক্ষেপণ যন্ত্র রয়েছে – অপচয়যোগ্য রকেট এবং মহাশূন্য শাটল। অপচয়যোগ্য রকেটগুলো স্যাটেলাইট স্থাপন শেষে ধ্বংস হয়ে যায়। অপরদিকে মহাশূন্য শাটলগুলো স্যাটেলাইট স্থাপনের কাজে বারবার ব্যবহার করা যায়। উৎক্ষেপণ যন্ত্রের গতিবেগ উচ্চতার উপর অনেকটা নির্ভর করে। কম উচ্চতার কক্ষপথে (Low Earth Orbit = LEO) এর বেগ ৭.৮ কি.মি./সেকেন্ড, বেশি উচ্চতার কক্ষপথে (Geostationary Earth Orbit =GEO) এর বেগ ৩.১ কিমি/সে ।
৬) স্যাটেলাইট এর দূরত্ব ও বেগের হিসাব।
বেগ নির্ণয় :
Fc = Centrifugal force ( কেন্দ্রমুখী বল)
Fe = Centripetal force (কেন্দ্রবিমুখী বল)
এখন,
Fc = Fe
or, mv^2/(R+h)= mg
or, g = v^2/(R+h)
or, GM/(R+h)^2 = v^2/(R+h)
or, v = sqrt (GM/R+h)
এখন, G = Gravitational constant = 6.67 * 10^-11
M = Mass of earth = 6 * 10^24 kg
R = radius of earth = 6400 km
h = height from earth surface = 35000 km
So, Velocity of satellite = 3.075 * 10^3 m/s
দুরত্ব হিসেব :
v = sqrt GM/(R+h)
or, v^2 = GM/(R+h)
or, h = GM / v^2 – R
এখন, G = Gravitational constant = 6.67 * 10^-11
M = Mass of earth = 6 * 10^24 kg
R = radius of earth = 6400 km
v = Velocity of satellite = 3.075 * 10^3 m/s
so, h = 35000 km
৭) স্যাটেলাইট তো ঘূর্ণয়মান। তাইলে সেটা কিভাবে আমাদের গ্রাউন্ডিং স্টেশন এর সিগনাল রিসিভ করে?
উ: অনেকের মনেই এই প্রশ্নটা কাজ করে যে স্যাটেলাইট তো ঘূর্ণয়মান। তাইলে সেটা কিভাবে পৃথিবী থেকে পাঠানো সিগন্যাল রিসিভ করে কিংবা পৃথিবী তার সিগনাল রিসিভ করে। ব্যাপারটা মজার। ধরুণ, আপনি বড় একটা বৃত্ত এবং আপনার বন্ধু একটা ছোট বৃত্ত আকল। কার আকা আগে শেষ হবে?? নিশ্চয়ই বলবেন আপনার বন্ধুর?! কারণ সে ছোট বৃত্ত একেছে। সময় তো কম লাগবেই। যদি প্রশ্ন করা হয় দুইজনেই একই সময়ে আকা শেষ করতে পারবেন??? এটা কি সম্ভব??? হ্যা অবশ্যই সম্ভব। এক্ষেত্রে আপনার আকার গতি বাড়িয়ে দিতে হবে। যেহেতু আপনি বড় বৃত্ত আঁকবেন। একইভাবে স্যাটেলাইট ও পৃথিবীর ঘূর্ণন তালে সমতা আনা হয়। তাই পৃথিবীও নিজ অক্ষকে একবার আবর্তন করতে ২৪ ঘন্টা সময় লাগে এবং স্যাটেলাইট এরও সেই একই সময় লাগে। তাই পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে স্যাটেলাইট কে আপাতদৃষ্টিতে স্থির মনে হয়। তাই কোন সিগন্যাল রিসিভ / ট্রান্সমিশন এ কোন সমস্যা হয়না। তবে মাঝেমধ্যে তালের সমতা হারিয়ে যেতে পারে। তখন স্যাটেলাইট নিজস্ব গ্যাসীয় উদগীরণের মাধ্যমে সেটা মানিয়ে নেয়।
৮) স্যাটেলাইট এর জন্য কিভাবে পাওয়ার সরবরাহ করা হয়?
