হুমায়ুন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র। তিনি তার লিখার জাদুতে মুগ্ধ করেছেন কোটি কোটি পাঠককে। সে মুগ্ধতা দেশের গন্ডি থেকে বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে নানা দেশে। তিনি কেবল লেখকই ছিলেন না, একাধারে নাট্যকার, গীতিকার, চিত্র পরিচালক, নাট্য পরিচালক হিসেবেও ছিলেন বিখ্যাত। হুমায়ুন আহমেদ ছাত্র হিসেবে বরাবরই ছিলেন ভীষণ মেধাবী। ১৯৬৫ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তিনি সারা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। তার নাম সেময়েই রেডিওতে ঘোষনা করা হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স শেষ করে তিনি যখন আমেরিকায় পিএইচডি করতে যান, তখন রসায়ন বিভাগের প্রধান লিখেছিলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যে কজন মেধাবী তৈরি করতে পেরেছে হুমায়ুন তাদের মধ্যে অন্যতম। তবে মজার ব্যাপার কী জানেন? তীক্ষ্ণ মেধার এই মানুষটি একবার পরীক্ষায় খাতায় শুন্য পেয়েছিলেন। আজকে আমরা হুমায়ুন আহমেদের সেই শুন্য পাওয়ার গল্পই শুনবো।
হুমায়ুন আহমেদ তখন পিএইডি করতে গেছেন আমেরিকায়। ভর্তি হয়েছেন নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে। শুরুতে সবাই ৩০০ ও ৪০০ নম্বর কোর্স নিলেও, হুমায়ুন সেগুলো টপকে শুরু করলেন ৫০০ নম্বর কোর্স দিয়ে। কোর্স কো-অর্ডিনেটর হুমায়ুনকে সতর্ক করলেন। বললেন, আগের কোর্সগুলো না করলে তুমি এই কোর্সের কিছুই বুঝবে না।
কিন্তু সেসব তিনি কানেই তুললেন না। ক্লাস শুরুর দিন দেখলেন সেখানে শিক্ষার্থী ১৫ জন। যাদের মধ্যে একজন অন্ধও আছে। তিনি খুবই অবাক হলেন। একজন অন্ধ ব্যক্তি কিভাবে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মতো কঠিন বিষয় পড়তে পারে, তা তিনি বুঝতে পারছিলেন না। যাই হোক, কিছুক্ষণ পর ক্লাস শুরু হলো। ক্লাস নিতে আসলেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বাঘা অধ্যাপক মার্ক গর্ডন। ক্লাস শুরু করার পর হুমায়ুন আহমেদ বুঝতে পারলেন তিনি বিশাল ভুল করে ফেলেছেম।
কোর্স কোর্ডিনেটরের কথাই ঠিক। আগের কোর্সগুলো না করার ফলে তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না। মার্ক গর্ডনের কোনও কথাই তার মাথায় ঢুকছে না। তিনি চোখে অন্ধকার দেখলেন। দিনের পর দিন চলে যেতে লাগলো তিনি কিছুই বুঝতে পারলেন না। একটার পর একটা বই কিনে আনেন, সারাদিন রাত পড়েন। তবুও প্রফেসরের কথা তার মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। কারন, কোয়ান্টাম মেকানিক্স বোঝার জন্য যা দরকার, সেই গণিতের কিছুই তিনি জানেন না।
দেখতে দেখতে চলে এলো মিড টার্ম পরীক্ষা। পরীক্ষার খাতায় তিনি কিছুই লিখতে পারলেন না, সম্পুর্ন সাদা খাতা জমা দিয়ে আসলেন তিনি। পরের দিন রেজাল্ট বের হলে দেখা গেলো সবচেয়ে বেশি নাম্বার পেয়েছে অন্ধ ছেলেটি আর হুমায়ুন আহমেদ পেয়েছেন শুন্য।
মার্ক গর্ডন তাকে তার রুমে ডেকে পাঠালেন। জিজ্ঞেস করলেন কি ব্যাপার। হুমায়ুন আহমেদ বললেন, তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কিছুই বুঝতে পারছেন না। গর্ডন তাকে কোর্সটি ছেড়ে দিতে বললেন। কিন্তু হুমায়ুন রাজি হলেন না। হুমায়ুনের জিদ দেখে গর্ডন যখন জিজ্ঞেস করলেন, কেনও তুমি কোর্স ছেড়ে দিতে চাচ্ছো না।
হুমায়ুন উত্তর দিলেন, একটা অন্ধ ছেলে যদি কোর্সে সর্বোচ্চ নাম্বার পেতে পারে তাহলে আমিও পারবো। এরপরেও গর্ডন হুমায়ুনকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন,কিন্তু লাভ হলো না। হুমায়ুন গর্ডনের রুম থেকে বেরিয়ে এলেন। নিজে নিজে অংক শিখতে শুরু করলেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বাকি বিষয়ও আয়াত্ত্বে এনে ফেললেন। শেষ পর্যন্ত মার্ক গর্ডনের ক্লাসগুলো তার মাথার ভিতরে ঢুকতে শুরু করলো।
তারপর যখন ফাইনাল পরীক্ষার সময় আসলো ততদিনে তাকে আটকানোর উপায় আর নেই। তিনি পরীক্ষায় বসলেন। রেজাল্টের দিন প্রফেসর মার্ক গর্ডন হুমায়ুনকে একটি চিঠি দিলেন। সেখানে লিখা ছিলো, তুমি যদি আমার সাথে কাজ করো তাহলে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হবো। কিন্তু গর্ডন কেনও এমন কথা বলেছিলেন? কারন,সে পরীক্ষায় হুমায়ুন আহমেদ ১০০ তে ১০০ পেয়েছিলেন।
এভাবেই হুমায়ুন যেখানেই গেছেন নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন।তার মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের এক অপুরণীয় ক্ষতি। আজকে তার প্র্য়ান দিবসে বাংলা ডায়েরি টিম তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করছে।