Image default
জানা অজানা

পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার ১০টি সহজ উপায়

কিভাবে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা যায়? একজন শিক্ষার্থীর মাথায়, এ জাতীয় প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। আর এই স্বাভাবিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া অনেক সময় অস্বাভাবিক হয়ে যায়। পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার জন্য জাদুর কাঠির দরকার নেই। প্রয়োজন কিছু কৌশল অবলম্বন করা।

পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার কৌশল

প্রতি সেমিস্টারের শুরুতেই আমরা ঠিক করি যে, এবার আগের চেয়ে ভালো রেজাল্ট করতে হবে। নিজের সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু, কীভাবে করব সেটা ভাবতে গেলে আমরা অনেকেই তালগোল পাকিয়ে ফেলি। অনেকে হতাশ হয়ে উদ্যোগ নেয়াই ছেড়ে দেই। আজকের এই লেখাটা তাদের জন্য, যারা তাদের রেজাল্ট আগের চেয়ে ভাল করার উপায় খুঁজছে।

কোন শিক্ষার্থী পরিশ্রম না করে ভাল রেজাল্ট করতে পারে না। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা পড়ার টেবিল থেকে ঘুম, খাওয়া বা প্রয়োজন ছাড়া উঠে না। কিন্তু কেমন হয় যদি কম পরিশ্রম করে, আনন্দের সাথে ভাল ফলাফল করা যায়। হ্যাঁ, এটা সম্ভব। তবে, এ জন্য অনুসরণ করতে হবে কিছু সহজ কৌশল।

এই কৌশলগুলো খুব কঠিন কিছু নয়। আপনাকে শুধু প্রতিটি কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। এসব কাজগুলো নিয়মিত করার দ্বারা একসময় অভ্যাসে পরিণত হবে। এই অভ্যাস আপনাকে শুধু ভাল রেজাল্ট নয় ক্যারিয়ার গঠনেও সাহায্যে করবে। যারা বিসিএসকে ক্যারিয়ার হিসাবে নিয়েছেন তারা, বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হয় লেখাটি পড়তে পারেন।

পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট

১. পড়ালেখার একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন

পরিকল্পনা ব্যতীত কোন কাজ করা সম্ভব নয়। তাই, আপনি কিভাবে পড়ালেখা করবেন তার পরিকল্পনা করে নিন। প্রতি সপ্তাহের কিংবা মাসের জন্য একটি রুটিন করে নিন। রুটিন কিছু কাজের সময় নির্দিষ্ট করে নিন যেমন:

স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়।
ধর্মীয় কাজ।
পরিবারকে দেয়া সময়।
খেলাধুলা।
রুটিনে উপরে উল্লেখিত কাজের সময় পড়ালেখা বাদ রাখুন। বাকি সময়ে আপনার পড়ালেখার একটি নিয়ম ঠিক করে নিন। সপ্তাহের শেষের দিনটি, পূর্বের পড়া রিভাইসের জন্য নির্দিষ্ট করে নিন। আর বন্ধের দিনটি বন্ধের মত করেই কাটাবেন।

যেকোনো সময় পড়া শুরু করার পূর্বে নিচের কাজগুলো করে নিবেন। যেমন:
পড়ার পরিবেশ তৈরি করে নেয়া।
মোবাইল ফোন নিজের থেকে দূরে রাখা। প্রয়োজনে অন্য ঘরে বা বন্ধ করে রাখা।
পড়া শেষ করার আগে কেউ যেন বিরক্ত না করে, তা নিশ্চিত করা।
প্রয়োজনীয় সমস্ত নোট এবং রেফারেন্স বই একত্রিত রাখুন।
পানির পাত্র ও গ্লাস সাথে রাখুন। পানি মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
সময় নির্দিষ্ট করে নিন।

২। পড়ার একটি প্ল্যান তৈরি করা

সারাবছর আজ পড়ব, কাল পড়ব ভেবে সব পরীক্ষার আগের রাতের জন্য জমিয়ে রাখার দুর্দশার অভিজ্ঞতা কম-বেশি সবারই আছে। এমন ঝামেলার মুখোমুখি আমাদের হতে হয় পড়ার সঠিক কোন প্ল্যান না থাকার ফলে। তাই, সেমিস্টারের শুরুতেই পড়ার একটা প্ল্যান তৈরি করে ফেলতে হবে। এই প্ল্যান যে শুধু আমাদের আরো গোছালো করে তুলবে তাই না, বরং সময়কেও পুরোপুরি কাজে লাগাতে সাহায্য করবে।

সবসময় এই প্ল্যান যে শতভাগ কাজ করবে, তা কিন্তু নয়। কখনো হয়তো একটু এদিক সেদিক হবে। কিন্তু তারপরও সময়কে কাজে লাগিয়ে দিনের পড়া দিনে পড়ে ফেলতে পরিকল্পনার কোন জুড়ি নেই।

পড়ার একটি প্ল্যান তৈরি করা

৩. প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন

নিজের মস্তিষ্ক এবং দেহকে ভাল রাখতে হলে ঘুমের কোন বিকল্প নেই। ভাল ঘুম আপনার মস্তিষ্ক ভাল রাখবে, ফলে পড়া দ্রুত মুখস্থ করতে পারবেন। ৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করার জন্য রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়া এবং ভোরে ঘুম থেকে উঠা।

রাতে ঘুমানোর পূর্বে কখনোই স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ব্যবহার করা যাবে না। এসব ডিভাইসের আলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। ঘুমানোর পূর্বে ভাল মত তিনবার নিশ্বাস নিয়ে নিতে হবে। এর ফলে শরীরে অক্সিজেন সরবারহ বৃদ্ধি পাবে।