উ: প্রত্যেক স্যাটেলাইটে ৩২০০০ সোলার সেল মাউন্টেড করা থাকে যারা ৫২০ ওয়াট পাওয়ার সরবরাহ করতে পারে এবং ব্যাক আপ হিসেবে থাকে ক্যাডমিয়াম ব্যাটারি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার সোর্স ও মাঝেমাঝে ব্যবহার করা হয়। এর পাওয়ার সিস্টেম প্রসেসকে পৃথিবী থেকে সবসময় মনিটর করা হয়। স্যাটেলাইটে একটি অনবোর্ড কম্পিউটার থাকে যা একে নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন সিস্টেমকে মনিটর করে।
৯) স্যাটেলাইট কি কি ডিভাইস নিয়ে গঠিত?
উ: স্যাটেলাইট এর মূল চালিকাশক্তি হল স্যাটেলাইট Transponder যা নিম্নোক্ত ডিভাইস নিয়ে গঠিত :
১) Band Pass Filter
২) Low Noise Amplifier
৩) Frequency Translator
৪) Microwave shift oscillator
৫) Radio Frequency Mixer
৬) Power Amplifier
৭) High Resoluted Camera
৮) Processor with high clock speed
৯) High power Transmitting antenna
১০) High power receiving Antenna
১০) আপলিঙ্ক & ডাউনলিঙ্ক কি?
উ: গ্রাউন্ড স্টেশন এন্টেনা থেকে যে ডাটা লিংক / চ্যানেল এর মাধ্যমে ডাটা স্যাটেলাইট এর রিসিভিং এন্টেনায় পৌছায় তাকে আপলিঙ্ক বলে।
আর স্যাটেলাইট / Satellite এর ট্রান্সমিটিং এন্টেনা থেকে যে চ্যানেল / ডাটা লিঙ্ক এর মাধ্যমে ডাটা গ্রাউন্ড স্টেশন এর এন্টেনায় পৌছায় তাকে ডাউনলিঙ্ক বলে।
জিনিসটা একে অন্যের উলটো। অনেকের হয়তো হিজিবিজি লাগতে পারে। তাদের জন্য একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, আপনি আপনার ফ্রেন্ডের দিকে একটা বল ছুড়ে মারবেন। এখন কাজটা সহজ করার জন্য দুজনের মাঝে অন্য একজন ফ্রেন্ড রাখলেন যে আপনার থেকে বলটা ক্যাচ ধরে আপনার বন্ধুকে দিবে। এখন আপনি মাঝের বন্ধুর দিকে বল ছুড়ে দিলেন। আপনাদের লিঙ্ক টা আপলিঙ্ক। এবার মাঝের বন্ধু অপাশের বন্ধুকে বল টা ছুড়ে মারবে। তাদের লিঙ্ক টা ডাউনলিঙ্ক। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
১১) স্যাটেলাইট এর বিকল্প প্রযুক্তি কি? কোনটায় সুবিধা বেশি?
স্যাটেলাইট এর বিকল্প প্রযুক্তি হল সাবমেরিন ক্যাবল। সাগরের নিচে পাতানো এই অপটিক্যাল ফাইবার চোখের পলক পড়ার আগেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে ডাটা পৌছে দেয়। সময় পেলে অন্য আরেকদিন এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সুবিধার কথা চিন্তা করলে সাবমেরিন ক্যাবল উত্তম।
কারণ—–
১) ব্যান্ডউইথ অনেক বেশি
২) Guided medium হওয়াতে ডাটা লস কম
৩) Electromagnetic interference নেই
৪) ডাটা পৌছে আলোর দ্রুতিতে যেহেতু ফাইবার based & লেজার / এল ই ডি ব্যবহার করে ডাটা পাঠানো হয়।
এবার অনেকে প্রশ্ন করতে পারে, তাইলে আর স্যাটেলাইট কেন?
কারণ, চাইলেই যখন তখন সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন বসানো সম্ভব নয়। প্রত্যেক দেশকেই আন্তর্জাতিক টেলিফোন সংস্থা থেকে একটি লিমিটেড ব্যান্ডউইথ বেধে দেয়া হয়। তাই সাবমেরিন ক্যাবল এর পাশাপাশি এই স্যাটেলাইট কে ব্যাক আপ হিসেবে রাখা হয়।
১২) Satellite Footprint কি?
উ: “Footprint” শব্দের আভিধানিক অর্থ হল পদচিহ্ন। ধরুন, এক পশলা বৃষ্টি হবার পর কেউ যদি কাদার মধ্যে পা রাখে তাইলে সেখানে নিশ্চয় একটা ছাপ পড়বে এবং সেই ছাপ নিশ্চয় ভূমির কিছু অংশ জুড়ে থাকবে??!!! একইভাবে একটা স্যাটেলাইটেরও একটি নির্দিষ্ট কাভারেজ এরিয়া থাকে যে অংশে তার সিগন্যাল strength অনেক বেশি। Footprint area থেকে যতই দূরে সরে যাওয়া হবে সিগনাল strength ততই দুর্বল হতে থাকবে। পৃথিবীর সব অংশে satellite footprint সমান নয়। এখন, অনেকে ভাবতে পারে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরলে ত সব অংশেই কাভারেজ সেইম হওয়ার কথা। বাস্তবে কিন্তু তা নয়। ধরুন, আপনি যদি একটা মোমবাতি বা টর্চ নিয়ে একটি গ্লোবের চারদিকে ঘুরেন তাইলে খেয়াল করবেন সব continent কিন্তু সমানভাবে আলো পাবেনা। এখানেও ব্যাপারটাও তেমনি।
১৩) Satellite এর Bandwidth কত? আর এই ব্যান্ডউইথ টাই কি জিনিস?
উ: Satellite Bandwidth ( 15 – 3500) MHz পর্যন্ত হতে পারে। আমাদের স্যাটেলাইট এর ব্যান্ডউইথ 1600 MHz. এখন প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক যে, ব্যান্ডউইথ জিনিসটা কি?
ব্যান্ডউইথ শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত। এটার টেকনিক্যাল ব্যাখা জানব আজকে। ধরুন, একটি পথ সরু, আরেকটি পথ বেশ প্রশস্ত। সরু পথে ২ টি গাড়ি একসাথে চলতে পারে। আর প্রশস্ত পথে একসাথে ৫ টি গাড়ি চলতে পারে। তেমনিভাবে ব্যান্ডউইথকেও আপনি পথের সাথে, আর আপনার প্রেরিত / গ্রহণ করা ডাটাকে গাড়ির সাথে তুলনা করতে পারেন। অর্থাৎ ব্যান্ডউইথ যত বেশি হবে আমার ডাটা ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি তত বেশি এবং smooth হবে।
অর্থাৎ, এক কথায় আমার ডাটা ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি হল ব্যান্ডউইথ। অনেকে একে ডাটা স্পীড ওবলে থাকে।
১৪) কিভাবে এই ব্যান্ডউইথ কেনাবেচা হয়?
উ: ব্যান্ডউইথ এর concept আশা করি ক্লিয়ার হয়েছে। এবার জানব কিভাবে এই ব্যান্ডউইথ কেনা বেচা হয়?
আমাদের স্যাটেলাইট এর কথাই বলি। আমাদের স্যাটেলাইট এর ব্যান্ডউইথ 1600 MHz. আর এটা 40 টি Transponder ধারণ করে। প্রতিটি ট্রান্সপন্ডার এর ব্যান্ডউইথ যদি সমান হয় তাইলে Bandwidth per transponder = 1600/40 = 40 MHz.