৫. পড়ার মাঝে ছোট ছোট বিরতি নেয়া

এমন অনেক বিষয় আছে, যা আমাদের পড়তে খুব একটা ভালো লাগে না। কিন্তু, তারপরও জানতে হবে বলেই পড়া। আবার এমন অনেক বিষয় আছে, যা আমাদের এতো ভালো লাগে যে একবার পড়তে বসলে সময়ের কথা খেয়ালই থাকে না। এই দু’টি ক্ষেত্রেই কিন্তু পড়ার মাঝে ছোট করে ব্রেক নেয়া উচিত।

কেননা, আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, অনেকক্ষণ ধরে পড়ার ফলে আমাদের মাঝে এক ধরণের ক্লান্তি চলে আসে। আমাদের ব্রেইনেরও তখন একটু বিশ্রামের প্রয়োজন হয় । তখন ৫-১০ মিনিটের ছোট একটা ব্রেক নিয়ে কারো সাথে কথা বলা, বা একটা গান শোনা আমাদেরকে আবার চাঙ্গা হতে সাহায্য করে। কিন্তু, এই ব্রেক নেয়ার সময় আমাদের মাথায় রাখতে হবে এই ব্রেক যেন ১০ মিনিটের জায়গায় কয়েক ঘন্টায় না রূপ নেয়।

৬. পড়ার পরিবেশ তৈরি করুন

পড়ার সময় পরিবেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। উপরে ইতোমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে পড়তে বসলে অবশ্যই পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে। এখন এই পরিবেশ কিভাবে ঠিক রাখবেন। তাহলে জেনে নিন-

প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন খাতা, কলম, পানি ইত্যাদি, আপনার নাগালের মধ্যে আছে কিনা দেখুন?
ঘরে কি পর্যাপ্ত আলো আছে?
আপনার টেবিলটি পরিপাটি এবং গোছালো আছে কিনা?
ঘরের তাপমাত্রায় কি ঠিক আছে?
আপনার বসার চেয়ার কি আরামদায়ক?
ঘর কি শান্ত?
আপনার ফোন, টিভি কি বন্ধ আছে?
আপনার ফোনে এমন কোনও অ্যাপ বা গেম আছে যা মোবাইল ব্যবহারে আগ্রহ জন্মায়?

৭. গল্পে গল্পে পড়া

পড়াশোনা বিষয়টা আমাদের অনেকের কাছেই খুব বোরিং মনে হয়। চাইলেও একে আমরা উপভোগ করতে পারি না। কিন্তু, গল্প পড়তে বা শুনতে কিন্তু সবাইই পছন্দ করে। তাই, এই বোরিং সময়গুলোতে পড়াশোনাটা যদি আমরা গল্পের মতো বানিয়ে ফেলি, তাহলে কিন্তু একঘেয়েমি কাটানোটা খুব কষ্টকর থাকে না।

প্রথমত, আমাদের টেনে পড়তে হবে। ঠিক যেমন গল্পের বই পড়ি তেমন। এবং পড়ার সময় কতটুকু মুখস্থ হচ্ছে তা নিয়েও ভাবা যাবে না। ধরে নিতে হবে যে, আমরা গল্প পড়ছি।

দ্বিতীয়ত, চ্যাপ্টারের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে গল্পের কোন একটি চরিত্র বানিয়ে ফেলতে হবে। চ্যাপ্টারটা যত হাস্যকর আর আজগুবি শোনাবে, পড়া মনে রাখতে ততটাই সহজ হবে।

৮. নিজেকে যাচাই করুন

পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার জন্য প্রতি সপ্তাহে কিংবা মাসে নিজেকে যাচাই করুন। আপনি যা যা শিখলেন তার উপর পরীক্ষা দিন। এর ফলে আপনার আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে এবং পূর্বের পড়াগুলো মনে থাকবে। পরীক্ষা দেয়া কালীন সময় নির্দিষ্ট করে নিন, এটা আপনাকে পরীক্ষা ভীতি দূর করবে।

৯. শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করুন

কোন পড়া না বুঝলে শিক্ষকের সাথে ক্লাসে বা আলাদা আলাপ করুন। পড়া বোঝার পাশাপাশি এটা আপনাকে আত্মবিশ্বাস যোগাবে। আপনার দুর্বলতাগুলো শিক্ষকের নিকট বলুন। শিক্ষক তখন আপনাকে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠাতে সাহায্যে করবে।

শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করুন

১০. ইতিবাচক মনোভাব রাখা

“মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়” – এই কথাটা শুধু আমাদেরকে নিজেদের নিয়ে স্বপ্ন দেখার উপরই জোর দেয় না। বরং, ইতিবাচক মানসিকতার শক্তি নিয়েও কথা বলে। আমরা জীবনে কী করছি এবং কী পাচ্ছি, তার অনেকটাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীর উপর নির্ভর করে। তাই, শুরুতেই আমাদের ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে হবে। সবকাজেই যে সবসময় সফল হতে হবে, এমন কোন কথা নেই। কিন্তু, ব্যর্থতাগুলো মেনে নিয়ে, আমাদের প্রাপ্তিগুলোর দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। নিজের শক্তিগুলো জানতে হবে এবং সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে, বরং সেগুলো কীভাবে দূর করা যায় সেদিকে মনোযোগী হতে হবে। মানসিকভাবে সুখী হলেই কেবল আমরা পড়াশোনায় পরিপূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারবো।

Related posts

প্যালিনড্রমিক সংখ্যা (PALINDROMIC NUMBER) কি?

News Desk

সমাজে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার

News Desk

হুয়াকাচিনা : মরুভূমির বুকে এক টুকরো স্বর্গ

News Desk

Leave a Comment