শুনা যাচ্ছে, আমরা ২০ টি ভাড়া দিচ্ছি। তাইলে আমরা bandwidth sell করছি = 40 x 20 = 800 MHz
এখন এটা ত কোন দৃশ্যমান বস্তুনা যে হাতে হাতে বিক্রি করবে। ব্যাপারটা আসলে commercial. Technical তেমন কিছু নেই। যেসব দেশের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আছে তাদের দেশের সরকার আমাদের দেশের সরকারের সাথে বাণিজ্যিক চুক্তি করতে হবে। প্রতি চ্যানেল ওয়ারি একটা রেইট বেধে দেয়া হয়। তারপর চুক্তিশেষে ঐসব দেশ আপলিঙ্ক – ডাউনলিঙ্ক এর লাইসেন্স পেতে হয়। তারপর তারা নিজস্ব গ্রাউন্ডিং স্টেশন তৈরি করে আমাদের ট্রান্সপন্ডারগুলো দখলে নিয়ে আসে। আমরা প্রতি বছর ২০ টি ট্রান্সপন্ডার থেকে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করব ইনশাল্লাহ।
১৫) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ। এটি ১১ মে ২০১৮ কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।[৩] এর মধ্য দিয়ে ৫৭ তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় যোগ হয় বাংলাদেশ। এই প্রকল্পটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত হয় এবং এটি ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫ রকেটের প্রথম পেলোড উৎক্ষেপণ ছিল।
বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখ ঠিক করা হয়, তবে হারিকেন ইরমার কারণে ফ্লোরিডায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলে তা পিছিয়ে যায়। ২০১৮ সালেও কয়েক দফা উৎক্ষেপণের তারিখ পিছিয়ে যায় আবহাওয়ার কারণে।
চূড়ান্ত পর্যায়ে উৎক্ষেপণ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ৪ মে ২০১৮ তারিখে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে দুই পর্যায়ের এই রকেটের স্ট্যাটিক ফায়ার টেস্ট সম্পন্ন হয়। কৃত্রিম উপগ্রহটি ১০ মে ২০১৮ তারিখে উৎক্ষেপণের তারিখ ঠিক করা হয়; কিন্তু ১০ মে উৎক্ষেপণের সময় t-৫৮ সেকেন্ডে এসে তা বাতিল করা হয়। শেষ মিনিটে কিছু কারিগরি সমস্যার কারণে উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়। অবশেষে এটি ১১ মে উৎক্ষেপণ করা হয়।
কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করার পর, বাংলাদেশ ১২ মে ২০১৮ তারিখে এটি থেকে পরীক্ষামূলক সংকেত পেতে শুরু করে।
বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের ভূ-কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এই জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় ভূকেন্দ্র তৈরি করা হয়।[৮] জয়দেবপুরের ভূ-কেন্দ্রটি হল মূল স্টেশন। আর বেতবুনিয়ায় স্টেশনটি দ্বিতীয় মাধ্যম ব্যকআপ হিসেবে রাখা হয়। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে দুটি ভূ-উপগ্রহ উপকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ সেবা পরিচালনার জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একনেক সভায় দুই হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় এক হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশ। এ ছাড়া ‘বিডার্স ফাইন্যান্সিং’ এর মাধ্যমে এ প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে হংক সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) সাথে সরকারের প্রায় একহাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি হয়। এক দশমিক ৫১ শতাংশ হার সুদসহ ১২ বছরে ২০ কিস্তিতে এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ার সংস্থা ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে অরবিটাল স্লট অনুমোদন দেওয়া হয়। এর অর্থমূল্য ২১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি ১১৯.১° ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমার ভূস্থির স্লটে স্থাপিত । এটিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ফ্রান্সের থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস কর্তৃক নকশা ও তৈরি করা হয়েছে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিমালিকানাধীন মহাকাশযান সংস্থা স্পেস এক্স থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ১৬০০ মেগাহার্টজ ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ৪০টি কে-ইউ এবং সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার বহন করবে এবং এটির আয়ু ১৫ বছর হওয়ার কথা ধরা হয়েছে।[৬] স্যাটেলাইটের বাইরের অংশে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও সেখানে রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের ভূ-কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এই জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় ভূকেন্দ্র তৈরি করা হয়।[৮] জয়দেবপুরের ভূ-কেন্দ্রটি হল মূল স্টেশন। আর বেতবুনিয়ায় স্টেশনটি দ্বিতীয় মাধ্যম ব্যকআপ হিসেবে রাখা হয়। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে দুটি ভূ-উপগ্রহ উপকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
১৬) একটা স্যাটেলাইট গ্রাউন্ডিং স্টেশন তৈরি করতে কি কি লাগবে?
উ: সাধারণ পৃথিবীপৃষ্ঠে অবস্থিত যে স্টেশন থেকে স্যাটেলাইট কে নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাকে গ্রাউন্ডিং স্টেশন বলে। গ্রাউন্ডিং স্টেশন তৈরি করতে যা যা লাগবে :
১) Earth based channel source
২) Transmit chain
৩) Receive chain
৪) Parabolic Antenna ( Transmitting & receiving)
৫) Antenna control module
৬) power generator for antenna
সূত্র: ভোলতেগেলাব, কিপেডিয়া